ঘুরতে ঘুরতে শিলাইদহের কুঠিবাড়ি
প্রকাশিত : ০৬:৫৫ পিএম, ৩০ আগস্ট ২০২২ মঙ্গলবার
ঘুরতে-ঘুরতে-শিলাইদহের-কুঠিবাড়ি
একটা কথা প্রায়ই শুনি, সেটা হচ্ছে ‘কবির অমর’। এ কথাটি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের ক্ষেত্রে পুরোপুরি সত্য! লেখার মাধ্যমে বেঁচে আছেন ও থাকবেন কবিগুরু রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর। কবিগুরু জীবিত না থাকলেও তার স্মৃতি হিসেবে এখনো পর্যটকদের কাছে সমাদৃত শিলাইদহের কুঠিবাড়ি। আর এ কারণেই হয়ত বাংলা সাহিত্যের এই কিংবদন্তীর স্মৃতি দেখতে শিলাইদহের কুঠিবাড়ীতে প্রতিনিয়তই ভিড় জমে আমাদের মত শত শত রবীন্দ্রপ্রেমীদের।
মূলত কুষ্টিয়ার কুমারখালী উপজেলার একটি গ্রাম শিলাইদহ। গ্রামটির পূর্ব নাম ছিল কসবা। রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর তার যৌবনকালের একটি উল্লেখযোগ্য সময় এখানে কাটিয়েছেন। শিলাইদহ কুঠীবাড়ির পাশ দিয়ে বয়ে গেছে পদ্মা নদী। কুমারখালীর শিলাইদহ সারাবিশ্বে পরিচিত পাবার কারণ যে কবিগুরু- তা এখানে না আসলে আমারও বিশ্বাসই হত না। কবিগুরু আর কুমারখালীর শিলাইদহ স্মৃতির আবহে মিলেমিশে একাকার।
রবীন্দ্রনাথ জমিদারির দায়িত্ব নেয়ার পর স্থায়ীভাবে শিলাইদহে বসবাস শুরু করেন। কুমারখালীর বিশেষত্ব হচ্ছে ছায়া সুশীতল আর শান্ত পরিবেশ। এ কারণেই হয়ত সাহিত্যচর্চার জন্য বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর বারবার ফিরে আসতেন এই কুঠিবাড়িতে। এখানে বসেই জমিদারী পরিচালনাসহ সাহিত্যচর্চা করতেন তিনি।
ঘুরে দেখে ও বিভিন্ন সূত্রে জানতে পারলাম, ১৮০৭ সালে রামলোচন ঠাকুরের উইল সূত্রে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের পিতামহ দ্বারকানাথ ঠাকুর এ অঞ্চলের জমিদারি পান। পরবর্তীতে ১৮৮৯ সালে জমিদারি দেখাশোনার জন্য রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর এখানে জমিদার হয়ে আসেন। রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর শিলাইদহের এই কুঠিবাড়ি থেকেই ১৯০১ সাল পর্যন্ত জমিদারি পরিচালনা করেন। প্রায় ৩৩ বিঘা জমি নিয়ে কুঠিবাড়ির তিন তলাবিশিষ্ট এ বাড়িতে রয়েছে ১৭টি কক্ষ। এসব কক্ষ ও বারান্দাজুড়ে প্রদর্শনীর জন্য রয়েছে কবির ব্যবহৃত একটি পালঙ্ক, লেখার টেবিল, ইজিচেয়ার, নদীতে চলাচলের দুইটি বোট ‘চঞ্চল’ ও ‘চপলা’পালকি, ঘাসকাটার যন্ত্র, ব্যবহৃত তলোয়ার, পানিশোধন যন্ত্র, বিভিন্ন সময়ে কবিকে ঘিরে তোলা আলোকচিত্র, কবিগুরুর নিজ হাতে আঁকা ছবি ইত্যাদি।
কুঠিবাড়ির চারপাশে রয়েছে আম, কাঠাঁলসহ চিরসবুজ গাছ ও ফুলের বাগান। কবি যে পুকুরপাড়ে বসে কবিতা লিখতেন, সেখানে আছে সেই সময়ের লাগানো বকুলগাছ। মনোরম পরিবেশের এই কুঠিবাড়ি চত্বরে যে-কারো সারা দিন থাকতে ইচ্ছে করবে।
লেখক: কৃষিবিদ ও সাবেক সভাপতি, বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় সাংবাদিক সমিতি