সোমবার   ২৫ নভেম্বর ২০২৪   অগ্রাহায়ণ ১০ ১৪৩১   ২৩ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

১৯ বছর পর ‘মৃত’ বাবা-মায়ের খোঁজ পেলেন মালয়েশিয়াপ্রবাসী

প্রকাশিত : ০৬:০০ পিএম, ২৩ এপ্রিল ২০২২ শনিবার

১৯-বছর-পর-মৃত-বাবা-মায়ের-খোঁজ-পেলেন-মালয়েশিয়াপ্রবাসী

১৯-বছর-পর-মৃত-বাবা-মায়ের-খোঁজ-পেলেন-মালয়েশিয়াপ্রবাসী

মাত্র ১৫ বছর বয়সে ২০০৪ সালে জীবিকার তাগিদে সিঙ্গাপুর পাড়ি জমান জিয়াউল হক। সেদেশ থেকে চলে যান মালয়েশিয়ায়। সেখানে থাকা অবস্থায় হোস্টেল থেকে পাসপোর্ট ও দেশের ঠিকানা চুরি হয়। এতে বাড়ির সঙ্গে যোগাযোগ করতে পারেননি তিনি। খবর পান মা-বাবা লঞ্চডুবিতে ডুবিতে মারা গেছেন। এরপর মালয়েশিয়ায় কেটে যায় এতগুলো বছর।

বর্তমানে ৩৪ বছর বয়সী জিয়াউল হক জানান, ২০০৪ সাল থেকেই মালয়েশিয়ার জহুর বারুতে কাজ করছেন তিনি। লেখাপড়া খুব একটা জানেন না। শুধু নাম লিখতে পারেন। মালয়েশিয়ায় আসার পর প্রথম প্রথম চিঠির মাধ্যমে বাবা-মায়ের সঙ্গে যোগাযোগ ছিল । তাও আবার আরেকজন লিখে দিতেন। এজন্য তাকে দিতে হতো অর্থ। কিছুদিন যাওয়ার পর জিয়াউল যে কোম্পানিতে কাজ করতেন ঐ কোম্পানির হোস্টেল থেকে যাবতীয় মালামাল চুরি হয়ে যায়।

২০০৮ সালে গাজীপুরের এক প্রবাসী বাংলাদেশে যাবেন খবর শুনে ঐ ব্যক্তিকে ৫০ হাজার টাকা দেন যাতে দেশে গিয়ে তার বাবা-মাকে খুঁজে বের করেন। গাজীপুরের লোক দেশে গেলেন। কয়েকদিন পর জিয়াউলকে ফোন করে বললেন, আপনার বাবা-মা লাকসাম থেকে ঢাকা যাওয়ার পথে লঞ্চডুবিতে মারা গেছেন।

জিয়াউল কয়েকদিন কান্নাকাটি করে পরিবারের কথা ভুলে গিয়ে কাজে মনোযোগ দিলেন। এরই মধ্যে ২০১৪ সালে জহুর বারুতে ইজা নামে মালয়েশিয়ান মেয়েকে বিয়ে করেন। তিনি ফাতিহা ইজারা নামের সাত বছর ও ফায়হা ইনারা দুই বছরের দুটি কন্যাশিশুর জনক।

জিয়াউল হক আরো জানান, বিয়ের পরপর তিনি চাকরি ছেড়ে জহুর বারুতে শুরু করেন কার ওয়াসের ব্যবসা। ভালোই চলছিল তার দিন। কিন্তু নাড়ির টানে কাজে মন বসে না। সিদ্ধান্ত নিলেন যে করেই হোক দেশে যাবেন, প্রিয়জনকে খুঁজে বের করবেন। তার মন বলছে বা-মা, ভাই-বোন সবাই বেঁচে আছেন। কিন্তু যাবেন কীভাবে? তার কাছে নেই পাসপোর্ট। নেই দেশের আইডেন্টিটি।

জিয়াউল নতুন পাসপোর্ট করতে মালয়েশিয়াস্থ বাংলাদেশ দূতাবাসে এসে তার বিস্তারিত ঘটনা বললে পাসপোর্ট শাখার একজন কর্মকর্তা তাকে রোহিঙ্গা বলে তাড়িয়ে দেন। জিয়াউল দূতাবাস থেকে বের হয়ে প্রতিজ্ঞা করলেন, তিনি বাংলাদেশের নাগরিক তা প্রমাণ করবেনই।

এরপর চলে গেলেন, জহুর বারু। দেখা করলেন কমিউনিটি নেতা মোস্তাফা হোসাইনের সঙ্গে। বিস্তারিত বললেন। কমিউনিটি নেতা মোস্তাফা হোসাইন তাকে আশ্বস্ত করলেন, জিয়াউলের পরিবারকে খুঁজে বের করবেন। যেমন আশ্বাস তেমন কাজ। মোস্তাফা হোসাইন জিয়াউল হকের কাছ থেকে তার গ্রামের বাড়ি কুমিল্লা লাকসামের ঠিকানা অনুযায়ী একজন লোক পাঠালেন। এক সপ্তাহের মধ্যে জিয়াউলের বাড়ির সন্ধান মিললো। কথা হলো তার চাচির সঙ্গে। তাও মোবাইলের মাধ্যমে। বিস্তারিত খুলে বলার পর জিয়াউলের চাচি তাকে চিনলেন। জিয়াউল যখন মালয়েশিয়া আসেন তখন তার বাবা নূরুল আমিন কমলাপুর রেলস্টেশনে কাজ করতেন। স্টেশনের স্টাফ কোয়ার্টারেই থাকতেন। এখন পেনশনে রয়েছেন তার বাবা। গ্রামের বাড়ি বিক্রি করে গাজীপুরে বাড়ি করেছেন। চার ভাই ও চার বোনের মধ্যে জিয়াউল ছিলেন সবার বড়। তিন ভাই ও তিন বোন বিয়ে করে সংসারি হয়েছেন।

ছোট্ট একটি বোন সুলতানা এখনো লেখাপড়া করছে। এখন প্রতিদিন বাবা-মা, ভাই-বোনদের সঙ্গে কথা হয় জিয়াউলের। বাবা অসুস্থ। চিকিৎসার জন্য বাবাকে টাকা পাঠিয়েছেন। জিয়াউলের দেশের পরিচয় মিললো। তার বাবা-মা পরিবারকে ফিরে পেলেন। এরই মধ্যে জিয়াউলের বাবা তার জন্মসনদ নাগরিকত্ব সনদ সত্যায়ন করেছেন। পাঠিয়েছেন দূতাবাসের মেইলে। জিয়াউল এখন দেশে ফেরার অপেক্ষায়!