সোমবার   ২৫ নভেম্বর ২০২৪   অগ্রাহায়ণ ১১ ১৪৩১   ২৩ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

মন্ত্রমুগ্ধ প্রকৃতির সান্নিধ্য ‘সুরঞ্জনা’

প্রকাশিত : ০২:৫৫ পিএম, ৭ মার্চ ২০২২ সোমবার

মন্ত্রমুগ্ধ-প্রকৃতির-সান্নিধ্য-সুরঞ্জনা

মন্ত্রমুগ্ধ-প্রকৃতির-সান্নিধ্য-সুরঞ্জনা

ভরদুপুরে পাখপাখালির ডাক। দুই দিকে সবুজ বনের বুক চিড়ে সাপের মতো একেবেঁকে কাঠের সড়ক এগিয়েছে বনের গহীনে। সেই পথ ধরে বনে হারিয়ে যাওয়া, প্রকৃতি প্রেমীদের কাছে সত্যি এ এক অভাবনীয় অনুভূতি। 

ইকোট্যুরিজমের উন্নয়নের লক্ষে বরগুনায় সম্প্রতি তৈরি হয়েছে 'সুরঞ্জনা' নামে এমনই এক ইকোপার্ক।

বরগুনা সদর উপজেলার ঢলুয়া ইউনিয়নের বরইতলা সংলগ্ন বিষখালী ও খাকদোন নদীর মোহনায় গড়ে ওঠা সুরঞ্জনা ইকোপার্কে এখন রীতিমত দর্শনার্থীদের ভীড় জমতে শুরু করেছে। প্রকৃতিপ্রেমী ও ভ্রমনপিপাসু বিভিন্ন শ্রেণিপেশার মানুষ প্রতিদিনই এখানে বেড়াতে আসছেন। 

এখানে রয়েছে প্রাণ-প্রকৃতির অবাধ বিচরণ। ছৈলা, গোল পাতা, কেওড়াসহ নানা ধরনের বনজ বৃক্ষে ভরপুর দৃষ্টিনন্দন এই ইকোপার্কটি। পার্কটির ঠিক মাঝখানে বসানো হয়েছে বিশালাকারের একটি কুমির ও একটি কাঁকড়ার অবয়ব। এছাড়াও রয়েছে বাঘ, সিংহ, হরিণ, বক, জিরাফ, কুমিরসহ বেশকিছু জীবজন্তুর অবয়ব। 

ছৈলা, গোল পাতা, কেওড়াসহ নানা ধরনের বনজ বৃক্ষে ভরপুর দৃষ্টিনন্দন এই ইকোপার্কটি।

শুধু অবয়বই নয় এখানে জল ও স্থলে রয়েছে নানা রকমের জীবন্ত প্রাণীর বাস। পাখি, শৃগাল, বেজি, কাঠবিড়ালি, গুইশাপ, কাকড়া, গিরগিটিসহ নানা প্রাণীর দেখা মিলবে এখানে।

ইকোপার্কটির নির্মাণকাজ এখনো পুরোপুরি সম্পন্ন হয়নি। তারপরও পার্কটিতে প্রবেশের পর এখনই নিখাঁদ প্রকৃতির আবেশে মন্ত্রমুগ্ধ হয়ে যাচ্ছেন দর্শনার্থীরা। প্রকৃতিকে উপভোগ করতে করতে এখানে আসা দর্শনার্থীরা মনের আনন্দে কেউ নৃত্য করেন, কেউ আবৃত্তি, কেউবা আনমনে গেয়ে ওঠেন গান।

রয়েছে বাঘ, সিংহ, হরিণ, বক, জিরাফ, কুমিরসহ বেশকিছু জীবজন্তুর অবয়ব।

যাতায়াত :

ঢাকা থেকে বিকেল ৫টায় বরগুনা উদ্দেশ্যে লঞ্চ ছেড়ে যায়। লঞ্চে জনপ্রতি ডেক ভাড়া ৪০০ টাকা। ডাবল কেবিন ২৪০০ টাকা। সিঙ্গেল কেবিন ১৬০০ টাকা। আর বাসে গেলে গাবতলী বা সায়েদাবাদ থেকে ভাড়া লাগবে জনপ্রতি ৫০০-৬০০ টাকা। সকাল ৮টার মধ্যে এসব লঞ্চ বা বাস বরগুনা পৌঁছাবে। সেখানে পৌঁছে হোটেল নিন। ফ্রেশ হয়ে বেরিয়ে পড়ুন ভ্রমণে। বরগুনা পৌর সুপার মার্কেটের সামনে থেকে আটোরিকশা রিজার্ভ করে যাওয়া যাবে সুরঞ্জনা ইকোপার্কে। ছয় থেকে সাতজন যাওয়া যাবে একটি অটোতে। রিজার্ভ নিলে ভাড়া লাগবে ১০০ থেকে ১২০ টাকা। জনপ্রতি হিসেবে লাগবে ২০ থেকে ৩০ টাকা।


থাকা-খাওয়া ও প্রয়োজন :

এই ইকোপার্কটি এখনও ভ্রমণ কেন্দ্র হিসেবে খুব বেশি পরিচিত হয়ে ওঠেনি। তাই থাকার মতো বিলাসবহুল হোটেল বা রিসোর্ট নেই এখানে। তবে পার্কটির ভেতরে প্রাকৃতিক পরিবেশের মধ্যে ছোট ছোট দোকান, বিখ্যাত মাটির কাপের মটকা চায়ের দোকান ও ছোট রেস্তরাঁ রয়েছে। যেহেতু রিসোর্ট নির্মানের কাজ চলমান তাই আপনাকে থাকতে হবে বরগুনা শহরে আবাসিক হোটেল, ডাক বাংলো, এনজিও রেস্ট হাউসে। 

রয়েছে বাঘ, সিংহ, হরিণ, বক, জিরাফ, কুমিরসহ বেশকিছু জীবজন্তুর অবয়ব।

চাইলে ইকোপার্কটির পাশেই স্থানীয়দের বাড়িতে পারিবারিক পরিবেশে অল্প টাকায় খাওয়ার ব্যবস্থা করে নিতে পারবেন। তৃপ্তি পেতে অবশ্যই স্থানীয় নদনদীর তাজা মাছের সাথে মোটা চালের ভাত খাবেন। আর হ্যা, বরগুনা শহরের নামকরা আলাই পট্টির আমিত্তি, জিলাপি, মিষ্টি ও রুটি খেতে ভুলবেন না যেন। 

বরগুনায় রাত কাটানোর পরদিন বিকেল ৩টার লঞ্চে বা সন্ধ্যা ৭টার বাসে ফিরতে পারেন ঢাকা। তাই এই দিন দুপুর পর্যন্ত সময়টিও কাটাতে পারেন ভ্রমণে। ডিঙি নৌকা বা স্পিডবোটে ঘুরতে পারেন বিষখালী ও খাকদোন নদীর বুকে। যেতে পারেন তালতলীর টেংরাগিরি, শুভসন্ধ্যা কিংবা পাথরঘাটার হরিণঘাটা, লালদিয়া ও বিহঙ্গ দ্বীপে।