স্বস্তির বৃষ্টিতে জাবিতে একবেলা
প্রকাশিত : ১১:৫৫ পিএম, ২৯ জুন ২০২২ বুধবার
স্বস্তির-বৃষ্টিতে-জাবিতে-একবেলা
বৃষ্টিময় জাবিতে উপস্থিত হলে আপনার মনে হবে, গ্রীষ্মের প্রচণ্ড দাবদাহ আর তাপদাহে উষ্কখুষ্ক প্রকৃতিকে ঠাণ্ডা ও শীতলতার পরশ ছুঁয়ে দিতেই হাজির হয়েছে মেঘ-বর্ষা। ঘনকালো মেঘের বুক চিরে ফোঁটা ফোঁটা বৃষ্টির ছোঁয়া পেয়ে মুখরিত মনে হবে চারপাশ।
বর্ষায় এ ক্যাম্পাসে প্রাণের সঞ্চার ঘটে। তারুণ্যে প্রাণে এনে দেয় সজীবতা। বর্ষা মানবমনকে সহজ, সরল ও সৃষ্টিশীল করে তোলে। বর্ষা হৃদয়ে আনে অফুরন্ত আবেগের প্রবাহ। বর্ষাই বাংলার কাব্য সাহিত্যকে রসসমৃদ্ধ করেছে। প্রেম ও ভালোবাসার অনুভূতিগুলোও এই বর্ষাই এনে দিয়েছে।
লাল সবুজের আস্তরণে নির্মিত জাবি ক্যাম্পাসে নতুন মাত্রা যোগ করে প্রাণের বর্ষা। সবুজের আবরণ ভেদ করে বৃষ্টির ফোঁটায় নিমজ্জিত হয় ক্যাম্পাসের পিচ ঢালা রাস্তাগুলো। ঝিরঝির বাদলে ক্যাম্পাসের লাল ইটের দেয়ালগুলো যেন নতুন রূপে সাজে। ক্যাম্পাসের লেকগুলো জলে পরিপূর্ণ হয়ে ওঠে।
বর্ষাকাল সম্পর্কে বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর বলেছিলেন,
‘নীল নবঘনে আষাঢ় গগণে তিল ঠাঁই আর নাহিরে,
ওগো আজ তোরা যাসনে ঘরের বাহিরে’
বৃষ্টি হলে কবি যেখানে সবাইকে ঘরের মধ্যে থাকতে অনুরোধ করেছেন। তবে এ বিশ্ববিদ্যালয়ের তরুণ-তরুণীরা মাতে বৃষ্টি ভেজা উৎসবে। কেউ বা দল বেঁধে অবিরাম বারিধারায় মাতে, কেউবা রঙিন ছাতা হাতে বের হয় বর্ষা বরণে। টিপ টিপ বৃষ্টি আর ঠাণ্ডা শীতল হাওয়া, যেন প্রকৃতিকে গ্রাস করে এখানে। হলের ছাদে তরুণের দল বৃষ্টির সঙ্গে মেতে ওঠে।
বৃষ্টির দিনে এ ক্যাম্পাস যেন নতুন বেশ ধারণ করে। বৃষ্টির ফলে সতেজ হয়ে ওঠে গাছপালা। গাছে গাছে নতুন সবুজ পাতা দেখা যায়। এই ক্যাম্পাসে রয়েছে অসংখ্য কদম, হিজল আর জারুল গাছ। কদম গাছে কদম ফুল, হিজল বাগানে হিজল আর জারুল গাছে জারুল ফুটেছে এ বর্ষাতেও। কদম ফুলের সাদা-হলুদের বাহারি মিশ্রণ ক্যাম্পাসজুড়ে শোভা ছড়াচ্ছে। ঝিরঝির বৃষ্টিতে ক্যাম্পাসের গাছে গাছে বসেছে বর্ষার সংগীত উৎসব। পাখিরা যেন গ্রীষ্মের হাফ ছেড়ে বৃষ্টির তালে তালে নৃত্য পরিবেশন করছে। বৃষ্টি শুরু হলে পানিতে থৈথৈ করে ক্যাম্পাসের লেকগুলো। এসব দৃশ্য কেবল নিজ চোখে দেখলেই বোঝা যাবে এর রূপ।
এ বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার্থীদের কাছেও বর্ষা ঋতু একটু বেশিই প্রিয়। ক্যাম্পাস জীবনের আনন্দময়তায় বর্ষাকাল যেন নতুন মাত্রা যোগ করে। বৃষ্টির দিনে তারুণ্যের মাঝে ভিন্ন ধরনের উল্লাস চোখে পড়ে। এদিনে টিএসসি, বটতলা, পরিবহন চত্বর, মুরাদ চত্বর, চায়ের দোকান ও আবাসিক হলগুলো বেশি মুখর থাকে। কেউবা বই পড়ে সময় পার করে, কেউবা আবার গিটারের টুংটাং শব্দে গান আড্ডায় ব্যস্ত হয়ে পড়ে। অনেকে আবার ক্যামেরা হাতে বেরিয়ে পড়ে বৃষ্টিস্নাত দুপুরের সৌন্দর্য উপভোগ করতে। কেউবা আবার আপন মনে ছবি আঁকতে শুরু করে।
বৃষ্টি যেন প্রকৃতির প্রাণ। আর সেই বৃষ্টি যদি হয় বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে তাহলে তা তরুণ মনে দেয় ভালোবাসার দোলা। ব্যস্ত ক্যাম্পাসে হঠাৎ বৃষ্টি যেন এনে দেয় গম্ভীর নীরবতা। বৃষ্টি মানে শান্তির পরশ বৃষ্টি মানে মধুর কলতান। বৃষ্টি মানে আকাশে কালো মেঘের মিছিল। বৃষ্টির দিনে দুপুর যেন অলসতার মূর্ত প্রতীক, শান্ত বিকেলে নিস্তব্ধ চারদিক।
তাই চলুন, একবেলা বৃষ্টি দেখে আসুন জাবি ক্যাম্পাসে।
লেখক:
শিক্ষার্থী
সাংবাদিকতা ও গণমাধ্যম অধ্যয়ন বিভাগ
জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়