বুধবার   ২৭ নভেম্বর ২০২৪   অগ্রাহায়ণ ১৩ ১৪৩১   ২৫ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

বিএনপির ট্রামকার্ড, জাইমা নাকি সিঁথি?

প্রকাশিত : ০৫:০৫ পিএম, ৭ মে ২০২২ শনিবার

বিএনপির-ট্রামকার্ড-জাইমা-নাকি-সিঁথি

বিএনপির-ট্রামকার্ড-জাইমা-নাকি-সিঁথি

দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের চমক হিসেবে বিএনপির প্রথম পছন্দ ছিলেন দলটির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের সহধর্মিণী ডা. জোবায়দা রহমান। কিন্তু দুদকের (দুর্নীতি দমন কমিশন) করা মামলায় তিনি ঝুঁকির মধ্যে আছেন। সুপ্রিম কোর্ট রায়ে জোবায়দার মামলা চলবে। ফলে জোবায়দার আপাতত বিএনপির ট্রাম্পকার্ড হওয়ার সম্ভাবনা নেই। এই বাস্তবতায় নতুন চিন্তা ভাবনা করছে বিএনপি এবং এই নতুন চিন্তা ভাবনার মধ্যে তারেক জিয়ার মেয়ে জাইমা রহমান এবং প্রয়াত কোকোর স্ত্রী শর্মিলা রহমান সিঁথির নাম আলোচনায় আসছে। এর মধ্যে জাইমা রহমানের নামটি বেশি জনপ্রিয়তা পাচ্ছে বিএনপিতে।

১৪ বছরের বেশি সময় ধরে ক্ষমতার বাইরে থাকা বিএনপি দীর্ঘদিন ধরেই নেতৃত্বশূন্য অবস্থায় রয়েছে। খালেদা জিয়া কাগজে-কলমে বিএনপি চেয়ারপার্সন হলেও তিনি দলীয় কোন কর্মকাণ্ডে অংশগ্রহণ করতে পারছেন না। দুটি মামলায় ১৭ বছরের কারাদণ্ডে দণ্ডিত হয়ে তিনি এখন সরকারের কৃপায় জামিনে মুক্ত আছেন। কোনো রাজনৈতিক কর্মকাণ্ডে অংশগ্রহণ করছেন না।

অন্যদিকে, তারেক জিয়া লন্ডনে থেকে দল পরিচালনা করছেন। কিন্তু দেশে তার অনুপস্থিতির কারণে তার নেতৃত্ব বিএনপির মধ্যে কোনো প্রভাব ফেলতে পারছে না। এছাড়া তারেক জিয়ার এক ধরনের ইমেজ সঙ্কট রয়েছে। একজন রাজনৈতিক নেতার চেয়ে তাকে একজন দুর্বৃত্ত, দুর্নীতিবাজ হিসেবেই জনগণ বেশি চেনে। এ কারণেই তারেক জিয়ার নেতৃত্বে বিএনপি বড় ধরনের কোনো আন্দোলন করতে পারবে এমনটি বিএনপি নেতারাও এখন বিশ্বাস করে না।

অবশ্য বিএনপি নেতারা অন্যভাবে কথাটি বলেন। তারা মনে করেন যে, যেহেতু দেশে আন্দোলন করতে হবে। সে কারণে নেতৃত্ব দেশেই থাকতে হবে। আর এই বাস্তবতায় বিএনপি চিন্তাভাবনা করছে, নির্বাচনকেন্দ্রিক চূড়ান্ত আন্দোলনের যেকোনো একটি পর্যায়ে জিয়া পরিবারের কাউকে দেশে নিয়ে এসে চমক তৈরি করার চেষ্টা করা। কিন্তু সেই চমক প্রথমেই হোঁচট খেয়েছে।

দলীয় সূত্র জানায়,  এখন বিএনপির অনেকেই চাইছেন যে, জাইমা রহমানকে নির্বাচনের আগে আন্দোলনের জন্য দেশে নিয়ে আসা হোক এবং তার উপস্থিতি দলের নেতাকর্মীদের চাঙ্গা করবে, উদ্বুদ্ধ করবে, উৎসাহিত করবে। তবে সদ্য ব্যারিস্টার হওয়া জাইমা রহমান রাজনীতিতে কতটা আগ্রহী এবং বাংলাদেশে এসে তিনি কী করবেন এটি নিয়েও বিএনপির মধ্যে নানা রকম প্রশ্ন আছে।  

অন্যদিকে, সৈয়দা শর্মিলা রহমান সিঁথিকে নিয়েও আলোচনা হচ্ছে। তবে সিঁথি বিএনপির রাজনীতিতে কতটা টনিক হবেন সেটা নিয়েও বিএনপির কেন্দ্রিয় নেতাদের মধ্যে প্রশ্ন রয়েছে। তবে সিঁথির কিছু ইতিবাচক দিক রয়েছে। খালেদা জিয়া গ্রেফতার হওয়ার পর শর্মিলা রহমান কয়েকবার বাংলাদেশে এসেছিলেন এবং তিনি খালেদা জিয়ার সঙ্গে সাক্ষাৎ করেছেন। এছাড়া, বেগম জিয়া অসুস্থ হওয়ার পর সিঁথি এসে সেবা-শুশ্রূষা করেছেন। এসব কারণে বিএনপির মধ্যে তাকে নিয়ে ইতিবাচক ভাবমূর্তি তৈরি রয়েছে। তবে সিঁথির কোনো ক্যারিশম্যাটিক ইমেজ নেই এবং কোকো কখনো রাজনীতির পাদপ্রদীপেরও ছিলেন না। এই অবস্থায় সিঁথি বিএনপিতে বড় ধরনের কোনো গণজাগরণ সৃষ্টি করতে পারবে বলে দলটির নেতারা মনে করেন না।

রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা বলেন, নেতৃত্ব সংকটে ভুগতে থাকা বিএনপি ২০১৮ সালের নির্বাচনের আগে ড. কামাল হোসেনকে নেতা হিসেবে বেছে নিয়েছিল। কিন্তু সেটি যে বিএনপির ভুল ছিল তা বিএনপির নেতারা এখন প্রকাশ্যে স্বীকার করেন। এই বাস্তবতায় বিএনপি এখন দলের মধ্য থেকেই কাউকে নেতা হিসেবে খুঁজে পেতে চাচ্ছে।