সোমবার   ২৩ সেপ্টেম্বর ২০২৪   আশ্বিন ৮ ১৪৩১   ১৯ রবিউল আউয়াল ১৪৪৬

আন্দোলনের গতিপ্রকৃতি নিয়ে বিভক্ত বিএনপি

প্রকাশিত : ০২:০৫ পিএম, ১ জুন ২০২২ বুধবার

আন্দোলনের-গতিপ্রকৃতি-নিয়ে-বিভক্ত-বিএনপি

আন্দোলনের-গতিপ্রকৃতি-নিয়ে-বিভক্ত-বিএনপি

দলীয় চেয়ারপার্সনের মুক্তি ও নির্দলীয় নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে নির্বাচনের লক্ষ্যে চূড়ান্ত আন্দোলন করতে চায় বিএনপি। 

এ লক্ষ্যে ছাত্রদল-যুবদলকে মাঠে নামিয়ে দেশের বিভিন্ন স্থানে সভা-সমাবেশের মাধ্যমে সহিংসতাকে উস্কে দিতে চাইলেও চূড়ান্ত আন্দোলনের কর্মসূচি এবং চূড়ান্ত আন্দোলনের গতিপ্রকৃতি নিয়ে বিএনপির নীতিনির্ধারকদের মধ্যে বিভক্তি দেখা দিয়েছে। 

তারেক জিয়ার সঙ্গে দলের সিনিয়র নেতারা একমত নন। অন্যদিকে বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের সঙ্গেও দ্বিমত দেখা যাচ্ছে সিনিয়র নেতাদের। এ পরিস্থিতিতে আন্দোলনের শুরুতে বিএনপিতে বিভক্তি ক্রমশ দানা বেঁধে উঠছে। 

তারেক জিয়া মনে করেন, এখনই চূড়ান্ত আন্দোলন গড়ে তোলা উচিত এবং এ আন্দোলন হওয়া উচিত সহিংস এবং ধ্বংসাত্মক। বিশেষ করে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়, গার্মেন্টস এসব এলাকায় লাশ ফেলে একটা ভীতিকর পরিস্থিতি সৃষ্টির পক্ষে তারেক রহমান। তিনি আর সময় দিতে চান না। কিন্তু দলের সিনিয়র নেতারা যারা দীর্ঘদিন রাজনীতি করছেন তারা মনে করছেন, একটা-দুইটা লাশ পড়লে কিছুই হবে না। এখনই যদি ধ্বংসাত্মক জ্বালাও-পোড়াও আন্দোলন করা হয় তাহলে তার পরিণতি হিতে বিপরীত হতে পারে। 

বিএনপির সিনিয়র নেতা ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন, নজরুল ইসলাম খানসহ কয়েকজন মনে করেন যে, আন্দোলনকে ধাপে ধাপে এগিয়ে নেয়া উচিত এবং এই আন্দোলনের সঙ্গে অন্যান্য রাজনৈতিক দল এবং জনগণকে সম্পৃক্ত করা দরকার। কিন্তু তারেক জিয়া মনে করছে, যেকোনো প্রকারে দেশে একটা অরাজক পরিস্থিতি সৃষ্টি করাটাই এখন যৌক্তিক হবে। এ মতামতের সঙ্গে আবার একমত নন দলের সিনিয়র নেতারা।

বিভিন্ন সূত্রগুলো বলছে, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে যে ছাত্রদলের সহিংসতা, উস্কানি এবং পঁচাত্তরের হাতিয়ারের বিষয়ক স্লোগান ইত্যাদি সবই তারেকের প্রেসক্রিপশন। তারেক জিয়া মনে করছেন, ক্যাম্পাসে লাশ পড়লে পরিস্থিতি ঘোলাটে হবে এবং সরকার কোণঠাসা হয়ে পড়বে। অন্যদিকে কিছু কিছু গার্মেন্টসে অশান্তি সৃষ্টির জন্য তারেক জিয়া নির্দেশনা দিয়েছেন বলেও বিএনপি নেতাদের কাছে খবর এসেছে। 

তারা মনে করছেন, এ সমস্ত ঘটনাগুলো শেষ পর্যন্ত বিএনপিকে আরো চাপের মধ্যে ফেলবে। উদাহরণ হিসেবে বিএনপির একজন নেতা বলেছেন, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে যে ঘটনা ঘটল, এর ফলে সংগঠন হিসেবে ছাত্রদলকে যে গুছানোর একটা উদ্যোগ নেয়া হয়েছিল তা ভেস্তে গেল। ছাত্রদলের নেতাদের বিরুদ্ধে প্রচুর মামলা হয়েছে, তারা এখন পালিয়ে বেড়াচ্ছে। আন্দোলন হলে তারা আর আন্দোলন করবে কীভাবে? এদের মধ্যে অনেকেই গ্রেফতার হয়েছেন বলেও বিএনপির নেতারা দাবি করছেন।

পাশাপাশি তারা বলছেন যে, এ ঘটনার পরে সারাদেশে বিএনপির যে সমস্ত নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে মামলা রয়েছে, যারা বিভিন্ন সময় নাশকতা এবং অন্যান্য মামলায় জামিনে রয়েছেন তারাও ঝুঁকিতে পড়েছেন। তাদের বিরুদ্ধে মামলাগুলোকে আবার আবার সচল করা হয়েছে, কোথাও কোথাও বিএনপি নেতারা গ্রেফতারও হয়েছেন। তাছাড়া এর মাধ্যমে কর্মীদের মধ্যে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়েছে, অনেক নেতা-কর্মী আত্মগোপনে চলে গেছেন। এর ফলে রাজপথের আন্দোলন সম্ভব হবে না। 

আর এ ধ্বংসাত্মক কর্মসূচির ফলে শেষ পর্যন্ত ক্ষতিগ্রস্ত হবে বিএনপি। তবে মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর মনে করেন, আন্দোলনকে তীব্র করার এখনই সময়। কিন্তু বিএনপি নেতাদের ধারণা, মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের নিজের চিন্তাভাবনা বলে কিছু নেই। তারেক জিয়া যে বক্তব্য শিখিয়ে দেন তিনি সেই বক্তব্য আওড়ান। ফলে তার বক্তব্য এবং তারেক জিয়ার বক্তব্য একই রকম, এর মধ্যে কোনো পার্থক্য নেই।