মঙ্গলবার   ২৬ নভেম্বর ২০২৪   অগ্রাহায়ণ ১১ ১৪৩১   ২৪ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

নাগরিক ঐক্যের মান্নার ‘জ্ঞান আতঙ্কে’ বিএনপি নেতারা

প্রকাশিত : ০৭:০৫ পিএম, ৭ আগস্ট ২০২২ রোববার

নাগরিক-ঐক্যের-মান্নার-জ্ঞান-আতঙ্কে-বিএনপি-নেতারা

নাগরিক-ঐক্যের-মান্নার-জ্ঞান-আতঙ্কে-বিএনপি-নেতারা

মাহমুদুর রহমান মান্না, রাজনৈতিক দল নাগরিক ঐক্যের সভাপতি তিনি। কিন্তু নিজের দলের চেয়ে বিএনপির অভ্যন্তরীণ বিষয়ে নাক গলাতেই বেশি আগ্রহী দেখা যায় তাকে। বিভিন্ন সময়ে বিএনপি নেতাদেরকে টেলিফোন করেন মান্না, নানা বিষয়ে পরামর্শ দেন, কী করতে হবে না হবে সে বিষয়েও দেন জ্ঞান। 

বিএনপির অনুষ্ঠানে আমন্ত্রিত না হয়েও মান্না উপস্থিত হন। এমনকি তিনি বিএনপি নেতাদের মতোই আচরণ করেন। বিএনপির নেতারাও মাহমুদুর রহমান মান্নার প্রকাশ্যে সমালোচনা করতে ভয় পান। কারণ মান্নার সঙ্গে লন্ডনে পলাতক তারেক জিয়ার ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক রয়েছে। 

বিএনপির একাধিক নেতা বলেছেন, মাহমুদুর রহমান মান্না তাদের জন্য এখন বিপদের কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছেন। তিনি এখন বিএনপির নেতাকর্মীদের কাছে একটি বিরক্তির নাম হিসেবেও আবির্ভূত হয়েছেন।

দীর্ঘদিন ধরে মাহমুদুর রহমান মান্না লন্ডনে পলাতক বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক জিয়ার সঙ্গে যোগাযোগ রাখেন। তারেক জিয়া তাকে একবার বিএনপিতে যোগ দেওয়ারও অনুরোধ জানিয়েছিলেন। সে সময় তিনি বিএনপিতে যোগ দেননি। কিন্তু বিএনপিতে যোগ না দিলেও তিনি তারেক জিয়ার সঙ্গে ঘনিষ্ঠ যোগাযোগ রেখে চলেছেন। তারেক জিয়াও এখন মান্নার ওপর অনেকটা নির্ভরশীল বলে জানা গেছে।

সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, প্রতিদিনই মাহমুদুর রহমান মান্নার সঙ্গে বিভিন্ন রাজনৈতিক বিষয় নিয়ে আলাপ হয় তারেক রহমানের। এক সময়ের বাম এই নেতা বাকপটু, কথাবার্তায় অত্যন্ত চতুর। সে কারণে সহজে তিনি তারেককে বশীভূত করতে পেরেছেন। তারেক জিয়ার অনেক সিদ্ধান্তই এখন মান্নার পরামর্শ। 

এদিকে বিষয়টি বিএনপিতে জানাজানি হওয়ার পর মান্নাকে নিয়ে দলটির অনেকেই আতঙ্কিত। তারা মান্নার বিরুদ্ধে প্রকাশ্যে কোনো কথাবার্তা বলেন না। এমনকি তার সামনে দলের কোনো বিষয়ও আলোচনা করেন না। 

বিএনপির এক নেতা বলেন, কিছুদিন আগে মান্না তাকে ফোন করেছিলেন। একটি বিষয় নিয়ে তার সঙ্গে দীর্ঘ আলাপ হয়। সেখানে তিনি বিএনপির কিছু নেতিবাচক বিষয় তুলে ধরেন। এর দুইদিন পরই তারেক জিয়া তাকে দলের বিরুদ্ধে কথা বলার অভিযোগ এনে টেলিফোনে বকাঝকা করেন। হুমকিও দেন।ভবিষ্যতে এ ধরনের কথাবার্তা বলা হলে তার বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেয়ার কথাও বলেন তারেক। 

ঐ নেতা বলেন, আমি মান্না ছাড়া কারো সঙ্গে এ বিষয়ে কথা বলিনি। তার মানে স্পষ্টতই মান্নাই এ কথা তারেক জিয়াকে বলেছেন।

‍অন্যদিকে, বিএনপির সব কর্মসূচিতে মাহমুদুর রহমান মান্নাকে দেখা যাচ্ছে। সম্প্রতি ভোলায় নিহত দুইজনের গায়েবানা জানাজা অনুষ্ঠানে বিএনপি কার্যালয়ে উপস্থিত হয়েছিলেন মান্না। তখন দলের নেতাকর্মীরা প্রশ্ন তোলেন, এটি বিএনপির কর্মসূচি। মান্না এখানে কেন? দলের মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর যেহেতু তারেক জিয়ার সঙ্গে মান্নার ঘনিষ্ঠতার বিষয়টি জানেন, সেজন্য তিনি পরিস্থিতি সামাল দেন। তিনি বলেন, বিএনপির কর্মসূচিতে আমাদের শরিকদের যে কেউ আসতে পারে। এতে কোনো বাধা নেই। 

মাহমুদুর রহমান মান্না কেবল বিএনপির কর্মসূচিতে এসেই ক্ষান্ত হচ্ছেন না, তিনি বিএনপির নেতাদের নানা উপদেশও দিচ্ছেন। কী করতে হবে, না হবে, কীভাবে বক্তৃতা দিতে হবে, কোন লাইনে কথা বলতে হবে ইত্যাদি বিষয়ে পরামর্শ দিচ্ছেন। কেন্দ্রীয় নেতাদের পরিধি ছাড়িয়ে তিনি এখন ছাত্রদল, যুবদলের নেতাদেরও পরামর্শ দিচ্ছেন। এ‍ ‍অবস্থায় বিএনপি নেতারা প্রকাশ্যে কিছু না বললেও ভেতরে ক্ষোভে ফুঁসছেন।