শনিবার   ৩০ নভেম্বর ২০২৪   অগ্রাহায়ণ ১৫ ১৪৩১   ২৮ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

দুঃখ-আনন্দের এশিয়া কাপ ও বাংলাদেশের এগিয়ে চলা

প্রকাশিত : ০৭:৩০ পিএম, ২৬ আগস্ট ২০২২ শুক্রবার

দুখ-আনন্দের-এশিয়া-কাপ-ও-বাংলাদেশের-এগিয়ে-চলা

দুখ-আনন্দের-এশিয়া-কাপ-ও-বাংলাদেশের-এগিয়ে-চলা

আর মাত্র এক দিন বাকি, তার পরই ২৭ আগস্ট সংযুক্ত আরব আমিরাতে পর্দা উঠছে এশিয়া কাপের ১৫তম আসরের। 

এশিয়ার ক্রিকেটের শুরুটা হয়েছিল আরব আমিরাত থেকেই। ১৯৮৪ সালে মরুর বুকে উদ্বোধনী আসরের পর্দা উঠেছিল। ১৯৮৪ থেকে ২০১৮ সাল পর্যন্ত গেল ১৪ আসরের মধ্যে সবচেয়ে বেশি শিরোপা জয় করে ভারত। সর্বোচ্চ ৭ বার শিরোপার স্বাদ পায় তারা। 

দ্বিতীয় সর্বোচ্চ পাঁচবার শিরোপা জয় করে শ্রীলংকা। এ ছাড়া দুবার চ্যাম্পিয়ন হওয়ার গৌরব অর্জন করে পাকিস্তান। কিন্তু বাংলাদেশ রানার্সআপ হলেও এখনো সে অরাধ্য শিরোপা ঘরে তুলতে পারেনি।  

এ পর্যন্ত গেল আসরগুলোর সফলতা আর শিরোপার হাত বদলে এশিয়া কাপে বাংলাদেশের যাত্রা শুরু হয় ১৯৮৬ সালে। সেবার এশিয়া কাপের দ্বিতীয় আসরের আয়োজক ছিল লংকানরা। সে আসরে প্রথমবারের মতো এশিয়া কাপে অংশ নেয় বাংলাদেশ। ক্রম পর্যায়ে বাংলাদেশের এশিয়া কাপে অংশগ্রহন আর এক নজরে দেখে নেয়া যাক প্রতি আসরের বিস্তারিত।    

১৯৮৪ সাল:
এশিয়া কাপের প্রথম আসর বসে ১৯৮৪ সালে। উদ্বোধনী আসরে অংশ নিয়েছিল ভারত, পাকিস্তান ও শ্রীলংকা। রাউন্ড রবিন লিগ পদ্ধতির সেই টুর্নামেন্টে ফাইনালে লংকানদের হারিয়ে প্রথম চ্যাম্পিয়ন হয় ভারত।

১৯৮৬ সাল: 
১৯৮৬ সালে এশিয়া কাপের দ্বিতীয় আসর বসে শ্রীলংকায়। স্বাগতিকদের সঙ্গে দ্বিপাক্ষিক সিরিজ নিয়ে আগে থেকে চলা তিক্ত সম্পর্কের কারণে এ আসরে ভারত অংশ নেয়নি। সেবারই প্রথমবারের মতো এশিয়া কাপে যাত্রা শুরু করে বাংলাদেশ। 

সিংহলিজ স্পোর্টস ক্লাবের ফাইনালে আগে ব্যাট করে ৯ উইকেটে ১৯১ রান করে পাকিস্তান। লক্ষ্য তাড়া করতে নেমে মাত্র ৫ উইকেট হারিয়ে প্রথমবারের মতো এশিয়ার শ্রেষ্ঠত্ব অর্জন করে লংকানরা।

১৯৮৮ সাল: 
এশিয়া কাপের তৃতীয় আসর বসে ১৯৮৮ সালে। আয়োজক ছিল বাংলাদেশ। এ আয়োজনের মধ্য দিয়েই ক্রিকেটের প্রথম কোনো বড় আন্তর্জাতিক আসর বসে এ দেশে। বঙ্গবন্ধু স্টেডিয়ামে সেবার ফাইনালে শ্রীলংকাকে ৬ উইকেটে হারিয়ে শিরোপা পুনরুদ্ধার করে ভারত। এশিয়া কাপে সেটি ছিল টিম ইন্ডিয়ার দ্বিতীয় শিরোপা।

১৯৯০-৯১ সাল:
১৯৯০-৯১ সালে এশিয়া কাপের চতুর্থ আসর বসে ভারতে। সেবার ভারতের সঙ্গে বৈরী সম্পর্কের কারণে আসর থেকে নাম প্রত্যাহার করে নেয় পাকিস্তান। 

ইডেন গার্ডেনের ফাইনালে ৭ উইকেটে শ্রীলংকাকে হারিয়ে সেবার শিরোপা ধরে রাখে ভারত। ভারত-পাকিস্তানের রাজনৈতিক অস্থির সম্পর্কের কারণে ১৯৯৩ সালে বাতিল করা হয় এশিয়া কাপ। সেবার আয়োজিত হয়নি এশিয়া কাপ।

১৯৯৫ সাল:
১৯৯৫ সালে ১১ বছর পর আবারও এশিয়া কাপের আসর বসে সংযুক্ত আরব আমিরাতের শারজায়। পঞ্চম আসরে রান রেটে এগিয়ে থাকায় ফাইনালে উঠেযায় শ্রীলংকা ও ভারত। টানা তৃতীয়বারের মতো এশিয়া কাপের ফাইনালে ভারতের কাছে হারে লংকানরা। 

১৯৯৭ সাল: 
১৯৯৭ সালে ষষ্ঠ আসরে এসে প্রতিশোধের সুযোগ পায় লংকানরা। সেবার ভারতকে ৮ উইকেটে হারিয়ে দ্বিতীয়বারের মতো চ্যাম্পিয়ন হয় তারা।

২০০০ সাল:
২০০০ সালে সপ্তম আসর বসে বাংলাদেশে। এবার আর দাপট দেখাতে পারেনি ভারত। গ্রুপপর্বেই বাজে তাদের বিদায়ঘণ্টা। ফলে ফাইনালে ওঠে পাকিস্তান ও শ্রীলংকা। মোহাম্মদ ইউসুফের দাপুটে ব্যাটে শ্রীলংকাকে হারিয়ে প্রথমবারের মতো চ্যাম্পিয়ন হয় পাকিস্তান।

২০০৪ সাল:
২০০৪ সালে অষ্টম আসর বসে শ্রীলংকায়। এ আসরে কিছু পরিবর্তন আসে এর ফরম্যাটে। প্রথমবারের মতো তিন ভাগে ভাগ করা হয় আসর। 

গ্রুপপর্ব, সুপার ফোর ও ফাইনাল এ ফরম্যাটে শুরু হয় খেলা। কলম্বোর প্রেমাদাসা স্টেডিয়ামে সনৎ জয়সুরিয়ার ম্যাজিকে ভারতকে সেবার ২৫ রানে হারিয়ে চ্যাম্পিয়ন হয় শ্রীলংকা।

২০০৮ সাল: 
২০০৮ সালে নবম আসর বসে পাকিস্তানে। এবারও বিশ্ব দেখে শ্রীলংকার দাপুটে ঝলক। করাচির ফাইনালে ভারতকে ১০০ রানে হারিয়ে শিরোপা জয় করে নেয় লংকানরা। 

২০১০ সাল: 
২০১০ সালে এশিয়া কাপ আবারো ফেরে শ্রীলংকায়। তবে, সেবার আর চ্যাম্পিয়ন হতে পারেনি তারা। উল্টো ভারতের কাছেই শিরোপা হারায় তারা। ভারতের কাছে ৮১ রানের হারে রানার্সআপ হয়েই সন্তুষ্ট থাকতে হয় তাদের।

২০১২ সাল:
২০১২ সালে বাংলাদেশে আয়োজিত হয় এশিয়া কাপ। সেবার দেশবাসীর জন্য কষ্টের এক অধ্যায় হয়ে দাঁড়ায় এ আয়োজন। এ দেশের ক্রিকেটপ্রেমীদের জন্য এ আসরটি ছিল দুঃস্বপ্নের। মিরপুর শেরেবাংলা স্টেডিয়ামের ফাইনালে উঠে টাইগাররা। কিন্তু পাকিস্তানের কাছে মাত্র ২ রানের হার স্বপ্ন ভাঙে টাইগারদের। সেবার সাকিব-মুশফিকদের চোখের পানি যেন সারা দেশের সবার হৃদয় ভেঙে দেয়। ক্রিকেট যে কেবল আবেগের নাম নয় লাখো বাঙালীর প্রাণ সেবার বুঝা গিয়েছিল। 

২০১৪ সালের এশিয়া কাপের আয়োজক হয় বাংলাদেশ। ২০১৪-তে পাকিস্তানের বিপক্ষে ৫ উইকেটের জয়ে চ্যাম্পিয়ন হয় শ্রীলংকা। 

২০১৬ সাল: 
২০১৪ সালের পর ২০১৬ সালে আবারো এশিয়া কাপের আয়োজক হয় বাংলাদেশ। এ আসরে আবারও ফাইনালে ওঠে বাংলাদেশ। 

এবারো তীরে এসে তরী ডুবলো  সাকিব-মুশফিকদের। সেবার টাইগারদের স্বপ্নযাত্রা থামিয়ে দেয় ভারত। নিজেদের মাটিতে টাইগারদের ৮ উইকেটে উড়িয়ে দিয়ে শিরোপা উল্লাস করে ভারত।

২০১৮ সাল: 
২০১৮ সালের ফাইনালেও একই ঘটনার পুনরাবৃত্তি দেখে ক্রিকেট বিশ্ব। শিরোপার কাছে এসে দুবাই আন্তর্জাতিক ক্রিকেট স্টেডিয়ামে বাংলাদেশকে ৩ উইকেটে হারিয়ে দেয় ভারত। সেবার টানা দ্বিতীয়বারের মতো রানার্সআপ তকমা নিয়ে ঘরে ফেরে টাইগাররা।

এভাবেই এ উপমহাদেশে ধিরে ধিরে এগিয়ে যায় বাংলাদেশের ক্রিকেট। এখন যে কোনো ফরম্যাটে অন্যান্য যে কোনো দলকে চ্যালেঞ্জ জানাতে পারে সাকিব বাহিনী। 

এবারের এশিয়া কাপে অন্যতম ফেবারিটের তকমা গায়ে নিয়ে দুবাইয়ে অবস্থান করছে টাইগাররা। রানার্সআপের তকমা সরিয়ে চ্যাম্পিয়ন হবার ব্রতই এখন প্রত্যেক টাইগারদের মনে।