বেড়াতে পারেন দিল্লীর ‘কুতুব মিনার’, যাওয়া- থাকার আদ্যপান্ত
প্রকাশিত : ০৬:৫৫ পিএম, ২৭ মে ২০২২ শুক্রবার
বেড়াতে-পারেন-দিল্লীর-কুতুব-মিনার-যাওয়া--থাকার-আদ্যপান্ত
কুতুব মিনার ভারতের দিল্লীতে অবস্থিত একটি স্তম্ভ বা মিনার, যা বিশ্বের সর্বোচ্চ ইটনির্মিত মিনার। এটি কুতুব কমপ্লেক্সের মধ্যে অবস্থিত, প্রাচীন হিন্দু মন্দিরের ধ্বংসাবশেষের পাথর দিয়ে কুতুব কমপ্লেক্স এবং মিনারটি তৈরি করা হয়েছে। লাল বেলেপাথরে নিৰ্মিত এই মিনারটির উচ্চতা ৭২.৫ মিটার (২৩৮ ফুট)। মিনারটির পাদদেশের ব্যাস ১৪.৩২ মিটার (৪৭ ফুট) এবং শীৰ্ষঅংশের ব্যাস ২.৭৫ মিটার (৯ ফুট)।
সুলতানি জমানার নথিপত্র সূত্র বলছে, দিল্লির চারজন শাসকের হাতে ধাপে ধাপে গড়ে উঠেছিল ইট ও লাল বেলেপাথরের তৈরি কুতুব মিনার। সময় লেগেছিল প্রায় ১৯৩ বছর (১১৯৩ থেকে ১৩৮৬ সাল)।
ভারত আক্রমণকারী মুহাম্মদ ঘোরির সেনাপতি (পরবর্তী কালে দিল্লির প্রথম সুলতান) কুতুবউদ্দিন আইবকের নির্দেশে শুরু হয়েছিল তারই নামাঙ্কিত মিনার তৈরির কাজ। তবে প্রথম তলা নির্মাণের পরই তার ইন্তেকাল হয়।
কুতুবউদ্দিনের জামাই ইলতুৎমিস গড়েন পরের তিনটি তলা। কিন্তু দুবার বজ্রপাত এবং ভূমিকম্পে কুতুব মিনারের বেশ কিছু অংশ ভেঙে পড়েছিল। সুলতান মহম্মদ বিন তুঘলক এবং ফিরোজ শাহ তুঘলকের আমলে সেই অংশ পুনর্নির্মাণ করা হয়।
ফিরোজ শাহের সময়ই নির্মিত হয়েছিল ২৩৮ ফুট উঁচু মিনারের পঞ্চম তলা। পরবর্তী সময় সুলতান সিকন্দর লোদিও ভূমিকম্পে ক্ষতিগ্রস্ত কুতুবের ভেঙে পড়া বেশ কিছু অংশ পুনর্নির্মাণ করেছিলেন। আলাউদ্দিন খিলজির সময় বাঁধানো হয়েছিল কুতুব মিনারের প্রশস্ত প্রাঙ্গণ।
সরকারি হিসেব বলছে, ২০০৬ সালে তাজমহলের চেয়েও বেশি পর্যটক এসেছিলেন কুতুব দর্শনে। আগে উপরে ওঠার ব্যবস্থা থাকলেও ১৯৮০ সালে দুর্ঘটনায় পদপিষ্ট হয়ে ৪৫ জনের মৃত্যুর পর পাকাপাকিভাবে বন্ধ করে দেওয়া হয় মিনারের দরজা।
ভারতে ইসলামি শাসনের সূচনাপর্বের নিদর্শনটি ঘিরে বিতর্কও রয়েছে। তবে মূল মিনার নয়, বিতর্কের কেন্দ্রে রয়েছে কুতুব প্রাঙ্গণের কুয়াতউল-ইসলাম মসজিদ। তার তিন পাশের বারান্দায় হিন্দু ও জৈন ধর্মের নানা চিহ্ন রয়েছে বলে দাবি আছে।
আফগানিস্তানের জাম মিনার এর অনুকরণে এটি নির্মিত হয়। পাঁচ তলা বিশিষ্ট মিনারের প্রতিটি তলায় রয়েছে ব্যালকনি বা ঝুলন্ত বারান্দা। কুতুব মিনার বিভিন্ন নলাকার শ্যাফট দিয়ে গঠিত যা বারান্দা দ্বারা পৃথকীকৃত। মিনার লাল বেলেপাথর দিয়ে তৈরী যার আচ্ছাদন এর উপরে পবিত্র কোরআনের আয়াত খোদাই করা। এছাড়া মিনারের প্রাচীর গাত্র নানা প্রকারের অলঙ্করণ দ্বারা শোভিত। ঐতিহাসিকদের অভিমত হচ্ছে কুওয়াতুল ইসলাম মসজিদ-এর মুসল্লিদের সুবিধার্থে আযান দেওয়ার জন্য কুতুব মিনার ব্যবহৃত হতো। ১ম তলা হতে আযান দেয়া হতো নিয়মিত।
যাতায়াত
বাংলাদেশে থেকে বাস, ট্রেন বা বিমানে যেতে পারবেন কলকাতা। শিয়ালদহ বা হাওড়া স্টেশন থেকে রাজধানী এক্সপ্রেস বা দূরন্ত এক্সপ্রেস ট্রেনে যাওয়া যাবে দিল্লি। চাইলে কলকাতা থেকে বিমানেও দিল্লি যেতে পারবেন। দিল্লি শহরের যেকোনো স্থান থেকেই ট্যাক্সিতে যেতে পারবেন কুতুব মিনার। এছাড়া দিল্লি শহরের অনেক স্থানে মেট্রোরেলের যাতায়াত আছে। চাইলে মেট্রোরেলে কুতুব মিনার স্টেশনে নেমে সেখান থেকে হেঁটে কুতুব মিনার যাওয়া যাবে।
যেখানে থাকবেন
দিল্লি শহরজুড়েই আছে পাঁচ তারকাসহ নানা মানের হোটেল। অনেক বেশি হোটেল পাবেন পাহাড়গঞ্জ এলাকায়। এটা দিল্লির পুরোনো শহর বা বাজার। এখানে নানা মানের হোটেল আছে। ভাড়া ৬০০ রুপি থেকে শুরু করে ৬ হাজার রুপি পর্যন্ত। মোটামুটি মানের হোটেল পাবেন ৬০০ বা ৮০০ রুপিতে।
খাওয়া-দাওয়া
পাহাড়গঞ্জ এলাকায় ছোট-বড় নানা মানের রেস্টুরেন্ট আছে। সাদাভাত, বিরিয়ানি, মাছ, মাংস, শাক-সবজি সবই পাওয়া যাবে। ১৫০ থেকে ২০০ রুপিতে থালি প্যাকেজ পাবেন। এক থালিতে ভাত, ডাল, সবজি, সালাদ থাকে। ২০০ বা ২৫০ রুপির মধ্যে মাছ-মাংসও পাবেন।
কেনাকাটা
ভারতের রাজধানী শহর দিল্লি। তাই শহরজুড়েই আছে ছোট-বড় অসংখ্য শপিং মল। আর এসব শপিং মলে ভারতের বিভিন্ন রাজ্যের ঐতিহ্যবাহী পণ্যগুলো পাবেন। বিশেষ করে পাবেন দার্জিলিংয়ের চা, কাশ্মীরের রেশমি কাপড়, রাজস্থান, উত্তরপ্রদেশ বা বিভিন্ন রাজ্যের তাঁতের কাপড়। আর পাবেন নানা স্বাদের চকলেট। এক দামের দোকান ছাড়া দরাদরি করে কেনার সুযোগও আছে।