শুক্রবার   ২৯ নভেম্বর ২০২৪   অগ্রাহায়ণ ১৪ ১৪৩১   ২৭ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

গর্বাচেভের মৃত্যুতে যা বললেন বিশ্ব নেতারা

প্রকাশিত : ০৬:৫০ পিএম, ৩১ আগস্ট ২০২২ বুধবার

গর্বাচেভের-মৃত্যুতে যা-বললেন-বিশ্ব-নেতারা

গর্বাচেভের-মৃত্যুতে যা-বললেন-বিশ্ব-নেতারা

শেষ সোভিয়েত নেতা মিখাইল গর্বাচেভ মঙ্গলবার ৯১ বছর বয়সে মারা গেছেন। রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন এবং মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনসহ বিশ্ব নেতারা গর্বাচেভের মৃত্যুতে শোক ও শ্রদ্ধা জানিয়েছেন।

রুশ বার্তা সংস্থা ইন্টারফ্যাক্সে পাঠানো এক সরকারি বিবৃতিতে বলা হয়েছে, প্রেসিডেন্ট পুতিন মিখাইল গর্বাচেভের মৃত্যুতে গভীর সমবেদনা প্রকাশ করেছেন।

ক্রেমলিনের মুখপাত্র দিমিত্রি পেসকভ রাশিয়ার সংবাদ সংস্থাকে জানান, গর্বাচেভের পরিবার ও বন্ধুদের জন্য বার্তা পাঠাবেন পুতিন।

এদিকে এক বিবৃতিতে গর্বাচেভকে ‘অসাধারণ দূরদর্শীর একজন মানুষ’ এবং ‘একজন বিরল নেতা’ বলে অভিহিত করে হোয়াইট হাউসে প্রাক্তন এ সোভিয়েত প্রেসিডেন্টের সাথে ২০০৯ সালের বৈঠকের কথা স্মরণ করেন বাইডেন।

গর্বাচেভের গণতান্ত্রিক সংস্কারের কথা উল্লেখ করে বাইডেন বলেছেন, বিশ্বকে নিরাপদ করতে মিখাইল গর্বাচেভ যা করেছেন, তা ছিল বিরল একজন নেতার কাজ। ভিন্ন ভবিষ্যৎ এবং তা অর্জনের জন্য নিজের পুরো কর্মজীবনকে ঝুঁকিতে ফেলার সাহস ছিল তার।

আরো পড়ুন>> অ্যাম্বুলেন্স না পেয়ে অন্তঃসত্ত্বা স্ত্রীকে ঠেলা গাড়িতে করে হাসপাতালে নিলেন স্বামী

জার্মান চ্যান্সেলর ওলাফ শোলৎজ মিখাইল গর্বাচেভকে একজন ‘সাহসী সংস্কারক’ বলে প্রশংসা করেছেন।

ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী বরিস জনসন মিখাইল গর্বাচেভের প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে বলেছেন, সাবেক সোভিয়েত নেতা এমন একজন ব্যক্তি, যিনি বিশ্বকে আরো ভালোর জন্য বদলে দিয়েছেন।

মিখাইল গর্বাচেভকে বিশ্বস্ত ও সম্মানিত নেতা হিসেবে অ্যাখ্যায়িত করেছেন ইউরোপীয় ইউনিয়নের (ইইউ) প্রেসিডেন্ট। তিনি বলেছেন, সাবেক এই নেতা মুক্ত ইউরোপের দরজা খুলে দিয়েছিলেন। তার অবদান আমরা ভুলব না।

রাশিয়ার দক্ষিণাঞ্চলের দারিদ্র্যপীড়িত স্তাভরোপোল অঞ্চলে ১৯৩১ সালের ২ মার্চ মিখাইল গর্বাচেভের জন্ম, যিনি একসময় বিশ শতকের পৃথিবীর অন্যতম প্রভাবশালী রাজনীতিবিদে পরিণত হন।

বাবা-মা দু’জনেই কাজ করতেন খামারে, কিশোর বয়সে গর্বাচেভ নিজেও ফসলের জমিতে কম্বাইন হার্ভেস্টার চালিয়েছেন। মস্কো স্টেট ইউনিভার্সিটিতে পড়ার সময় কমিউনিস্ট পার্টিতে সক্রিয় হন গর্বাচেভ, সেই সময়ই পরিচয় হয় রাইসার সাথে, পরে পরিণয়।

আরো পড়ুন>> এক গ্রামে ১০০০ ইউটিউবার, চ্যানেল ২৪টি!

বিশ্ববিদ্যালয়ের লেখাপড়া শেষ করে স্তাভরোপোলে ফিরে যান গর্বাচেভ, কমিউনিস্ট পার্টিতে তার দ্রুত উত্থান হতে থাকে।

১৯৮৫ সালে সোভিয়েত নেতা কনস্তানতিন চের্নেনকোর মৃত্যুর পর গর্বাচেভ পার্টির সাধারণ সম্পাদক হন, তখন তার বয়স ৫৪ বছর। তিনিই সবচেয়ে কম বয়সে সোভিয়েত ইউনিয়নের নেতৃত্বে এসেছিলেন।

যুক্তরাষ্ট্রের সাথে পাল্লা দিতে গিয়ে সোভিয়েত ইউনিয়নের অর্থনীতির তখন করুণ দশা। নতুন নেতা গর্বাচেভ হাতে নিলেন দুই কর্মসূচি। তিনি বলেন, সোভিয়েত রাষ্ট্রের এখন দরকার পেরেস্ত্রোইকা-অর্থাৎ পুরো কাঠামো ঢেলে সাজানো প্রয়োজন। আর এ কাজে মূল হাতিয়ার হবে গ্লাসনস্ত- অর্থাৎ উদারীকরণ।

সোভিয়েত সমাজের মরচে দূর করতে পার্টিতে গণতান্ত্রিক চর্চাতেও পরিবর্তন আনেন গর্বাচেভ। ওই সময়ই প্রথমবারের মত কংগ্রেস অব পিপলস ডেপুটিসের অবাধ নির্বাচন হয়।

যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে সামরিক প্রতিযোগিতায় প্রতি বছর বিলিয়ন বিলিয়ন ডলার খরচ বাড়ছিল সোভিয়েত ইউনিয়নের। সেই স্নায়ুযুদ্ধেরও অবাসন চাইলেন গর্বাচেভ।

আরো পড়ুন>> সামাজিক মাধ্যমে পোস্ট, সৌদি নারীর ৪৫ বছরের কারাদণ্ড

১৯৮৫ সালে যুক্তরাষ্ট্রের তৎকালীন প্রেসিডেন্ট রোনাল্ড রেগানের সঙ্গে সাক্ষাৎ করে তিনি পরমাণু অস্ত্রের উৎপাদন সীমিত করার আলোচনা শুরু করেন। সেই সঙ্গে দুই পরাশক্তির মধ্যে কূটনৈতিক সম্পর্ককে স্থিতিশীলতা দেওয়ার চেষ্টা করেন।

গর্বাচেভের সময়ই আফগানিস্তানে দীর্ঘ রক্তক্ষয়ী যুদ্ধ থেকে বেরিয়ে আসে সোভিয়েত ইউনিয়ন।

বিশ্বজুড়ে স্বল্প ও মাঝারি পাল্লার ক্ষেপণাস্ত্র সীমিত করতে এক চুক্তি স্বাক্ষরের জন্য ১৯৮৭ সালে ওয়াশিংটন ডিসি সফর করেন গর্বাচেভ। ওই চুক্তির আওতায় ১৯৯১ সালের মে মাসের মধ্যে আড়াই হাজার ক্ষেপণাস্ত্র কমিয়ে আনে যুক্তরাষ্ট্র ও সোভিয়েত ইউনিয়ন।

গর্বাচেভের সংস্কার কর্মসূচি পশ্চিমা নেতাদের ভূয়সী প্রশংসা পায়, কিন্তু একই সময়ে তার চোখের সামনে সোভিয়েত ইউনিয়নের ভাঙন শুরু হয়। ১৯৯১ সালের বড়দিনের আগে আগে অনিবার্য সেই পরিণতি মেনে নেন ভ্লাদিমির গর্বাচেভ। সোভিয়েত ইউনিয়ন ভেঙে গড়ে ওঠে আলাদা ১৫টি জাতিরাষ্ট্র।

আরো পড়ুন>> বিতর্কের মুখে বাধ্যতামূলক ছুটিতে ডব্লিউএইচও’র এশিয়া পরিচালক

পূর্ব-পশ্চিম সম্পর্কের উন্নয়নে ভূমিকার জন্য ১৯৯০ সালে মিখাইল গর্বাচেভকে নোবেল শান্তি পুরস্কার দেওয়া হয়। সোভিয়েত পতনের পরের সময়টায় রাশিয়া আর আন্তর্জাতিক অঙ্গনে শান্তির পক্ষে বক্তৃতা দিয়ে গেছেন গর্বাচেভ। কিন্তু পশ্চিমাদের কাছে যতটা কদর পেয়েছেন, সমাজতন্ত্রের পতনের জন্য নিজের দেশে তাতে ততটাই নিন্দিত হতে হয়েছে।

১৯৯৯ সালে রক্তের ক্যান্সারে স্ত্রী রাইসার মৃত্যু ছিল গর্বাচেভের জন্য আরেক বড় ধাক্কা। এরপর অনেকটাই ভেঙে পড়েন সোভিয়েত ইউনিয়নের শেষ প্রেসিডেন্ট।

ভ্লাদিমির পুতিন রাশিয়ার নেতৃত্বে আসার পর তার দমননীতির কঠোর সমালোচনা করেন গর্বাচেভ। তবে ২০১৪ সালে পুতিনের নির্দেশে রাশিয়া যখন ক্রিমিয়া দখল করল, তখন তার পক্ষেই ছিলেন গর্বাচেভ।

হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় স্থানীয় সময় মঙ্গলবার মারা গেছেন মিখাইল গর্বাচেভ। গর্বাচেভের অফিস আগে বলেছিল যে, তিনি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন ছিলেন।

সূত্র: রয়টার্স