সোমবার   ২৫ নভেম্বর ২০২৪   অগ্রাহায়ণ ১০ ১৪৩১   ২৩ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

যেভাবে ভ্রমণ করবেন হিমাচলের মানালি

প্রকাশিত : ০৬:৫৫ পিএম, ১০ মে ২০২২ মঙ্গলবার

যেভাবে-ভ্রমণ-করবেন-হিমাচলের-মানালি

যেভাবে-ভ্রমণ-করবেন-হিমাচলের-মানালি

ভারতের একটি অপূর্ব পাহাড়ি শহর মানালি। দেশটির হিমাচল প্রদেশের কুলু জেলার বিয়াস নদীর উপতক্যায় এর অবস্থান। পৌরাণিক দেবতা মনুর নাম অনুসারে মানালির নামকরণ করা হয়েছে। উঁচু-নিচু পাহাড়, নদী আর অপরুপ প্রকৃতি হানিমুন এবং শুটিং স্পটের জন্য বিখ্যাত। সমুদ্রপৃষ্ঠ থেকে ২০৫০ মিটার উচ্চতায় অবস্থিত মানালিতে আসা-যাওয়ার রাস্তাটি বিশ্বের সবচেয়ে উঁচু মোটরওয়ে হিসেবে স্বীকৃত।

চলুন আজ জেনে নেই মানালি ভ্রমণের আদ্যপান্ত

মানালিকে রয়েছে ‘ধারতি কা সওয়ার্গ’ বা  ‘পৃথিবীর স্বর্গ’ নামের সুখ্যাতি। আর এই সুখ্যাতির কারণে বিয়াস নদীর তীরের মানালিতে বছর জুড়ে থাকে বিপুল পর্যটকদের আনাগোনা।

মানালির দর্শনীয় স্থান

বলিউড, কলকাতাসহ ভারতের অসংখ্য ছবির শুটিং করা হয়েছে মানালিতে। নৈস্বর্গিক প্রাকৃতিক সৌন্দর্য্যের লীলাভূমি মানালিতে পর্যটকদের মুগ্ধ করার মতো অসংখ্য জায়গা রয়েছে।

রোথাং পাস: সমুদ্রপৃষ্ঠ থেকে প্রায় চার হাজার মিটার উচ্চতায় অবস্থিত রোথাং পাস মানালি শহর থেকে ৫১ কিলোমিটার দূরে অবস্থিত। মানালি থেকে পাহাড়ি আঁকা-বাঁকা সুন্দর রাস্তা ধরে প্রাকৃতিক দৃশ্য দেখতে দেখতে এখানে যেতে পারেন পর্যটকরা। সাদা বরফে ঢাকা বিশাল বিশাল পাহাড়ের সারির মাঝে স্কেটিং ও টবগ্যানিং করার মজা নিতে পারবেন এখানে। 

সোলাং ভ্যালী: মানালি থেকে ১৪ কিলোমিটার দূরে রয়েছে সোলাং ভ্যালী। রোথাং পাস যাওয়ার পথ ধরেই এখানে যাওয়া যায়। এডভেঞ্চার প্রেমীদের জন্য এখানে আছে প্যারাসুটিং, প্যারাগ্লাইডিং, স্কেটিং, জরবিং, বাঞ্জি ও জীপ লাইনের মতো নানা রকম বিনোদনের আয়োজন। প্রতিটি রাইডের জন্য জনপ্রতি ৪০০ রুপির মতো খরচ করতে হবে।

হিমাচলের মানালি। ছবি: সংগৃহীত

মানিকরন: কুল্লু থেকে ৪৪ কিলোমিটার দূরে মানিকরনের অবস্থান। মূলত ধর্ম-বর্ণ নির্বিশেষে সব মানুষের জন্য মানিকরন একটি তীর্থস্থান। গুরুদোয়ারা ও মহাদেব মন্দির, গরম পানির একটি নালা ছাড়াও এখানে অসংখ্য মন্দির রয়েছে।

হিড়িম্বা দেবি মন্দির: ১৫৫৩ সালে মহাভারতের পৌরাণিক চরিত্র ভিমের স্ত্রী হিড়িম্বাকে উৎসর্গ করে এই মন্দিরটি নির্মাণ করা হয়েছে। মন্দিরের চারপাশ বন বিহার ঘিরে রেখেছে।

বন বিহার: নিরিবিলি সময় কাটানোর জন্য বন বিহার একটি সুন্দর জায়গা। এখানে স্পিকারে সবসময় লো মেলডির সুন্দর গান বাজতে থাকে।

রেহালা জলপ্রপাত: রোথাং পাস থেকে ফেরার পথে পড়বে দেখা মিলবে চমৎকার ঝর্ণাটির। রেহালা ঝর্ণার পানি বিয়াস নদীতে গিয়ে মিশেছে।

গুলাবা: রেহালা ঝর্ণা থেকে একটু দূরে আছে গুলাবা। প্রাকৃতিক সুন্দর দৃশ্য ও বরফের মাঝে খেলার জন্য এটি একটি অন্যতম জনপ্রিয় স্থান। এখানে স্কিং করার সুযোগ রয়েছে।

বিয়াস নদী: মানালি শহরের গা ঘেঁষে বয়ে চলেছে বিয়াস নদী। এডভেঞ্চার প্রেমীদের জন্য ঠাণ্ডা হিম শীতল পানিতে রাফটিং করার সকল আয়োজন আছে এই নদীতে।

কুল্লু: কুল্লু মানালির একটি পাহাড় রাজ্য যেখানে মহাদেব মন্দির, বৈষ্ণব দেবি মন্দির, নাগার ক্যাসেল, হাঙ্গিং ব্রিজ ও সামস লেকের এর মতো জায়গা আছে।

হিমাচলের মানালি। ছবি: সংগৃহীত

মান্ডি: মান্ডিতে আছে পান্ডোহ ড্যাম যেখনে নদীতে বাধ দিয়ে বিদ্যুৎ উৎপাদন করা হয়।

রোয়েরিক আর্ট গ্যালারি: এক সময়ের বিখ্যাত রাশিয়ান চিত্রকর লিকোলাস রোয়েরিকের বাসভবনইটি বর্তমানে রোয়েরিক আর্ট গ্যালারিতে রূপান্তরিত করা হয়েছে।

এছাড়া সুযোগ পেলে মানালির ক্লাব হাউজ, মানু মন্দির, মানালি স্যাংচুরি, নাগার ক্যাসেল এবং জানা জলপ্রপাত ইত্যাদি জায়গাগুলো ঘুরে আসতে পারেন।

কিভাবে যাবেন

অনেকেই কলকাতা থেকে কলকা মেইল ট্রেনে সিমলা হয়ে মানালি ভ্রমণে যান। তবে এক্ষেত্রে দিল্লী হয়ে মানালি যাওয়ার রাস্তাটি বহুল প্রচলিত। আর সিমলা মানিলির ট্যুর একসাথে করলে শিমলা হয়ে ২৫৫ কিলোমিটার দূরত্বে মানালি যাওয়া ভালো। এক্ষেত্রে, শিমলা থেকে বাসে বা গাড়ি ভাড়া করে মানালি যেতে পারেন। মানালি যাওয়ার পথে কুল্লু, মান্ডি, সামস লেক, রাফটিং পয়েন্ট, পান্ডোহ ড্যাম, সুন্দর নগর, হনুমান টেম্পল ইত্যাদি জায়গাগুলোও দেখা হয়ে যাবে। বাসে গেলে এই জায়গাগুলোতে নামতে পারবেন না তাই গাড়ি ভাড়া করে যাওয়াই উত্তম।

কলকাতা থেকে ট্রেন বা বিমানে দিল্লী আসতে হবে। রাজধানী এক্সপ্রেস ট্রেন কলকাতা হতে দিল্লীতে যাওয়ার জন্য সবচেয়ে ভালো উপায়। দিল্লী থেকে মানালি যাওয়ার জন্য হিমাচল প্রদেশ ট্যুরিজম ডেভেলপমেন্ট কর্পোরেশনের বাস প্রতিদিন সন্ধ্যা সাড়ে ছয়টায় এবং সাড়ে সাতটায় দুটি বাস মানালির উদ্দেশ্যে যাত্রা করে। 

দিল্লীর কাশ্মীরি গেট বাস টার্মিনাল থেকে দিল্লির বিভিন্ন স্টেটের বাস পাওয়া যায়। মানালি যাওয়ার বাস বেলা ২.৩০ মিনিট থেকে রাত ৯ টা পর্যন্ত চলাচল করে। পাবলিক পরিবহনের মধ্যে হিমাচল এক্সপ্রেস হাইওয়ে আর প্রাইভেটের মধ্যে হিমাচল এসি ভোলভো এই দুটো বাস মানালিতে যায়। এছাড়া চাইলে প্রাইভেট কার ভাড়া করেও মানালি যেতে পারবেন।

আর বিমানে যেতে চাইলে ঢাকা থেকে স্পাইস জেট ও বিমান বাংলাদেশের সরাসরি দিল্লিগামী ফ্লাইট আছে। দিল্লি পৌঁছে ভারতের ইন্টারনাল রুটে ভূন্টার বিমানবন্দর আসতে হবে। মানালি থেকে ৫০ কিলোমিটার দূরে অবস্থিত এই বিমান বন্দরটির অন্য নাম কুলু-মানালি বিমান বন্দর। ভূন্টার বিমান বন্দর থেকে মানালি পৌঁছাতে ঘন্টাখানেক সময় লাগে।

হিমাচলের মানালি। ছবি: সংগৃহীত

কোথায় থাকবেন

রাত্রিযাপনের জন্য মানালির মল রোড, ওল্ড মানালি, নিঊ মানালি এবং হিড়িম্বা টেম্পলের কাছে বেশকিছু আবাসিক হোটেল আছে। হোটেল মোন্যাল, হোটেল হোয়াইট তারা, হোটেল ওকল্যান্ড, জোস্টেল, রয়্যাল ভিয় কটেজ, হোটেল প্রিমিয়ার, মেরিস কটেজ, হোটেল মোহিনী ক্লাসিক, রক সি, নোমাডিক রেস্টের মতো হোটেলে ৪০০-৮০০ টাকার মধ্যে দুইজনের থাকার রুম পেয়ে যাবেন। 

সম্ভাব্য খরচ

শিমলা থেকে গাড়ি ভাড়া করে ছয় থেকে সাত হাজার টাকার মধ্যে মানালি যেতে পারবেন। তবে গ্রুপ করে গেলে জনপ্রতি খরচ কম হবে। সীমিত অর্থ ব্যয়ে ঢাকা থেকে মানিলিত যেতে প্রায় পাঁচ হাজার টাকা খরচ হয়। মানালিতে খাওয়া দাওয়ার জন্য প্রতিদিন ২০০-২৫০ রুপি লাগে। সব মিলিয়ে মানালিতে যাওয়া, থাকা ও ঘোরাঘুরিসহ ৪ দিন ৩ রাত থাকতে জনপ্রতি ২০ হাজার টাকা খরচ হতে পারে।

হিমাচলের মানালি। ছবি: সংগৃহীত

কোথায় খাবেন

মানালিতে গুজরাটি, মাদ্রাজি, পাঞ্জাবি খাবারের পাশাপাশি বাঙ্গালি খাবারেরও ব্যবস্থা আছে। বাঙালি খাবার হোটেলের মধ্যে শান্তিনিকেতন হোটেল, হোটেল আদর্শ, নিউ আশাপুরি ভোজনালয় এবং আশাপুরি বাঙালি রেস্টুরেন্ট উল্লেখযোগ্য। আর খাবারের আইটেমের মধ্যে চিকেন মম, ট্রাইট কেক, পাপড়ি চাট, ভেলপুরি, পানিপুরি বা গোল গাপ্পা, ইডলি বা দোসা, আলু গোবি ও ধোকলা ইত্যাদি খাবার চেখে দেখতে পারেন।

মানালিতে শীতের কাপড় অনেক কম দামে পাওয়া যায়। তাই শীতের কাপড়ের জন্য মানালি থেকে কেনাকাটা করা সবচেয়ে ভালো ও সাশ্রয়ী।

ভ্রমণ পরামর্শ

মে থেকে অক্টোবর হচ্ছে মানালি যাওয়ার জন্য সবচেয়ে ভালো সময়। অন্যসময় মানালির আবহাওয়া অসম্ভব ঠাণ্ডা থাকে।

শুধু মানালি ভ্রমণের উদ্দেশে না গিয়ে সাথে সিমলা ঘুরে আসা ভালো, এতে কম খরচে দুইটি জনপ্রিয় শহর ঘোরা যাবে।

মানালিতে ঘুরে বেড়ানোর জন্য গাড়ি ছাড়া কোনো বিকল্প ব্যবস্থা নেই। তাই মানালি শহরের গাড়ি স্ট্যান্ড থেকে গাড়ি ভাড়া করতে অবশ্যই দরদাম করে নিন।