লোহার কুঠি : বাংলার যে ঘরে থেকেছেন অসংখ্য প্রথিতযশা
প্রকাশিত : ১০:৫৫ এএম, ২১ মার্চ ২০২২ সোমবার
লোহার-কুঠিবাংলার-যে-ঘরে-থেকেছেন-অসংখ্য-প্রথিতযশা
বলা হচ্ছে, ১৩২ বছর আগে নির্মিত আলেকজান্ডার বা আলেকজান্দ্রা ক্যাসলের কথা। লোহার ব্যবহার বেশি থাকায় স্থানীয়ভাবে এ স্থাপনাকে বলা হয় লোহার কুঠি। ১৮৮৯ সালে মুক্তাগাছার জমিদার মহারাজা সূর্যকান্ত আচার্য চৌধুরী এটি নির্মাণ করেছিলেন। তবে বর্তমানে এটি ময়মনসিংহ টিচার্স ট্রেনিং কলেজের গ্রন্থাগার হিসেবে ব্যবহৃত হচ্ছে।
ব্রহ্মপুত্র নদের পাড় জয়নুল আবেদিন উদ্যানের কাছাকাছি হওয়ায় প্রতিদিন বৈকালিক ভ্রমণে অসংখ্য মানুষ এ প্রাসাদ দেখতে আসেন। দূরদূরান্ত থেকে ময়মনসিংহে আসা লোকজনও সুযোগ পেলে এ প্রাসাদ দেখতে যান। লোহা ও কাঠ দিয়ে নির্মাণ করা প্রাসাদটি বর্তমানে ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে উঠেছে।
উইকিপিডিয়ার মতে, ১৭৮৭ সালে ময়মনসিংহ জেলা প্রতিষ্ঠিত হয়। জেলার শতবর্ষ উৎসব পালনের জন্য ১৮৮৯ সালে এটি নির্মিত হয়। সপ্তম এডওয়ার্ডের পত্নী আলেকজান্দ্রার নামে এটি নির্মাণ করা হয়। মতান্তরে তৎকালীন ইংরেজ কালেক্টর আলেকজান্ডারের নামে এটি নির্মাণ করা হয়। সে সময় এর নির্মাণ ব্যয় ছিল ৪৫ হাজার টাকা। প্রাসাদটি নানা রকম আসবাবে সুসজ্জিত করা হয়। দ্বিতল এ প্রাসাদের নিচতলা বর্তমানে ময়মনসিংহ টিচার্স ট্রেনিং কলেজের গ্রন্থাগার।
প্রাসাদটি মুক্তাগাছার জমিদার মহারাজা সূর্যকান্ত আচার্য চৌধুরীর বাগানবাড়ি হিসেবে ব্যবহৃত হতো। পাশাপাশি বিদেশি অতিথিরা ময়মনসিংহে এলে এ প্রাসাদে থাকতেন। জমিদারি বিলুপ্তির পর এখানে সম্ভ্রান্ত অতিথিরা থেকেছেন। ১৯২৬ সালে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর ময়মনসিংহে এলে চার রাত এ লোহার কুঠিতে থাকেন। একই বছর আসেন মহাত্মা গান্ধী। এ ছাড়া লর্ড কার্জন, চিত্তরঞ্জন দাস, নবাব স্যার সলিমুল্লাহ, কামাল পাশা, মৌলভি ওয়াজেদ আলী খান পন্নী ও নেতাজি সুভাষ চন্দ্র বসু এ লোহার কুঠিতে থেকেছেন।
জানা যায়, মিয়ানমার থেকে সেগুনকাঠ ও চীন থেকে কারিগর এনে এটি নির্মাণ করা হয়। ভারত থেকে অভ্র এনে প্রাসাদটিতে শীতাতপ নিয়ন্ত্রণের ব্যবস্থা করা হয়।
ভ্রমণপিপাসু মানুষের অভিযোগ, ১৩২ বছরের ঐতিহ্যবাহী এ প্রাসাদ যথাযথ সংরক্ষণের অভাবে নষ্ট হচ্ছে। প্রাসাদটি ঘিরে কোনো সীমানাপ্রাচীর না থাকায় এটি অরক্ষিত অবস্থায় আছে। দিনরাত উঠতি বয়সীরা এখানে বসে আড্ডা দেয়। এমনকি রাতের আঁধারে প্রাসাদটির বারান্দায় বসে বখাটেদের মাদক সেবন করার ঘটনাও ঘটে।