রোববার   ২২ সেপ্টেম্বর ২০২৪   আশ্বিন ৭ ১৪৩১   ১৮ রবিউল আউয়াল ১৪৪৬

এক সময়ের জনপ্রিয় নেতারা বর্তমানে বিএনপিতে নিষ্ক্রিয় 

প্রকাশিত : ০৩:০৫ পিএম, ২১ জুলাই ২০২২ বৃহস্পতিবার

এক-সময়ের-জনপ্রিয়-নেতারা-বর্তমানে-বিএনপিতে-নিষ্ক্রিয় 

এক-সময়ের-জনপ্রিয়-নেতারা-বর্তমানে-বিএনপিতে-নিষ্ক্রিয় 

এক সময় ঢাকা সিটি কর্পোরেশনের মেয়র নির্বাচিত হয়েছিলেন মির্জা আব্বাস। মতিঝিল আসন থেকে তিনি এমপিও হয়েছিলেন। তবে দীর্ঘদিন ধরে দলীয় কোনো কর্মকাণ্ডে নেই মির্জা আব্বাস।

যদিও তার পারিবারিক সূত্র বলছে, অসুস্থতার জন্য তিনি দলীয় কর্মকাণ্ড থেকে নিজেকে গুটিয়ে রেখেছেন। কিন্তু বাস্তবতা হলো যে, তারেক জিয়ার নেতৃত্বের প্রতি অসন্তোষ এবং তাকে অপমান করার কারণে তিনি ধীরে ধীরে নিষ্ক্রিয় হয়ে উঠেছেন। 

বিএনপি সূত্রে জানা গেছে, মির্জা আব্বাসের নিষ্ক্রিয়তার কারণে ঢাকা শহরের অর্ধেক এলাকায় বিএনপির নেতাকর্মীরাও হতাশ হয়ে পড়েছেন। বর্তমানে এরাও নিষ্ক্রিয়। 

শুধু মির্জা আব্বাস একা নন, বিএনপিতে এ রকম অনেক জনপ্রিয় নেতাই এখন ক্রমশ নিষ্ক্রিয় হয়ে পড়ছেন। এর ফলে দলটিতে এক ধরনের স্থবিরতা এবং নতুন করে হতাশা তৈরি হয়েছে।

বিএনপির বিশ্বস্ত সূত্রে জানা গেছে, তারেক জিয়া একক কর্তৃত্বে বিএনপি পরিচালনা করছেন। আর তার নির্দেশ বাস্তবায়ন করছেন মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। 

এদিকে তারেক রহমানের একক সিদ্ধান্তের ফলে গুরুত্বপূর্ণ নেতারা গুরুত্বহীন হয়ে পড়ছেন। দলের অনেক সিনিয়র নেতা বলেছেন, কীভাবে দলের সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে, সে সম্পর্কে কোনো কিছুই তারা জানেন না। এমনকি স্থায়ী কমিটিকে পাশ কাটিয়ে তারেক জিয়া একক কর্তৃত্বে দল পরিচালনা করছেন। এর ফলে দলের গুরুত্বপূর্ণ নেতাদের মধ্যে তৈরি হয়েছে হতাশা। 

মির্জা আব্বাসের মতোই বিএনপির আরেক স্থায়ী কমিটির সদস্য নজরুল ইসলাম খানও নিজেকে গুটিয়ে নিয়েছেন। আনুষ্ঠানিক দু-একটি কর্মকাণ্ড ছাড়া দলের কোনো কর্মকাণ্ডে বা নীতিনির্ধারণে তিনি ভূমিকাহীন। 

নজরুল ইসলাম খানের পক্ষ থেকেও বলা হয়েছে, তিনি একটু অসুস্থ। এজন্য দলীয় কর্মকাণ্ডে কম ভূমিকা রাখছেন। কিন্তু বাস্তবতা হলো যে, মির্জা আব্বাসের মতো তিনিও বিএনপির কর্মকাণ্ডে অসন্তুষ্ট।

ড. আব্দুল মঈন খান আন্তর্জাতিক পরিমণ্ডলে বিএনপির জনপ্রিয় একজন নেতা। বিশেষ করে কূটনৈতিক মহলে তার আলাদা একটা গ্রহণযোগ্যতা আছে। কিন্তু সাম্প্রতিক সময়ে তিনিও নিজেকে সবকিছু থেকে গুটিয়ে নিয়েছেন। যদিও তার পক্ষ থেকে বলা হচ্ছে যে, তিনি গুটিয়ে নেননি বরং করোনা পরিস্থিতির কারণে সীমিত আকারে কর্মকাণ্ড করছেন। কিন্তু বাস্তবতা হলো, করোনা পরিস্থিতির আগেও ড. মঈন খানকে খুব একটা সরব এবং সক্রিয় দেখা যায় না। 

বিভিন্ন সূত্র বলছে, মঈন খানের বদলে কূটনৈতিক বিষয়গুলো দেখভাল করার জন্য শামা ওবায়েদ এবং রুমিন ফারহানাকে গুরুত্ব দিচ্ছেন তারেক জিয়া। আমীর খসরু মাহমুদকেও দায়িত্ব দেওয়া হচ্ছে। যার ফলে মঈন খান কিছুটা অসন্তুষ্ট হয়ে দূরে সরে আছেন।

বিএনপির স্থায়ী কমিটির বাইরেও ব্যাপক জনপ্রিয় মেজর (অবসরপ্রাপ্ত) হাফিজউদ্দিন। তিনি দলের বিভিন্ন বিষয়ে সোজাসাপ্টা কথাবার্তা বলতেন। এজন্য বিএনপিতে তার বেশ জনপ্রিয়তা ছিলো। বিশেষ করে নেতাকর্মীদের মনের ভাষাগুলো তিনি উচ্চারণ করতেন। সেই মেজর হাফিজউদ্দিনও এখন নিষ্ক্রিয় এবং দলীয় কর্মকাণ্ড নিয়ে সুস্পষ্টভাবে হতাশ। তাকেও এখন বিএনপির কর্মকাণ্ডে খুব একটা দেখা যাচ্ছে না।

বিএনপির আরেক স্থায়ী কমিটির সদস্য ব্যারিস্টার রফিকুল ইসলাম গুরুতর অসুস্থ থাকার কারণে দলীয় কর্মকাণ্ডে অংশগ্রহণ করছেন না। ফলে বিএনপির স্থায়ী কমিটিতে গুরুত্বপূর্ণ নেতা দু-একজন ছাড়া প্রায় সবাই নিষ্ক্রিয়। শুধু নিষ্ক্রিয় নয়, একদিকে জনপ্রিয় নেতাদের দল থেকে বহিষ্কার করা হচ্ছে, অন্যদিকে জনপ্রিয় নেতাদের নিষ্ক্রিয় করা হচ্ছে। 

এতে দলের মধ্যে হতাশা বাড়ছে। বিএনপির একজন নেতা বলছেন, যাদের কথায় কর্মীরা মাঠে নামতো, জীবন দিতো, তারাই এখন নিষ্ক্রিয় হয়ে পড়েছে। ফলে সামনের দিনগুলোতে বিএনপি একটি বড় সংকটের মধ্যে প্রবেশ করতে যাচ্ছে বলেই রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা মনে করছেন।