সোমবার   ২৫ নভেম্বর ২০২৪   অগ্রাহায়ণ ১০ ১৪৩১   ২৩ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

বর্ষার শুরুতেই চলুন ভিমরুলি পেয়ারাবাজার

প্রকাশিত : ০৭:৫৫ পিএম, ১৯ জুন ২০২২ রোববার

বর্ষার-শুরুতেই-চলুন-ভিমরুলি-পেয়ারাবাজার

বর্ষার-শুরুতেই-চলুন-ভিমরুলি-পেয়ারাবাজার

ভেসে চলেছে পেয়ারাভর্তি অগণিত নৌকা। পাইকারি দরে পেয়ারাগুলো কেনাবেচা চলছে এসব নৌকার মধ্যেই। দূর থেকে পাইকাররা আসছেন নৌকায়, পেয়ারা কিনে চলেও যাচ্ছেন। সবুজ-হলুদ রঙের কাঁচা-পাকা পেয়ারা নিয়ে বিক্রেতারা যাচ্ছেন পাইকারদের নৌকার কাছে। এ যেন জলনগরীতে এক সবুজ-হলুদের হলিখেলা। এমন দৃশ্য দেখা যাবে ভিমরুলি পেয়ারার হাটে। ঝালকাঠি ও পিরোজপুর জেলার সীমানায় ছোট-বড় খালের মোহনায় গড়ে উঠেছে এই জলবাজার। স্থানীয় গ্রাম ভিমরুলির নামে এ বাজারের নাম দেওয়া হয়েছে ‘ভিমরুলি বাজার’।

ঝালকাঠি, বরিশাল ও পিরোজপুরের সীমান্তবর্তী এলাকার একাধিক গ্রামে গড়ে উঠেছে এই পেয়ারাবাগান। এর সঙ্গে জড়িত অসংখ্য পরিবার। পানির উপরেই গড়ে উঠেছে এই পেয়ারার বাজার, যেখানে প্রতিদিন পেয়ারার হাট বসে। নৌকায় করে শত শত মণ পেয়ারা আসে, আবার নৌকায় করেই কিনে নিয়ে যায় অনেকে। চমৎকার একটি নয়নাভিরাম দৃশ্য। পেয়ারা দেখতে এবং খেতে এবার ঘুরে আসতে পারেন ভাসমান পেয়ারাবাজার।

ভাসমান পেয়ারাবাজার সাধারণত জুলাই ও আগস্ট মাসে প্রতিদিন সকালে বসে, বেলা বাড়ার সাথে সাথে কমতে থাকে কেনাবেচা। ভীমরুলি, আটঘর, জিন্দাকাঠী, ডুমুরিয়াসহ বেশ কয়েকটি পয়েন্টে ভাসমান হাট বসলেও সবচেয়ে বড় ভাসমান বাজার হচ্ছে ভিমরুলী।

ভাসমান এত বড় বাজার দেশের আর কোথাও চোখে পড়ে না। স্থানীয় ভাষায় এ বাজারকে বলা হয় ‘গোইয়ার হাট’। ভিমরুলি বাজারের প্রাণকেন্দ্রে খালের ওপরের ব্রিজটিতে দাঁড়িয়ে পাখির চোখে দেখা যাবে সমগ্র বাজারকে। কিছু ছবি তুলে নেওয়ার এটাই উৎকৃষ্ট জায়গা। এখান থেকেই দেখা যাবে পেয়ারানির্ভর জনপদের ব্যস্ততার দৃশ্য। কেউ কেউ খুচরা বিক্রির উদ্দেশ্যে নৌকা চালিয়ে যাচ্ছে দূরের হাটে। কেউ বা করছে পেয়ারা রপ্তানির ব্যবস্থা। কেউ দিচ্ছে নৌকার জোগান। দুটি টাকা বেশি দামের আশায় চাষিরা এক পাইকার থেকে নৌকা ভেড়াচ্ছে অন্য পাইকারের কাছে। এ যেন জলরঙের ক্যানভাসে আঁকা সত্যিকারের অপরূপ বাংলার প্রতিচ্ছবি।

ভিমরুলি বাজার। ছবি: খায়রুল বাশার আশিক

ভিমরুলি বাজার মেলে সকাল ৯টার দিকে আর বাজারের রসদ জোগাতে পেয়ারাচাষিদের কাজ শুরু হয় খুব ভোরে। সূর্যের আলো ফোটার আগেই নাওকোন্দা (তালগাছের নৌকা) নিয়ে বাগানে হাজির হয় তাঁরা। আকাশে সামান্য আলো দেখা দিলেই পেয়ারা নিয়ে রওনা হয় বাজারে।

অসংখ্য পেয়ারা বাগান থেকে পেয়ারা নিয়ে ডিঙিনৌকাগুলো ভিড় করে ভিমরুলি বাজারে। বেচাকেনার মহড়া চলে পাইকার-আড়তদার ও বিক্রেতার মধ্যে। সকাল থেকে সন্ধ্যা অবধি চলে এই কর্মযজ্ঞ। পাইকারের মাধ্যমে এই পেয়ারা চলে যায় ঢাকাসহ প্রত্যেক বড় শহরে। দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে আসা পাইকাররা এ বাজার থেকে পেয়ারা সংগ্রহ করেন। এ অঞ্চলে উৎপাদিত পেয়ারা রপ্তানি হচ্ছে বিদেশেও।

এই হাট নিজ চোখে দেখতে দূর-দূরান্ত থেকে আসে অগণিত দর্শনার্থী। ভাসমান বাজার দেখার পাশাপাশি সবুজ প্রকৃতিকে উপভোগ করার সুযোগ আছে এখানে। এ অঞ্চলেই রয়েছে কিছু জমিদারবাড়ি, গুটিয়া মসজিদ, মাধব রাজার দুর্গাসাগরসহ একাধিক ভ্রমণকেন্দ্র। তাই তো কাছের মানুষ, মনের মানুষ নিয়ে ভ্রমণপিপাসুরা ছুটে যাচ্ছেন এই অপরূপ জনপদে।

যেভাবে যাবেন

ভিমরুলি বাজার দেখতে চাইলে আপনাকে অবশ্যই সকাল ৯টার আগে সেখানে উপস্থিত হতে হবে। ঢাকা সদরঘাট থেকে রাতের লঞ্চে বারিশাল যেতে পারেন। লঞ্চে ডাবল কেবিন দুই হাজার টাকা। ডেকে ২০০ টাকা। খুব সকালে বরিশাল নথুল্লাবাদ থেকে মাহিন্দ্রায় যেতে হবে বনারিপাড়া। মাহিন্দ্রায় জনপ্রতি ভাড়া ৩০ টাকা। সেখান থেকে ট্রলারে করে ভিমরুলি বাজার। এ ছাড়া সায়েদাবাদ বা গাবতলি থেকে সরাসরি স্বরূপকঠির বাসে যাওয়া যাবে বানারিপাড়া পর্যন্ত। বাসভেদে ভাড়া ৬০০ থেকে ৮০০ টাকা।