বৃহস্পতিবার   ২৮ নভেম্বর ২০২৪   অগ্রাহায়ণ ১৩ ১৪৩১   ২৬ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

দ্বাদশ জাতীয় নির্বাচন ঘিরে দল ভাঙার শঙ্কায় বিএনপি

প্রকাশিত : ০৪:০৫ পিএম, ২৩ এপ্রিল ২০২২ শনিবার

দ্বাদশ-জাতীয়-নির্বাচন-ঘিরে-দল-ভাঙার-শঙ্কায়-বিএনপি

দ্বাদশ-জাতীয়-নির্বাচন-ঘিরে-দল-ভাঙার-শঙ্কায়-বিএনপি

আসন্ন দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে বিএনপি অংশ নেবে কি না সেই নিশ্চয়তার আগেই দল ভাঙার শঙ্কা দেখা দিয়েছে। সাম্প্রতিক দলের হাইকমান্ডের বেশ কয়েকটি সিদ্ধান্তে এ অবস্থা স্পষ্ট হয়ে উঠছে।

ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের অধীনে নির্বাচনে অংশগ্রহণ না করার সিদ্ধান্ত নেওয়ায় এই শঙ্কা করছেন বিএনপির নেতারা। তবে শঙ্কা থেকে বিএনপির শীর্ষ নেতৃত্বে থাকা আস্থাভাজন কয়েকজন নেতাকে নজরদারি করার দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। দলের কে কোথায় যাচ্ছেন, কার সঙ্গে কথা বলছেন, কোন প্রোগ্রামে অংশ নিচ্ছেন- সবই পর্যবেক্ষণ করা হচ্ছে।

বিএনপির নীতিনির্ধারণী ফোরাম স্থায়ী কমিটির সদস্যদের সঙ্গে আলাপে জানা গেছে, নির্বাচনে অংশ না নিলেও বিএনপির বেশ কিছু নেতা নির্বাচনমুখী হতে পারেন। গত দুই বছরে যেসব গুরুত্বপূর্ণ নেতাকে নানা কারণে দল থেকে সরিয়ে দেওয়া হয়েছে বা পদাবনতি দেওয়া হয়েছে, সেই নেতাদের ঘিরে বিএনপিতে আশঙ্কার সৃষ্টি হয়েছে।

তাদের মধ্যে উল্লেখযোগ্য হচ্ছেন বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান সাংবাদিক নেতা শওকত মাহমুদ।

সর্বশেষ ঢাকায় প্রেস ক্লাবের সামনে বিক্ষোভ সমাবেশ করায় চলতি মাসের ৫ এপ্রিল শওকত মাহমুদের কাছে ব্যাখ্যা চেয়েছে দল। এ বিষয়ে শওকত মাহমুদ বলেন, দল আমার কাছে ব্যাখ্যা চেয়ে চিঠি দিয়েছিল। আমি সেই চিঠির ব্যাখ্যা দিয়েছি। কিন্তু যেহেতু দলও চিঠির বিষয়বস্তু উল্লেখ করেনি, তাই আমিও আমার ব্যাখ্যার বিষয় উল্লেখ করবো না।

অনুমতি ছাড়া সমাবেশ করায় শওকত মাহমুদকে বেশ কয়েকবার শোকজ করা হয়। ২০২০ সালের ১৩ ডিসেম্বরও শওকত মাহমুদকে কারণ দর্শানোর নোটিশ দেওয়া হয়েছিল।

২০২১ সালের ২৫ ডিসেম্বর তৈমুর আলম খন্দকারকে আহ্বায়কের পদ থেকে সরিয়ে আরেক নেতাকে ‘ভারপ্রাপ্ত আহ্বায়ক’ করা হয়। দলের সিদ্ধান্ত অমান্য করে নারায়ণগঞ্জ সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনে অংশগ্রহণ করায় চলতি বছরের ৩ জানুয়ারি চেয়ারপার্সনের উপদেষ্টার পদ থেকে সরিয়ে নেয়া হয় তৈমুর আলমকে। নির্বাচনের পর ১৮ জানুয়ারি দলের প্রাথমিক সদস্যপদও হারান তিনি। তাই যে নেতাকেই সন্দেহজনক মনে হয়, তার বিরুদ্ধে কঠোর অবস্থান নিয়েছে হাইকমান্ড।

তৈমুর আলম খন্দকার জানিয়েছেন, নির্বাচনের পরিবেশ সৃষ্টি হলে তিনি সেই নির্বাচনে অংশগ্রহণ করবেন। তবে তার ভাষ্য অনুযায়ী বর্তমান ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের অধীনে তিনি কোনো নির্বাচনে অংশগ্রহণ করবেন না।

নির্বাচনের আগে যাদের ঘিরে সন্দেহ বিএনপির, তাদের মধ্যে অন্যতম সাবেক কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক নজরুল ইসলাম মঞ্জু। গত বছরের ৯ ডিসেম্বর খুলনা মহানগর বিএনপির কমিটি থেকে তিনি ও তার অনুসারীরা বাদ পড়লে সংবাদ সম্মেলন করেন। এরপর ডিসেম্বরের মাঝামাঝি তাকে সাংগঠনিক সম্পাদকের পদ থেকে অব্যাহতি দেয় বিএনপি।

গত ৫ এপ্রিল বিএনপি জোট সরকারের শিক্ষা প্রতিমন্ত্রী আ ন ম এহসানুল হক মিলনকে দলের আন্তর্জাতিক বিষয়ক সম্পাদকের পদ থেকে নির্বাহী সদস্য করা হয়। তাকে নিয়েও দলের বিভিন্ন ধরনের আলোচনা রয়েছে। স্থায়ী কমিটির একজন সদস্যের দাবি, আমেরিকায় বিএনপিকে সংগঠিত করতে এহসানুল হক মিলনকে দায়িত্ব দেয়া হলে সেখান থেকে অভিযোগ আসে। সেই অভিযোগের পর দলের হাইকমান্ড তার পদাবনতি দেন।

প্রভাবশালী দায়িত্বশীলের দাবি, বিএনপি নেতা শওকত মাহমুদ, কল্যাণ পার্টির চেয়ারম্যান সৈয়দ মুহাম্মদ ইবরাহিমের সঙ্গে ঘনিষ্ঠতার কারণে পদাবনতি দেওয়া হয়েছে। যদিও মিলনের ঘনিষ্ঠ একটি সূত্রের বক্তব্য- দলের পলিসির বাইরে যেসব নেতা ব্যাংকক ও আমেরিকায় বিভিন্ন বৈঠকে অংশগ্রহণ করেছেন, তারা দলে সমাদৃত হয়ে আছে।

এসব বিষয়ে এহসানুল হক মিলন বলেন, দলের অবমাননা যারা করে, ক্ষেত্র বিশেষে তাদের জন্য এটা প্রযোজ্য। এটা হতে পারে। কিন্তু আমার বিষয়টি আলাদা। যারা ঘর গড়ে, তারা ঘর ভাঙে না। আমি এই দলে জন্মেছি, জন্ম দিয়েছি। জন্মলগ্ন থেকে গত ৪২ বছর ধরে বিএনপিতে আছি। ফলে আমার বিষয়টি অন্য কারো সঙ্গে মিলবে না।