বিএনপির ঈদ পরবর্তী আন্দোলন নিয়ে সংশয়ে বিশ্লেষকরা
প্রকাশিত : ০১:০৫ পিএম, ৪ মে ২০২২ বুধবার
বিএনপির-ঈদ-পরবর্তী-আন্দোলন-নিয়ে-সংশয়ে-বিশ্লেষকরা
দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আর বেশি দেরি নেই। তাই সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে দল গোছাতে মনোনিবেশ হতে দেখা গেছে বিভিন্ন রাজনৈতিক দলগুলোকে। ১৪ বছরের বেশি সময় ধরে রাষ্ট্রক্ষমতার বাইরে থাকা বিএনপিও দল গোছানোর পাশাপাশি রাজপথে আন্দোলন করার চেষ্টা চালাচ্ছে।
তবে বিশ্লেষকরা বলছেন, বিএনপি একটি সফল আন্দোলন করার চেষ্টা করছে ঠিকই, কিন্তু গত এক যুগ ধরে বিএনপি তার ইতিহাসের সবচেয়ে ক্রান্তিকাল সময় পার করছে। দিন যতই অতিক্রান্ত হচ্ছে সংকট তো কাটছেই না, বরং সময়ের সঙ্গে সঙ্গে তা আরো ঘনীভূত হচ্ছে। কর্মসূচি পালনের চেষ্টা বারবার করছে, কিন্তু এখন পর্যন্ত সফলতার স্বাদ পায়নি। বরং দল পুনর্গঠন প্রক্রিয়া শুরু করতে গিয়ে নেতাদের সঙ্গে হাইকমান্ডের সম্পর্কে অবনতি হয়েছে।
এর আগেও কয়েকবার বেশকিছু অপ্রাসঙ্গিক বিষয় নিয়ে বিএনপি আন্দোলনের হুংকার দিয়েছিল। সর্বশেষ গত ২২ এপ্রিল বিকেলে রাজধানীর লেডিস ক্লাবে জিয়াউর রহমান ফাউন্ডেশন (জেডআরএফ) আয়োজিত দোয়া ও ইফতার মাহফিলে সরকারকে উদ্দেশ্য করে মির্জা আব্বাস বলেন, যে বা যারা বলে বিএনপি আন্দোলন করে না, রোজা গেলে বুঝতে পারবেন আন্দোলন কাকে বলে! এরপর থেকে মূলত বিএনপির সরকারবিরোধী আন্দোলনের বিষয়টি আবার নতুন করে আলোচনায় আসে। তবে বিএনপির এ আন্দোলন নিয়ে সন্দেহ প্রকাশ করেছেন রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা। তাদের প্রশ্ন ঈদ পরবর্তী আন্দোলন নিয়ে কতটা প্রস্তুত বিএনপি?
বিএনপির নিকট অতীতে বেশকিছু ইস্যু নিয়ে আন্দোলন করেছিল। সেগুলো পর্যালোচনা করলেই প্রকৃত চিত্র উঠে আসবে। বিশ্লেষকরা বলছেন, তৃণমূল থেকে কঠোর আন্দোলনের দাবি তোলা হচ্ছে। শীর্ষ নেতারাও আন্দোলনের দাবিতে সায় দিয়ে কর্মীদের প্রস্তুত হতে বলছেন। কিন্তু অতীতের মতো এবারো আন্দোলনের হুংকার দিয়ে তা বাস্তবায়নে কতটা প্রস্তুত এক যুগের বেশি ধরে ক্ষমতার বাইরে থাকা বিএনপি?
বিশ্লেষকরা বলছেন, ২০১৪ সালে দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ব্যর্থ হয়েছে দলটি। পরে বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ ইস্যুতে হরতাল-অবরোধের মতো কর্মসূচি দিলেও সেখানে নেতাকর্মীদের সরব উপস্থিতি দেখা যায়নি। এমনকি ২০১৮ সালের ৮ ফেব্রুয়ারি বিএনপি চেয়ারপার্সন খালেদা জিয়াকে কারাগারে নেয়া এবং একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের পরও দলটি রাজপথে দুর্বার আন্দোলন গড়ে তুলতে পারেনি। এরপর খালেদা জিয়ার মুক্তি ও সুচিকিৎসার জন্য কঠোর আন্দোলনে নেমেছিল বিএনপি, গণঅনশন কর্মসূচিও পালন করেছিল। গণঅশন কর্মসূচিতে নেতাকর্মীদের মাঠে থাকার শপথ করিয়েছিলেন বিএনপির মহাসচিব। আন্দোলনে সফল না হওয়া পর্যন্ত ঘরে ফেরা যাবে না বলেও শপথ নিয়েছিলেন নেতাকর্মীরা।
কিন্তু রাজপথে আন্দোলনে কোনো জোয়ার আসেনি। সর্বশেষ চলতি বছরের মার্চ মাসের শেষ দিকে এবং এপ্রিলের প্রথমার্ধে দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতির ইস্যুতে মাঠে নেমেছিল তারা। সরকার পতনের আন্দোলনের ডাক দিলেও সেই হুংকারে কাজ হয়নি। বরং আন্দোলন ডেকে নেতাদের মাঠে না থাকার অভিযোগ উঠেছে কেন্দ্রীয় নেতৃত্বের বিরুদ্ধে। সুতরাং সার্বিক বিবেচনায় ঈদ পরবর্তী আন্দোলন নিয়ে কতটুকু প্রস্তুত বিএনপি, সেটাই এখন অবান্তর প্রশ্ন বলেই মনে করছেন বিশ্লেষকরা।