শনিবার   ৩০ নভেম্বর ২০২৪   অগ্রাহায়ণ ১৫ ১৪৩১   ২৮ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

যে খেলার দিকে তাকিয়ে পুরো উপমহাদেশ

প্রকাশিত : ০২:৩০ এএম, ২৮ আগস্ট ২০২২ রোববার

যে-খেলার-দিকে-তাকিয়ে-পুরো-উপমহাদেশ

যে-খেলার-দিকে-তাকিয়ে-পুরো-উপমহাদেশ

আফগানিস্তান-শ্রীলংকা ম্যাচের মধ্য দিয়ে ২৭ আগস্ট এ উপমহাদেশের বহুল প্রতিক্ষিত এশিয়া কাপ টি-২০ ক্রিকেটের ১৫তম আসর মাঠে গড়িয়েছে। প্রতি আসরের ন্যায় এবারো সবার দৃষ্টি সবচেয়ে হাইভোল্টেজ ম্যাচ ভারত ও পাকিস্তানের দিকে। 

রোববার আমিরাতের দুবাই আন্তর্জাতিক ক্রিকেট স্টেডিয়ামে বাংলাদেশ সময় সন্ধ্যা ৮ টায় মুখোমুখি হবে উপমহাদেশের এই দুই মহা পরাশক্তি। গাজী টিভি ও নাগরিক টেলিভিশন খেলাটি সরাসরি সম্প্রচার করবে। 

এ দুই দেশের ক্রিকেট মাঠের লড়াইটা বিশ্ব ক্রিকেটের সবচেয়ে মর্যাদাকর লড়াই হিসেবে পরিচিত। কেবল যে মর্যাদার তাই নয়, এ ম্যাচের মাধ্য ভারত-পাকিস্তানের রাজনৈতিক বৈরিতাকেও যেন মাঠে টেনে নিয়ে আসে। আবার মাঠের সহাবস্থানের মধ্যে দু’দেশের ভ্রাতৃত্বের বন্ধনেরও একটা আভাষ থাকে। ঘটে অনেক ঘটনা, এমনকি ইতিহাসের একটা অংশ হয়েও থাকে ভারত-পাকিস্তানের প্রতিটা ম্যাচ।  

এই মর্যাদার লড়াইয়ে জিততে মুখিয়ে থাকে দু’দলই। তাই প্রতিবারই ভারত-পাকিস্তান ম্যাচ নিয়ে থাকে বাড়তি উন্মাদনা। এবারও এর ব্যতিক্রম নয়।

টুর্নামেন্টে ‘এ’গ্রুপে রয়েছে ভারত ও পাকিস্তান। গ্রুপের অন্য দল বাছাই খেলে উঠে আসা হংকং। বাছাই পর্ব পেরিয়ে মূল পর্বে নাম লেখায় তুলনামুলক দুর্বল দলটি।

এক নজরে এ পর্যন্ত ভারত পাকিস্তান ম্যাচ: 

রাজনৈতিক সমস্যার কারণে দ্বিপাক্ষীক সিরিজ খেলে না দু’দেশের ক্রিকেট বোর্ড। সর্বশেষ ২০১২ সালে দ্বিপাক্ষীক সিরিজ খেলেছিলো ভারত-পাকিস্তান। তাই একে অপরের মুখোমুখি হতে ভারত-পাকিস্তানের অপেক্ষা করতে হয়- আইসিসির ইভেন্ট বা এশিয়া কাপের জন্য। এবার এশিয়া কাপের মঞ্চে লড়বে ভারত ও পাকিস্তান।

১৯৫২ সালে টেস্ট দিয়ে আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে মুখোমুখি হয়েছিলো ভারত-পাকিস্তান। তখন থেকেই বাড়তি উত্তেজনা বিরাজ করে ভারত-পাকিস্তান লড়াইয়ে। সেই উত্তাপ এই আধুনিক যুগে একটুও কমেনি, বরং আরো বেড়েছে। নিয়মিত দ্বিপাক্ষীক সিরিজ না হওয়াতেই উত্তাপটা আরো বহুগুনে বেড়ে গেছে।

সর্বশেষ গত টি-২০ বিশ্বকাপে দেখা হয়েছিলো ভারত-পাকিস্তানের। এরপর থেকেই পরের ভারত-পাকিস্তান লড়াই দেখার জন্য উন্মুখ হয়ে পড়ে ক্রিকেটপ্রেমিরা। অবশেষে দীর্ঘ ১০ মাস পর আরো একটি ভারত-পাকিস্তান ম্যাচ।  

তবে ভারত-পাকিস্তান লড়াইকে স্রেফ একটি ‘ম্যাচ’ বলেই মনে করেন দু’দলের বর্তমান ও সাবেক ক্রিকেটাররা। তাদের মতে, এটি অন্যান্য ম্যাচের মতই। তবে চাপ অনুভব করেন দলে থাকা ক্রিকেটাররা।

বাড়তি চাপ থাকায়, মর্যাদার লড়াইয়ে জিততে মরিয়া ভারত ও পাকিস্তান। ভারতের অধিনায়ক রোহিত শর্মা বলেন, ‘সকলেই এই ম্যাচের দিকে তাকিয়ে থাকে। খুব চাপের ম্যাচ এটি, তা নিয়ে কোন সন্দেহ নেই। তবে দলের পরিবেশ হালকা পরিবেশ রাখতে চাই।’

তিনি আরো বলেন, ‘এই ম্যাচ নিয়ে খুব ভেবে নিজেদের চাপে ফেলতে চাই না। যারা কোন দিন পাকিস্তানের বিপক্ষে খেলেনি বা মাত্র একটি-দু’টি ম্যাচে খেলেছে, তাদের ভাল করে এই ম্যাচের গুরুত্ব বোঝাতে চাই। আমরা পাকিস্তানকে অন্য যে কোনও সাধারণ বিপক্ষের মতোই দেখছি। তবে ম্যাচ জিতেই মাঠ ছাড়ার লক্ষ্য আমাদের।’

রোহিতের সুরে কথা বলেন পাকিস্তানের অধিনায়ক বাবর আজমও। বাবর বলেন ‘অন্যান্য ম্যাচের মত হলেও, ভারত-পাকিস্তান ম্যাচে বাড়তি চাপ এমনতিতেই চলে আসে। এই চাপকে সামলেই লড়াই করতে হয় ক্রিকেটারদের। কারণ সকলেই জানে, এমন ম্যাচের গুরুত্ব কত বেশি। তাই জয়ের জন্য মুখিয়ে থাকে ক্রিকেটাররা। এবারও আমরা জয়ের জন্য মাঠে নামবো’।

গত টি-২০ বিশ্বকাপে এক কথায় ভারতকে উড়িয়ে দিয়েছিলো পাকিস্তান। ১০ উইকেটে বিশাল জয়।  বিশ্বকাপের মঞ্চে ভারতের বিপক্ষে প্রথমবারের মত জয়ের দেখা পায় পাকিস্তান। এই সর্বশেষ জয়ে পাকিস্তানের আত্মবিশ্বাস অনেক বেশি এবং কিছুটা হলেও দল এগিয়ে থাকবে বলে মনে করেন বাবর। 

তিনি বলেন, ‘আমরা সর্বশেষ ম্যাচে জিতেছিলাম। যেভাবে ভারতকে হারিয়েছিলাম সেটি প্রশংসা করার মতই ছিলো। ঐ জয় আমাদের বাড়তি অনুপ্রেরণা দিচ্ছে।’

তবে অতীত নিয়ে ভাবতে রাজি নন রোহিত। সামনের ম্যাচের দিকেই মনোযোগি হতে চান তিনি, রোহিত বলেন ‘গত বিশ্বকাপে আমরা হেরেছিলাম।  ঐ ম্যাচে আমরা দল হিসেবে মোটেও ভালো খেলতে পারিনি। এ ধরনের ম্যাচে নিজেদের সেরাটা দিতে হয়। তবে অতীতে কি হয়েছে, তা নিয়ে এখন আর আমরা ভাবছি না। শূন্য থেকে আবার এশিয়া কাপে শুরু করতে চাই। অতীতে ক’বার দুই দেশ মুখোমুখি হয়েছে এবং কে বেশি জিতেছে, এ ধরনের পরিসংখ্যান থাকবে। কিন্তু ম্যাচের দিন দু’দলকেই প্রথম থেকে শুরু করতে হবে’।

গত আড়াই বছরেরও বেশি সময় ধরে ফর্ম নেই ভারতের অন্যতম সেরা ব্যাটার বিরাট কোহলির। তাই কোহলির ব্যাটে বড় ইনিংসের প্রত্যাশা দলের। তবে পাকিস্তানের বিপক্ষে ম্যাচে রানে ফিরতে পারলে যেন এক ঢিলে দুই পাখি মারা মত অবস্থা হবে কোহলির। পাকিস্তানের বিপক্ষে একাদশে থাকলেই, বিশ্বের ১৪তম ও ভারতের দ্বিতীয় ক্রিকেটার হিসেবে টি-২০তে শততম ম্যাচ খেলতে নামবেন কোহলি।

এ ব্যাপারে রোহিত বলেন, আমাদের সবারই প্রত্যাশা কোহলি ফর্মে ফিরবে। বড় ও ম্যাচ জয়ী ইনিংস খেলবে। তবে কোহলির অফ-ফর্ম নিয়ে নিয়ে আমরা খুব বেশি চিন্তিত নই। দলের জয়ের জন্য সবসময়ই উন্মুখ থাকে কোহলি। বহু বছর ধরে এটাই করে আসছে সে। এবারও তাই করবে কোহলি। বড় ইনিংস খেলতে ক্ষুধার্ত হয়ে আছে সে। আর কালকে ম্যাচটি কোহলির জন্য স্পেশাল। স্পেশাল ম্যাচটি স্মনরনীয় করে রাখার বড় সুযোগ তার।

কোহলির ফর্ম নিয়ে চিন্তিত ভারত। অন্য দিকে টুর্নামেন্ট শুরুর আগে জোড়া ধাক্কা খেয়েছে পাকিস্তান। ইনজুরির কারণে আগেই এশিয়া কাপ থেকে ছিটকে গেছেন দুই পেসার শাহিন শাহ আফ্রিদি ও মোহাম্মদ ওয়াসিম। তাদের পরিবর্তে মোহাম্মদ হাসনাইন ও হাসান আলিকে দলে নিয়েছে পাকিস্তান।

দুই পেসারের ছিটকে যাওয়ায় হতাশা নিয়ে বাবর বলেন, বিশ্বমানের বোলার আফ্রিদি। সে খেললে খুব ভাল লাগতো। দুর্ভাগ্যবশত ওয়াসিমও ছিটকে গেছেন। ইনজুরির উপর তো কারও হাত নেই। আশা করছি, যারা আছে সকলেই ভালো করবে।

টি-২০তে এখন পর্যন্ত ৯বার মুখোমুখি হয়েছে ভারত-পাকিস্তান। সেখানে ৭বার জিতেছে ভারত। ২বার জয় পায় পাকিস্তান।

এশিয়া কাপে ভারত-পাকিস্তান হেড-টু-হেড :

এশিয়া কাপের মঞ্চে এ পর্যন্ত মোট ১৫বার মুখোমুখি হয় ভারত-পাকিস্তান। তাতে ভারতেরই জয়ের পাল্লা ভারী। ৮বার জয় পায় ভারত এবং ৫বার জিতেছে  পাকিস্তান। ২টি ম্যাচ পরিত্যক্ত হয়। ২০১৬ সালের এশিয়া কাপ হয়েছিলো টি-২০ ফরম্যাটে। ঐ আসরে ভারত ৫ উইকেটে হারিয়েছিলো পাকিস্তানকে।

১৯৮৪ সালে এশিয়া কাপে প্রথম মুখোমুখি হয় ভারত-পাকিস্তান। ঐ ম্যাচটি ৫৪ রানে জিতেছিলো ভারত। আর ২০১৮ সালের সর্বশেষ আসরে দু’বার দেখা হয় দু’দলের। দু’বারই পাকিস্তানকে হারানোর স্বাদ নেয় ভারত।

এশিয়া কাপে ভারত-পাকিস্তান জয় পারাজয়:

১৯৮৪ সাল : ভারত ৫৪ রানে জয়ী।

১৯৮৮ সাল : ভারত ৪ উইকেটে জয়ী।

১৯৯৫ সাল : পাকিস্তান ৯৭ রানে জয়ী।

১৯৯৭ সাল : দু’বার মুখোমুখি হয় দু’দল। দু’টি ম্যাচই পরিত্যক্ত হয়।

২০০০ সাল : পাকিস্তান ৪৪ রানে জয়ী।

২০০৪ সাল : পাকিস্তান ৫৯ রানে জয়ী।

২০০৮ সাল : ভারত ৬ উইকেটে জয়ী।

২০০৮ সাল : পাকিস্তান ৮ উইকেটে জয়ী।

২০১০ সাল : ভারত ৩ উইকেটে জয়ী।

২০১২ সাল : ভারত ৬ উইকেটে জয়ী।

২০১৪ সাল : পাকিস্তান ১ উইকেটে জয়ী।

২০১৬ সাল : ভারত ৫ উইকেটে জয়ী (টি-২০ ফরম্যাট)।

২০১৮ সাল : ভারত ৯ উইকেটে জয়ী।

২০১৮ সাল :    ভারত ৮ উইকেটে জয়ী।

পাকিস্তান দল : 
বাবর আজম (অধিনায়ক), শাদাব খান, আসিফ আলি, ফখর জামান, হায়দার আলি, হারিস রউফ, ইফতিখার আহমেদ, খুশদিল শাহ, মোহাম্মদ নাওয়াজ, মোহাম্মদ রিজওয়ান (উইকেটরক্ষক), হাসান আলি, নাসিম শাহ, শাহনেয়াজ দাহানি, মোহাম্মদ হাসনাইন ও উসমান কাদির।

ভারত দল : 
রোহিত শর্মা (অধিনায়ক), লোকেশ রাহুল, বিরাট কোহলি, সূর্যকুমার যাদব, ঋষভ পান্ত (উইকেটরক্ষক), দিনেশ কার্তিক, হার্দিক পান্ডিয়া, রবীন্দ্র জাদেজা, রবিচন্দ্রন অশ্বিন, ভুবনেশ্বর কুমার, আর্শদিপ সিং, রবি বিষ্ণই, আভেশ খান, দীপক হুডা ও যুজবেন্দ্রা চাহাল।