বয়সকালেও চাই স্বাস্থ্যকর ডায়েট
প্রকাশিত : ০৯:৩৮ এএম, ২ জুলাই ২০২২ শনিবার
বয়সকালেও-চাই-স্বাস্থ্যকর-ডায়েট
তবে চিকিৎসকদের মতে, এই বয়সে সবচেয়ে বেশি দেখা দেয় ইটিং ডিজঅর্ডার। অনেকের যেমন খাবারে অনীহা তৈরি হয়, তেমনই অনেকের মধ্যে ভুলভাল খাবার খেয়ে নেয়ার প্রবণতা দেখা যায়। গ্যাস, অ্যাসিডিটি, বদহজম, কোষ্ঠকাঠিন্য, পেটখারাপ— এগুলো বয়সকালের স্বাভাবিক সমস্যা। ইটিং ডিজঅর্ডারের সঙ্গেই ঘুম কমে যাওয়া, হাত-পায়ে ব্যথা ইত্যাদি উপসর্গও যোগ হয়। বয়স্কদের জন্য সুষম খাদ্যাভ্যাস খুব জরুরি।
ডায়াটিশিয়ান কোয়েল পালচৌধুরী বলছেন, ‘‘বয়স্ক ব্যক্তিদের একবারে বেশি খাবার না দিয়ে অল্প করে বারবার খেতে দিতে হবে। বাইরের খাবারের বদলে বাড়িতে তৈরি কম তেলমশলাযুক্ত খাবার দেওয়া উচিত।’’ বয়স হলে দাঁতের জোর কমে যায়, দাঁত পড়ে যায়। ফলে চিবিয়ে খেতে সমস্যা হয়, যেটা বদহজমের অন্যতম কারণ। তাই সেমি-সলিড, লিকুইড খাবার দিলে ভালো। বয়স্ক মানুষদের ডায়েট নিয়ে নানা রকম ভ্রান্ত ধারণা আছে। নির্দিষ্ট কোনো রোগ না থাকলে বয়স্ক ব্যক্তিদের ডায়েট সাধারণত কেমন হওয়া উচিত তার ব্যাখ্যা দিলেন কোয়েল পালচৌধুরী।
প্রোটিনে বাধা আছে?
বলা হয়, প্রোটিন হজম করা কঠিন। কিন্তু পুষ্টিবিদদের মতে, বয়স্ক ব্যক্তির অবশ্যই প্রোটিন প্রয়োজন, যা সেল গ্রোথ, হিমোগ্লোবিন ফরমেশন, হরমোনাল ব্যালান্স ঠিক রাখার কাজ করবে। চিকেন, মাছ, ডিম সবই রাখা যায় খাদ্যতালিকায়। দিনে যে কোনো দুটো প্রাণিজ প্রোটিন দেওয়া যেতে পারে। ডিম খেলে শরীর গরম হবে, এ কথাও শোনা যায়। কোয়েল বললেন, ‘‘কারো ডিমে সমস্যা থাকলে তিনি শুধু এগ হোয়াইট খেতে পারেন। রোজকার খাবারে মাছ রাখা যেতে পারে। অন্যান্য প্রাণিজ প্রোটিনের তুলনায় মাছ সহজে হজম হয়।’’ প্লান্ট প্রোটিনের মধ্যে আনাজপাতি, সব রকমের ডাল খাওয়া যেতে পারে।
খাদ্যতালিকায় জরুরি
রোজকার খাবারের মধ্যে ওমেগা থ্রি ফ্যাটি অ্যাসিড, ফাইবার জাতীয় খাবার রাখতে হবে। ওমেগা থ্রি ফ্যাটি অ্যাসিড শরীরের ইনফ্ল্যামেশন রোধ করে। কড লিভার অয়েল, ফ্ল্যাক সিডস, চিয়া সিডস, ওয়ালনাট, সয়াবিনের মধ্যে এটি পাওয়া যায়। ফাইবার-সমৃদ্ধ খাবারের মধ্যে আপেল, কলা, স্ট্রবেরি, অ্যাভোকাডো এবং বিট, গাজর, ব্রকোলি পড়বে। এই বয়সে কম-বেশি হাড়ের সমস্যা সবারই থাকে। তাই শরীরের জন্য জরুরি ক্যালশিয়ামও। দুধ, ছানা, পনির, বাড়িতে পাতা দই, সবুজ শাক বিশেষত পালং শাক থেকে যথেষ্ট পরিমাণে ক্যালশিয়াম পাওয়া যাবে। যে সব খাবারের মধ্যে ভিটামিন ডি, ই, সি থাকে, সেগুলো সবই খাদ্যতালিকায় রাখা জরুরি। কড লিভার অয়েল, কমলালেবু, দুধ জাতীয় খাবার... এগুলো থেকেই সব রকম ভিটামিনের জোগান মিলবে। বয়সকালে হিমোগ্লোবিনের মাত্রা কমে যায়। আয়রন সমৃদ্ধ খাবার খেতে হবে। দিনে একটা-দুটো খেজুর খেলে উপকার পাওয়া যাবে।
বয়স্কদের দুধ হজম হবে কি না, এই প্রশ্নটা থেকেই যায়। কোয়েল বলছেন, ‘‘সরাসরি দুধ খেতে সমস্যা হলে ছানা, পনির দেওয়া যায়। এছাড়া ঘরে পাতা টক দই খুব ভালো প্রোবায়োটিক। দই অন্য খাবার হজম করায়।’’ বলা হয়, শাক ঠিক মতো হজম হয় না। ডায়াটিশিয়ানের পরামর্শ, শাক খাওয়ার সময়ে লেবু মিশিয়ে খেলে হজমের সমস্যা আটকানো যাবে। বয়স্ক ব্যক্তির জন্য, ৫০ গ্রাম থেকে ১০০ গ্রাম পালং শাক যথেষ্ট। বিকেলের স্ন্যাক্সে চিঁড়া খাওয়া যেতে পারে। চিঁড়াতে আয়রন আছে। মুড়ি মাখার সময়ে আমলকি গ্রেট করে দিলে খেতেও ভালো লাগবে, শরীরে অ্যান্টি-অক্সিড্যান্টও যাবে। দুপুরের খাবারের এক ঘণ্টা পরে মুসাম্বি বা লেবু জাতীয় ফল খাওয়ার পরামর্শ দেন বিশেষজ্ঞরা। রোজকার খাদ্যতালিকায় ড্রাই ফ্রুটস রাখা যেতে পারে, একটা খেজুর, দুটো করে ওয়ালনাট, আমন্ড, বাদাম, কিশমিশ।
জেনে রাখা ভালো
বয়স্কদের মানসিক সমস্যাও খুব স্বাভাবিক। কিছু খাবার আছে যেগুলো মুড ভালো করতে সাহায্য করবে, যেমন আমন্ড, পালং শাক, দই। অনেক সময়েই খাবারের বদলে মাল্টিভিটামিনের উপরে আস্থা রাখেন অনেকে। ‘‘ভিটামিন সাপ্লিমেন্টগুলো দিনের পর দিন খেলে কোনো কাজ হবে না। এক মাসের একটা কোর্স করে থেমে যাওয়া উচিত। আর চিকিৎসকের পরামর্শ না নিয়ে বাজারচলতি ভিটামিন বা ইমিউনিটি বুস্টার ট্যাবলেট খাওয়া উচিত নয়,’’ বললেন কোয়েল পালচৌধুরী।
নির্দিষ্ট কোনো অসুখ না থাকলে, বাড়ির খাবারে বাধা নেই কিছুতেই। তবে বয়স্ক ব্যক্তিদের কঠিন ডায়েটে না বেঁধে, তাদের মুড বুঝে মাঝেমধ্যে মুখরোচক খাবার দেওয়া যেতেই পারে।