সোমবার   ২৫ নভেম্বর ২০২৪   অগ্রাহায়ণ ১১ ১৪৩১   ২৩ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

রহস্যময় জমিদার বাড়ি

প্রকাশিত : ০৪:৫৫ পিএম, ১৫ মার্চ ২০২২ মঙ্গলবার

রহস্যময়-জমিদার-বাড়ি

রহস্যময়-জমিদার-বাড়ি

একদিন আহাদ ভাইকে নিয়ে বের হলাম। উদ্দেশ্য সাপলেজা কুঠিবাড়ি। পিরোজপুর জেলার মঠবাড়িয়া সদর থেকে আটো রিকশা যোগে প্রায় ২০-২৫ মিনিটের মধ্যেই পৌঁছে গেলাম আমরা।

আমরা ঘুরে ঘুরে দেখতে লাগলাম। বিশাল জায়গা নিয়ে নির্মিত এই প্রাসাদ। যেন প্রতিটি ইটে লুকিয়ে আছে ইতিহাস। লোকমুখে আমরা জেলার সম্ভাবনাময় প্রত্নসম্পদ মঠবাড়িয়ার সাপলেজা কুঠিবাড়ির সম্পর্কে কিছু ইতিহাস জেনে নিলাম।

জানা যায়, আনুমানিক ১৮ শতকের গোড়ায় জনৈক ইংরেজ জমিদার এডওয়ার্ড প্যারি ক্যাসপার এ কুঠিবাড়ি নির্মাণ শুরু করেন। সোয়া নয় একর জমির উপর নির্মিত হয় ক্যাসপারের কুঠিবাড়ি । কথিত আছে, মি. ক্যাসপার ঘটনাক্রমে সাপলেজা ভ্রমণকালে স্থানীয় ধনাঢ্য ফরাজউল্লাহ তাকে সম্মানিত করতে উক্ত জমি উপহার দেন। 

জনৈক ইংরেজ জমিদার এডওয়ার্ড প্যারি ক্যাসপার এ কুঠিবাড়ি নির্মাণ শুরু করেন।

পরবর্তীকালে এখানে ক্যাসপারের জমিদারী সম্প্রসারিত হয়। প্যারি ক্যাসপারের উপস্থিতিতে প্রতিবছর পৌষ মাসের শেষভাগে কুঠিবাড়িতে পুণ্যাহ উৎসব উপলক্ষে খাজনা আদায়সহ প্রজাদের মনোরঞ্জনে বিভিন্ন অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হতো। এর মধ্যে যাদু প্রদর্শনী, লোকগান, যাত্রা ও নিমাই সন্ন্যাস পালায় প্রচুর লোক সমাগম হতো। 

কুঠিবাড়ির মূল ভবন নির্মাণে প্রচলিত ধারার ব্রিটিশ স্থাপত্যরীতিতে চৌ-কোণাকৃতির ১৮টি খিলানের উপর দোতলা পর্যন্ত সম্প্রসারিত ছিল। এ ছাড়া অন্যান্য স্থাপনা ও বড় একটি পুকুর। কুঠিবাড়ির উপরের তলায় প্যারি ক্যাসপারের ব্যক্তিগত ব্যবহৃত মূল্যবান সামগ্রী ও তৈজসপত্র ছিল।

১৯৪৭ সালের ভারত বিভাগের পর ব্রিটিশরা চলে গেলে ভবন ও সম্পত্তি তখনকার সরকারের নিয়ন্ত্রণে চলে যায়। অজ্ঞাত কারণে ভেঙ্গে দেয়া হয় মূল ভবনটির দোতলার সম্পূর্ণ অংশ। তখন এ অংশে রক্ষিত মূল্যবান মালামাল বেহাত হয়ে যায়। লিখিত আকারে এই ভবনের বিস্তারিত ইতিহাস না পাওয়ায় এডওয়ার্ড প্যারি ক্যাসপার ও তার জমিদারী বিষয়, ব্যক্তিগত জীবন, ভবনের নির্মাণশৈলী ইত্যাদি সম্পর্কে তেমন জানা যায়নি। ধারণা করা হয় ব্রিটিশ আর্কাইভ বা কোনো প্রকাশনায় কুঠিবাড়ির তথ্য লিপিবদ্ধ রয়েছে। 

সাপলেজা কুঠিবাড়ি।

স্থানীয় বাসিন্দাদের কাছে ক্যাসপারের ব্যবহৃত যে দুটি তরবারিসহ কিছু তৈজসপত্র ছিল তাও এখন নিখোঁজ। বর্তমানে কুঠিবাড়িটি ২০০ বছরের ঐতিহ্য নিয়ে অযত্ন-অবহেলায় দাঁড়িয়ে আছে। শানবাঁধানো ঘাটসহ পুকুর জৌলুশহীন। কুঠিবাড়ির তৎকালীন ম্যানেজার সুরেন্দ নাথ সুর ও নায়েব সতীশ চন্দ্রর কোনো বংশধরের খোঁজ পাওয়া যায় না। প্রথমে ক্যাসপার সাহেবের মূল বাড়ি সংস্কার করে ও পরিবর্তন করে ইউনিয়ন ভূমি অফিস (তহসীল অফিস) হিসেবে ব্যবহার করা হয়। 

একই জমিতে অন্য স্থানে নতুন ভূমি অফিস ভবন নির্মিত হওয়ায় ক্যাসপারের বাড়িটি বর্তমানে পরিত্যক্ত তবে স্থানীয় ডাকঘরটি ক্যাসপারের পিতা শিলার সাহেবের নামে এখনও শিলারগঞ্জ নামে পরিচিত।

প্রাসাদটি সংরক্ষণের অভাবে ধ্বংসের দ্বারপ্রান্তে। সঠিক সংস্কার করলে বহু বছর টিকে থাকবে প্রাসাদটি।