রোববার   ২২ সেপ্টেম্বর ২০২৪   আশ্বিন ৭ ১৪৩১   ১৮ রবিউল আউয়াল ১৪৪৬

ইসির সংলাপে ইভিএমে ভোটের প্রস্তাব আওয়ামী লীগের

প্রকাশিত : ১০:০৫ পিএম, ৩১ জুলাই ২০২২ রোববার

ইসির-সংলাপে-ইভিএমে-ভোটের-প্রস্তাব-আওয়ামী-লীগের

ইসির-সংলাপে-ইভিএমে-ভোটের-প্রস্তাব-আওয়ামী-লীগের

ভোট ডাকাতি ও ভোট কারচুপি বন্ধ করতে ইলেকট্রনিক ভোটিং মেশিন বা ইভিএম’র মাধ্যমে ভোট গ্রহণের প্রস্তাব করেছে আওয়ামী লীগ।

রোববার নির্বাচন কমিশনের (ইসি) সঙ্গে সংলাপে অংশ নিয়ে আওয়ামী লীগ নেতারা এ প্রস্তাব দেন।  প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) কাজী হাবিবুল আউয়ালের নেতৃত্বাধীন কমিশনের সঙ্গে দলের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদেরের নেতৃত্বে ১৩ সদস্যের প্রতিনিধিদল সংলাপে অংশ নেয়।

দলের অন্য সদস্যরা হলেন- আমির হোসেন আমু, মতিয়া চৌধুরী, কাজী জাফর উল্লাহ, ড. মো. আব্দুর রাজ্জাক, লেফটেন্যান্ট কর্নেল (অব.) মুহাম্মদ ফারুক খান, মোহাম্মদ সাহাবুদ্দিন চুপ্পু, ড. হাছান মাহমুদ, ড. আবদুস সোবহান গোলাপ, ড. সেলিম মাহমুদ, ব্যারিস্টার বিপ্লব বড়ুয়া এবং বেগম শামসুন নাহার।

সংলাপে দলের পক্ষে সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের প্রস্তাবনা উপস্থাপন করে বলেন, সময়ের পরিক্রমায় প্রমাণিত হয়েছে ভোট ডাকাতি, কেন্দ্র দখল, ভোট কারচুপি এসব বন্ধে বৈজ্ঞানিক পদ্ধতিতে স্বচ্ছ নির্বাচন পদ্ধতি বাস্তবায়ন ইভিএম ব্যবস্থায় সম্ভব। বর্তমান সরকারের অব্যাহত সহায়তা ও নির্বাচন কমিশন সচিবালয়ের আর্থিক সক্ষমতা বৃদ্ধি পাওয়ায় নির্বাচন কমিশন সচিবালয়ে এখন ১ লাখ ৫০ হাজারের অধিক ইভিএম মেশিন রয়েছে। ইভিএমগুলো দিয়ে মোট ৪৩ হাজার ভোটকেন্দ্রের মধ্যে ১৩ হাজার কেন্দ্রে শতকরা মাত্র ৩১ শতাংশ কেন্দ্রে ভোট নেয়া সম্ভব।

দলের অন্য প্রস্তাবগুলো হলো- নির্বাচন কমিশনের স্বাধীনতা, নিরপেক্ষতা ও গ্রহণযোগ্যতা ঊর্ধ্বে রেখে সংবিধান ও আইনে প্রদত্ত দায়িত্ব পালনে সক্ষমতা প্রদর্শন। নির্বাচনকালীন নির্বাহী বিভাগের সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়/সংস্থার দায়িত্বশীলতা। নির্বাচন কমিশন সচিবালয় এবং এর মাঠপর্যায়ের কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের দায়িত্বশীল ও নিরপেক্ষ আচরণ।

এটি সর্বজন স্বীকৃত আওয়ামী লীগ ছাড়া অন্যান্য সব সরকারের সময় নির্বাচন কমিশনকে দলীয়করণ করা হয়েছে। নির্বাচন কমিশনে একদিকে যেমন সাংবিধানিক পদে দলীয় আনুগত্যের ভিত্তিতে নিয়োগ দেওয়া হয়েছিল। অন্যদিকে বিএনপি-জামাত অশুভ জোট সরকারের সময় কর্মকর্তা পর্যায়ে হাওয়া ভবনের মাধ্যমে এক বিপুল সংখ্যক দলীয় ব্যক্তিকে নিয়োগ দেওয়া হয়। এসব দলীয় ব্যক্তি এখন নির্বাচন কমিশনের আওতাভুক্ত বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্বে রয়েছে। নির্বাচনকে নিরপেক্ষ ও প্রভাবমুক্ত রাখার লক্ষ্যে এই বিষয়ে কমিশনকে কার্যকর পদক্ষেপ নিতে হবে।

এছাড়া, বিএনপি জামাত জোট সরকারের সময় দলীয়করণের অংশ হিসেবে পুলিশসহ সিভিল প্রশাসনে ব্যাপকভাবে দলীয় নেতাকর্মীদের নিয়োগ করেছিল। এদের অনেকেই এখন জেলা পর্যায়ে দায়িত্বপ্রাপ্ত অথবা দায়িত্ব পাওয়ার জন্য অপেক্ষমাণ। এসব দলীয় কর্মকর্তাদের তালিকা প্রস্তুত করে তাদের নির্বাচনী দায়িত্ব থেকে বাইরে রাখতে হবে।

ছবিযুক্ত নির্ভুল ভোটার তালিকা এবং ভোট গ্রহণের দিন নির্বাচন কেন্দ্রের সার্বিক নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে হবে। বেসরকারি সংস্থা বা প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তাদের পরিবর্তে প্রজাতন্ত্রের দায়িত্বশীল কর্মকর্তা/কর্মচারীদের প্রিজাইডিং অফিসার ও পোলিং অফিসার পদে নিয়োগ করার প্রস্তাব করা হয়।

আইনশৃঙ্খলা রক্ষায় নিয়োজিত সদস্যদের নিরপেক্ষ ও দায়িত্বশীল আচরণ এবং দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনে দেশি ও বিদেশি পর্যবেক্ষক নিয়োগে সর্বোচ্চ স্বচ্ছতা ও সতর্কতা অবলম্বন করতে হবে। প্রচলিত আইন ও বিধি-বিধান অনুযায়ী কোনোভাবেই কোনো দল বা প্রার্থীর প্রতি অনুগত বা কোনোভাবে সম্পর্কযুক্ত হিসেবে পরিচিত বা চিহ্নিত ব্যক্তি, গোষ্ঠী বা সংস্থাকে নির্বাচন পর্যবেক্ষণের দায়িত্ব প্রদান করা যাবে না।  

নির্বাচনে পেশিশক্তি ও অর্থের প্রয়োগ বন্ধ এবং ধর্মীয় সংখ্যালঘু সম্প্রদায়সহ সব পর্যায়ের ভোটারের অবাধ ভোটদানের সুযোগ নিশ্চিত করতে হবে। নির্বাচনের আগে ও পরে সবার সার্বিক নিরাপত্তা নিশ্চিত করা। নির্বাচন অনুষ্ঠানের সময়ে প্রশাসন ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীসহ নির্বাচন পরিচালনার জন্য আবশ্যকীয় সব সংস্থা ও প্রতিষ্ঠানকে নির্বাচন কমিশনের তত্ত্বাবধানে ন্যস্ত করার প্রস্তাব করা হয়।

নির্বাচনকালীন সরকারের কর্মপরিধি কেবলমাত্র আবশ্যকীয় দৈনন্দিন (রুটিন) কার্যাবলীর মধ্যে সীমাবদ্ধ থাকা এবং এডহক বা অন্তর্বর্তীকালীন ব্যবস্থার পরিবর্তে টেকসই সাংবিধানিক, আইনি ও রেগুলেটরি ব্যবস্থার ওপর নির্ভর করার কথা বলা হয়।

তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা একটি ‘পাস্ট অ্যান্ড ক্লোজড চ্যাপ্টার’। দেশের সর্বোচ্চ আদালত সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগ এই ব্যবস্থাকে অসাংবিধানিক এবং অবৈধ ঘোষণা করেছে। আইন সংবিধানের অনুচ্ছেদ ১১১-এর বিধান অনুযায়ী এ বিষয়ে অন্য কোনো কর্তৃপক্ষের ভিন্ন কোন সিদ্ধান্ত দেওয়ার এখতিয়ার নেই। এই বিষয়ে সাংঘর্ষিক কোনো মন্তব্য করা সংবিধান লঙ্ঘন করার শামিল। 

এসব প্রস্তাব ছাড়াও ওবায়দুল কাদের বলেন, আওয়ামী লীগ দেশে গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠার জন্য দীর্ঘ সংগ্রাম করেছে। সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচন অনুষ্ঠানের লক্ষ্যে রাজনৈতিক দল হিসেবে আওয়ামী লীগ সাংবিধানিক রেগুলেটরি কমিশন ‘নির্বাচন কমিশন’-কে সর্বাত্মকভাবে সহায়তা করবে। খবর- বাসস