বিএনপিতে ‘বিশ্বাসঘাতক’ আতঙ্ক
প্রকাশিত : ০৭:০৫ পিএম, ৬ আগস্ট ২০২২ শনিবার
বিএনপিতে-বিশ্বাসঘাতক-আতঙ্ক
গত নির্বাচনের আগে বিএনপি প্রথমে তাদের নেতা হিসেবে নির্বাচন করেছিল অধ্যাপক ড. বদরুদ্দোজা চৌধুরীকে। তার সঙ্গে একাধিকবার বৈঠক হয়েছিল। সে সময় বদরুদ্দোজা চৌধুরীকে আহ্বায়ক করারও সিদ্ধান্ত নেয়া হয়। কিন্তু শেষ পর্যন্ত বিকল্পধারাকে বাদ দিয়েই জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট গঠন করা হয়েছিল।
পরে ড. কামাল হোসেনের নেতৃত্বে বিএনপি ঐ নির্বাচনে অংশগ্রহণ করে। তা নিয়ে বিএনপিতে এখন তীব্র সমালোচনা। বিএনপি নেতা ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন প্রকাশ্যে বলেছেন, ড. কামাল হোসেনকে ইমাম মেনে বিএনপি মহাভুল করেছিল। এবারো বিএনপি নির্বাচনের আগে জোট গঠন করে করতে যাচ্ছে। এরই মধ্যে ২২টি রাজনৈতিক দলের সঙ্গে বিএনপি বৈঠক করেছে।
বিএনপির পক্ষ থেকে বলা হচ্ছে, যেভাবেই জোট হোক না কেন নেতৃত্বে থাকবে বিএনপি। তবে এ জোট নিয়ে বিএনপির মধ্যে এখন নানা সংশয়, সন্দেহ এবং অবিশ্বাস দানা বেঁধে উঠেছে। যদিও বিএনপির পক্ষ থেকে বলা হচ্ছে, এ জোট হলো আন্দোলনের জোট। কিন্তু বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন, এ জোটেই একসঙ্গে নির্বাচন করবে এবং নির্বাচনের পরে জাতীয় সরকার গঠন করা হবে এ জোটের নেতৃত্বেই। এরই পরিপ্রেক্ষিতেই অনেকে সন্দেহ করছেন, আরেকটি নির্বাচনে বিএনপিকে নিয়ে যাওয়ার জন্য নতুন জোট হচ্ছে কিনা! নতুন জোটে যে রাজনৈতিক দলগুলো রয়েছে সে রাজনৈতিক দলগুলোর অন্তত একজন নেতাকে নিয়ে বিএনপির মধ্যে সন্দেহ, সংশয় ক্রমশ দানা বাঁধছে। তিনি হলেন এলডিপির কর্নেল অলি আহমেদ।
কর্নেল অলি আহমেদ বিএনপির প্রতিষ্ঠাতা নেতা। জিয়াউর রহমানের অত্যন্ত ঘনিষ্ঠ ব্যক্তি হিসেবে পরিচিত। ১৯৯১ সালে বিএনপির অন্যতম প্রভাবশালী নেতা ছিলেন, খালেদা জিয়ার অন্যতম ঘনিষ্ঠ ব্যক্তি হিসেবেও পরিচিত ছিলেন তিনি। কিন্তু তারেক জিয়ার কারণে বিএনপিতে শেষ পর্যন্ত টিকতে পারেননি।
২০০১ সালের নির্বাচনে তিনি মন্ত্রিত্ব বঞ্চিত হন। এরপর আস্তে আস্তে তিনি বিএনপি থেকে তিরোহিত হয়েছেন। বর্তমানে তিনি এলডিপি নামে ক্ষুদ্র একটি রাজনৈতিক দলের নেতা। কিন্তু বিএনপি নেতাকর্মীদের মধ্যে এখনো তার প্রভাব রয়েছে। যেমন- অধ্যাপক ড. বদরুদ্দোজা চৌধুরীকে বিএনপির অনেক নেতারাই গোপনে শ্রদ্ধা করেন, তার সঙ্গে যোগাযোগ রাখেন এবং তাকে নেতা হিসেবে মানেন। ঠিক তেমনি কর্নেল অলিরও বিএনপিতে বিপুল প্রভাব বলয় রয়েছে। বিশেষ করে যারা তারেক জিয়াবিরোধী হিসেবে পরিচিত তাদের সঙ্গে কর্নেল অলি আহমেদের ঘনিষ্ঠ যোগাযোগ রয়েছে। তবে কর্নেল অলির ভূমিকা নিয়ে বিএনপিতে কিছু বিতর্ক রয়েছে। বিশেষ করে তারেক জিয়া কর্নেল অলিকে পছন্দ করেন না এবং তারেক জিয়ার কারণে কর্নেল অলিকে বিএনপি ছাড়তে হয়েছিল, এটা সবাই জানেন।
গতবারও যখন বিএনপির নেতৃত্বে জোট গঠিত হয়েছিল তখন তারেক জিয়া কর্নেল অলিকে ২০ দলীয় জোটে নেয়ার ক্ষেত্রে আপত্তি জানিয়েছিলেন। কিন্তু খালেদা জিয়ার আগ্রহের কারণেই শেষ পর্যন্ত কর্নেল অলি জোটে ঠাই পান। কিন্তু এবার যখন তিনি জোটের নেতৃত্ব দাবি করেছেন, তখন বিএনপি নেতারা নড়েচড়ে বসেছেন। এরই মধ্যে লন্ডনে বার্তা পাঠানো হয়েছে। বিএনপি এখন সবসময় বিশ্বাসঘাতক আতঙ্কে থাকে। বিএনপির নেতারা মনে করে, নির্বাচনের আগে বিএনপিতে কোনো এজেন্ট ঢুকে দল ভাঙবে বা বিএনপিকে নির্বাচনমুখী করবে। সেরকম একটি আতঙ্ক থেকেই কর্নেল অলিকে সন্দেহ করা হচ্ছে যে- কর্নেল অলি যেভাবে কথা বলছেন তাতে বিএনপি ভাঙার কোনো চক্রান্ত তিনি করছেন কিনা বা বিএনপিকে নির্বাচনের দিকে নিয়ে যাওয়ার চেষ্টা তার আছে কিনা!
রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা বলছেন, নির্বাচনের আগে বিএনপিকে অখণ্ড রাখা যেমন একটি চ্যালেঞ্জ, তেমনি বিএনপিকে নির্বাচন থেকে দূরে রাখাও একটি বড় সমস্যা। এ বাস্তবতায় সামনের দিনগুলোতে বিএনপিতে কর্নেল অলি কি তাণ্ডব করেন সেটি দেখার বিষয়।