শুক্রবার   ১৫ নভেম্বর ২০২৪   অগ্রাহায়ণ ১ ১৪৩১   ১৩ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

জাফরুল্লাহ চৌধুরীকে নিয়ে বিব্রত বিএনপি

প্রকাশিত : ০৩:০৫ পিএম, ১ মার্চ ২০২২ মঙ্গলবার

জাফরুল্লাহ-চৌধুরীকে-নিয়ে-বিব্রত-বিএনপি

জাফরুল্লাহ-চৌধুরীকে-নিয়ে-বিব্রত-বিএনপি

গণস্বাস্থ্য কেন্দ্রের প্রতিষ্ঠাতা ও বিএনপিপন্থী বুদ্ধিজীবী ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরী বিএনপির কেউ নয় বলে জানিয়েছেন বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। তিনি জানান, জাফরুল্লাহ চৌধুরীকে নিয়ে এখন দল বিব্রত।

মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, আমি পরিষ্কারভাবে বলতে চাই- ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরী বিএনপির কেউ নন। তিনি যা বলেছেন- তা তার নিজস্ব বক্তব্য। নির্বাচন বিষয়ে তিনি বিএনপির পক্ষে কথা বলার কেউ নন।

সম্প্রতি এক সমাবেশে মির্জা ফখরুল এসব কথা বলেন। 

সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, কখনো বিএনপির পক্ষে কথা বলেছেন, কখনো বিএনপিকে উপদেশ দিয়ে বিভিন্ন সময় আলোচিত-সমালোচিত হয়েছেন জাফরুল্লাহ চৌধুরী।

ডা. জাফরুল্লাহ নির্বাচন কমিশন গঠন প্রক্রিয়ায় অংশগ্রহণ করেছিলেন। তিনি কয়েকটি নাম দিয়েছিলেন এবং এই নামের মধ্যে নবনিযুক্ত প্রধান নির্বাচন কমিশনার হাবিবুল আউয়ালের নামও ছিল।

সম্প্রতি হাবিবুল আউয়ালকে প্রধান নির্বাচন কমিশনার হিসেবে নিয়োগ দেওয়ার পর ডা. জাফরুল্লাহ সন্তোষ প্রকাশ করে বলেছেন, হাবিবুল আউয়াল অত্যন্ত সৎ, নিষ্ঠাবান লোক এবং তার উপর যদি সরকার অনাকাঙ্ক্ষিত চাপ সৃষ্টি না করে, তিনি ভালো কাজ করবেন। তার এই সার্টিফিকেট বিএনপির জন্য একটি বড় আঘাত হিসেবে সামনে এসেছে বলে মনে করেন রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা।

ডা. জাফরুল্লাহ যখন প্রধান নির্বাচন কমিশনার এবং নির্বাচন কমিশনার হিসেবে নাম দিয়েছিলেন, তখনই আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক এবং তথ্য ও সম্প্রচারমন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদ বলেছিলেন, বিএনপি ডা. জাফরুল্লাহর মাধ্যমেই নির্বাচন কমিশনের জন্য তাদের পছন্দের নাম দিয়েছে। যদিও বিএনপির পক্ষ থেকে ঐ বক্তব্যকে অস্বীকার করা হয়েছিল। কিন্তু ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরী যে বিএনপিপন্থী , তিনি যে জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের একজন নেতা, এটি নিয়ে কারো কোনো সন্দেহ নেই। বরং বিএনপির প্রতি সহানুভূতিশীল একজন রাজনৈতিক সচেতন ব্যক্তি হিসেবেই তিনি আলোচিত।

সেই জাফরুল্লাহ নির্বাচন কমিশন গঠনে কেন নাম দিলেন এবং সেই নাম অনুযায়ী প্রধান নির্বাচন কমিশনার কেন হলো, এটি এখন রাজনীতিতে টক অব দ্য টাউন। তার এই নাম দেওয়ার ফলে একতরফাভাবে নির্বাচন কমিশন গঠিত হচ্ছে বলে যে বিএনপির যুক্তি, সেটি আর ধোপে টেকেনি। বরং এর মধ্য দিয়ে নতুন নির্বাচন কমিশনের গ্রহণযোগ্যতা বেড়েছে।

জাফরুল্লাহর নাম দেওয়া এবং তার প্রস্তাবিত ব্যক্তি প্রধান নির্বাচন কমিশনার হওয়াটা শুধু যে কাকতালীয়, রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা তা মানতে রাজি নন। তারা মনে করছেন, এর মাধ্যমে ক্ষমতাসীনরা এক ঢিলে দুই পাখি মেরেছে। প্রথমত, এর মাধ্যমে বিএনপি এই প্রক্রিয়ার সঙ্গে নেই, এমন বক্তব্য রাখার সুযোগ কমে এসেছে। দ্বিতীয়ত, সরকারের পছন্দের ব্যক্তিকে নয়, বরং সরকারের সমালোচক ব্যক্তির পছন্দের এক ব্যক্তিকে প্রধান নির্বাচন কমিশনার নিয়োগ দেওয়া হয়েছে, এরকম একটি ধারণা সরকার প্রতিষ্ঠা করতে পেরেছে। যেটি জাতীয় ও আন্তর্জাতিকভাবে কাজে লাগবে। 

এ বিষয়ে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক বিএনপির সিনিয়র ও দায়িত্বশীল এক নেতা জানান, জাফরুল্লাহ ২০১৮ সালের নির্বাচনেও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছিলেন। সেই সময়ে ড. কামাল হোসেনের নেতৃত্বে যে জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট গঠিত হয়েছিল, সেই ঐক্যফ্রন্ট গঠনে তার গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা ছিল। বিএনপিকে নির্বাচনে নিয়ে আসার ক্ষেত্রে তিনি অন্যতম কুশীলব ছিলেন। এখন আগামী নির্বাচনকে সামনে রেখেও ডা. জাফরুল্লাহ কোনো এজেন্ডা নিয়ে কাজ করছেন কিনা, সেটি ভেবে দেখার বিষয়।

তিনি আরো বলেন, ডা. জাফরুল্লাহর সমাজে একটি গ্রহণযোগ্যতা আছে এবং সাধারণ জনগণ তাকে নির্মোহ, নির্লোভ ব্যক্তি হিসেবে জানেন। কাজেই বিএনপি এখন তাকে যতই তিরস্কার বা সমালোচনা করুক না কেন, সাধারণ মানুষের কাছে জাফরুল্লাহর উদ্যোগগুলো প্রশংসিত হচ্ছে। তাই জাফরুল্লাহ আসলে কার পক্ষে খেলছেন, সেটি বুঝতে গেলে আমাদের আরো হিসাব করা প্রয়োজন বলে মন্তব্য করেন ঐ বিএনপি নেতা।