শুক্রবার   ১৫ নভেম্বর ২০২৪   অগ্রাহায়ণ ১ ১৪৩১   ১৩ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

অভিভাবকশূন্য, দিশাহীন হেফাজতে ইসলাম

প্রকাশিত : ০৪:০৫ পিএম, ৪ মার্চ ২০২২ শুক্রবার

অভিভাবকশূন্য-দিশাহীন-হেফাজতে-ইসলাম

অভিভাবকশূন্য-দিশাহীন-হেফাজতে-ইসলাম

একের পর এক সিনিয়র নেতাদের মৃত্যু, কেন্দ্রীয় নেতারা জেলে থাকায় হেফাজতে ইসলাম এখন অনেকটাই অভিভাবকশূন্য ও দিশাহীন। এছাড়াও ইসলামী আদর্শ থেকে বিচ্যুতির অভিযোগে শীর্ষ নেতাদের দলত্যাগসহ বিভিন্ন বিতর্কিত কর্মকাণ্ড মিলিয়ে একপ্রকার অস্তিত্বহীনতায় ভুগছে এ সংগঠনটি।

রাজনীতি না করার শর্তে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামালের কাছে কেন্দ্রীয় নেতাদের জামিন চেয়েছিলেন হেফাজত নেতারা। তবে এত সহজে বিশ্বাস করার মতো কোনো দৃষ্টান্ত বা নজির হেফাজতে ইসলাম এখনো স্থাপন করতে পারেনি বলে মনে করছেন বিশ্লেষকরা।

তারা বলছেন, সিনিয়র নেতাদের মৃত্যু, গ্রেফতার এবং জনপ্রিয় নেতাদের পদত্যাগের ফলে অতীতের যেকোনো সময়ের চেয়ে দুর্বল অবস্থানে থাকলেও সংগঠনটি ভেতরে ভেতরে রাজনৈতিক কর্মকাণ্ড চালানোর আশঙ্কা অমূলক নয়।

তারা বলেন, কদিন আগেও কওমি মাদরাসাভিত্তিক সংগঠন হেফাজতের ঘোষিত যেকোনো কর্মসূচিতে সারাদেশে কিছু সময়ের জন্য হলেও একটা সংকট তৈরি করতো। আট বছর আগে ঢাকায় শাপলা চত্বরে উত্থান হওয়া হেফাজতের তাণ্ডবে দেশে সাময়িক অচলাবস্থা সৃষ্টি হয়েছিল। বঙ্গবন্ধুর ভাস্কর্য, মোদিবিরোধী আন্দোলনসহ বিভিন্ন দাবিতে রাস্তায় বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করতো হেফাজত। বিশেষ করে হেফাজতের আমির আহমেদ শফির মৃত্যুর পর জুনায়েদ বাবুনগরী যখন আমির হয়েছিলেন, তখন হেফাজত সরকারের বিরুদ্ধে একের পর এক কর্মসূচি গ্রহণ করা হয়েছিল।

হেফাজতের সাবেক যুগ্ম-মহাসচিব মামুনুল হকের নারী কেলেঙ্কারিতে সংগঠনটির নেতাদের বিরুদ্ধে নীতি-নৈতিকতা নিয়ে নতুন করে প্রশ্ন উঠে। এছাড়া মামুনুল হকের বিরুদ্ধে ছেলে বলাৎকারের অভিযোগও উঠে। পাশাপাশি হেফাজতে ইসলাম আদর্শ থেকে বিচ্যুত হয়েছে, মওদুদীর সালাফিবাদের চর্চা করছে এবং দেশের শান্তি-শৃঙ্খলা এবং স্বাধীনতাবিরোধী কর্মকাণ্ড চালাচ্ছে- এমন সব অভিযোগ তুলে হেফাজতের নায়েবে আমির মাওলানা আবদুল্লাহ মোহাম্মাদ হাসানসহ অনেকেই গণহারে পদত্যাগ করেছিলেন। 

আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসার এক বছর পর অর্থাৎ ২০১০ সালের ১৯ জানুয়ারি আত্মপ্রকাশ হয় কওমি মাদরাসাভিত্তিক সংগঠন হেফাজতে ইসলামের। এর প্রতিষ্ঠাতা আমির ছিলেন প্রবীণ ধর্মীয় ব্যক্তিত্ব শাহ আহমদ শফী এবং মহাসচিব ছিলেন জুনায়েদ বাবুনগরী। ২০১১ সালে সরকার ‘নারী উন্নয়ন নীতিমালা’ ঘোষণা করলে হেফাজতে ইসলাম প্রকাশ্যে এর বিরোধিতা করে। তবে ২০১৩ সালে একাত্তরের যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের দাবিতে গণজাগরণ মঞ্চের আন্দোলন শুরু হলে হেফাজতে ইসলাম রাজনৈতিক ভূমিকায় অবতীর্ণ হয়।

হেফাজত নেতাদের নীতি নৈতিকতার অভাবে বর্তমানে তাদের কথা সরকার ও জনগণ কেউই শুনছে না। তাদের অধিকাংশ নেতা এখনো কারাগারে। সরকারের কৌশলের কারণে দেশের আলেম সমাজও হেফাজতের বিরুদ্ধে অবস্থান গ্রহণ করেছেন। বর্তমানে আলেম সমাজ প্রকাশ্যে হেফাজত নেতাদের বিরুদ্ধে কথা বলছেন। এটি হেফাজতের জন্য অস্বস্তিকর এবং একই সঙ্গে বিব্রতকরও বটে। 

অনেকেই বলছেন, হেফাজত ইসলাম যে প্রকৃত ইসলাম ধারণ করে না, এটি প্রতিষ্ঠা করে সাফল্যের পরিচয় দিয়েছে সরকার। আর এর কারণেই এখন হেফাজতের ব্যাপারে সাধারণ ধর্মপ্রাণ মানুষের আর আবেগ-অনুভূতি নেই।