শুক্রবার   ১৫ নভেম্বর ২০২৪   অগ্রাহায়ণ ১ ১৪৩১   ১৩ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

বিএনপির ডাকা ১১ দিনের কর্মসূচি নিয়ে নিরুত্তাপ তৃণমূল নেতারা

প্রকাশিত : ১২:০৫ পিএম, ২৬ ফেব্রুয়ারি ২০২২ শনিবার

বিএনপির-ডাকা-১১-দিনের-কর্মসূচি-নিয়ে-নিরুত্তাপ-তৃণমূল-নেতারা

বিএনপির-ডাকা-১১-দিনের-কর্মসূচি-নিয়ে-নিরুত্তাপ-তৃণমূল-নেতারা

দণ্ডিত বিএনপি চেয়ারপার্সন বেগম খালেদা জিয়াকে উন্নত চিকিৎসার নামে বিদেশে পাঠানোর আন্দোলনে ব্যর্থ দলটির নেতারা আবার ইস্যুভিত্তিক আন্দোলনের কর্মসূচি ঘোষণা করেছেন। বারবার অযৌক্তিক আন্দোলনে ব্যর্থতার কারণে এবারের ডাকা কর্মসূচির নিয়ে তৃণমূলের নেতাকর্মীদের মাঝে নিরুত্তাপ ভাব বিরাজ করছে।

বিএনপি সূত্র বলছে, উন্নত চিকিৎসার অজুহাতে দণ্ডিত খালেদা জিয়াকে বিদেশ পাঠাতে আন্দোলন করে শুধুমাত্র সময় পার করেছেন কেন্দ্রীয় নেতারা। সেই আন্দোলন ফলপ্রসু হয়নি। এখন ইস্যুভিত্তিক দাবি নিয়ে রাজনীতির মাঠে সক্রিয় হতে চাচ্ছে বিএনপি। দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতিকে লক্ষ্য করে মাঠ গুছানোর পরিকল্পনা করা হচ্ছে। এরইমধ্যে সারাদেশে ১১ দিনের কর্মসূচিও ঘোষণা করা হয়েছে।

সূত্র আরো বলছে, রাজধানী ঢাকা থেকে শুরু করে বিভাগীয় শহর, জেলা শহর, মহানগরসহ উপজেলা পর্যায়ে বিক্ষোভ সমাবেশ করার ঘোষণা করেছে বিএনপি। পাশাপাশি বিএনপির সব সহযোগী সংগঠনগুলোকেও সমাবেশ করার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। এছাড়া বিএনপির পক্ষ থেকে সারাদেশে ইউনিয়ন ও ওয়ার্ড পর্যায়ে হাটবাজারে হাটসভা, পথসভা ও লিফলেট বিতরণ করার কথা জানানো হয়। মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমীগর বলেছেন, মাঠপর্যায়ের কর্মসূচিতে সবাইকে সম্পৃক্ত করতে যাচ্ছি। কিন্তু খোদ স্থায়ী কমিটির কয়েকজন সদস্য এবং জেলা পর্যায়ের নেতারা আন্দোলনের কর্মসূচির সফলতার ব্যাপারে শঙ্কা প্রকাশ করছেন। বিশেষ করে বারবার আন্দোলনে ব্যর্থ হওয়ার নতুন কর্মসূচির বিষয়ে তৃণমূলের নেতাকর্মীদের মাঝে অনীহা দেখা গেছে।

নরসিংদী জেলা বিএনপির এক শীর্ষ নেতা বলেন, একটি আন্দোলনের সফলতা দেখলে আরেকটি আন্দোলনের ডাকে সাড়া দেওয়ার মনোভাব থাকে নেতাকর্মীদের। আমরা কেন্দ্র থেকে প্রাপ্ত সকল আন্দোলনে সাড়া দিয়েছি। কিন্তু কেন্দ্রীয় নেতাদের সঠিক নির্দেশনা ও যৌক্তিকতার অভাবে অতীতের সব আন্দোলন ব্যর্থ হয়ে পড়েছে। আন্দোলন ডাকার পর যদি তা কেন্দ্র পর্যায়ে ব্যর্থই হয় তাহলে আমরা মাঠে খেটে লাভ কি? আগে বিএনপির কেন্দ্রীয় নেতারা আন্দোলনের মাঠে এঁটে বসুক, তারপরই আমরা আন্দোলনে নামবো। আন্দোলনের ব্যর্থতা আর আমরা নিতে পারছি না।

বিএনপির স্থায়ী কমিটির এক সদস্য বলেন, গত ১২ বছরে আমরা একটি আন্দোলনও সফল করতে পারিনি। কারণ, আমাদের দলের অভ্যন্তরে বিভিন্ন রকমের সংকট বিরাজ করছে। জনপ্রিয় নেতাদের বহিষ্কার করাসহ বিভিন্ন সংকট ক্রমশ ঘনীভূত হচ্ছে। আর সংকট এড়ানোর জন্যই দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতি ইস্যুকে কাজে লাগানোর চেষ্টা হচ্ছে।

তিনি আরো বলেন, জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট প্রায় মৃত। ২০ দলীয় জোটের অবস্থাও নাজুক। জোট থেকে একে একে শরীক দল বেরিয়ে যাচ্ছে। জামায়াতের কারণে বামপন্থী দলগুলো আমাদের সঙ্গে জোটবদ্ধ হতে রাজি নয়। এছাড়া আমাদের মধ্যে তারেকপন্থী ও তারেক বিরোধীদের কোন্দল রয়েছে। নেতাদের গণপদত্যাগ, বহিঃষ্কারাদেশ দলকে বেকায়দায় ফেলে দিয়েছে। এ রকম পরিস্থিতির মাঝে আমাদের দলের ডাকা আন্দোলন কর্মসূচি কতটুকু সফল হয়, সেটিই এখন দেখার বিষয়।

রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা বলছেন, যেকোনো আন্দোলন সফল করতে ক্যারিশম্যাটিক নেতার প্রয়োজন। কিন্তু দলটির দায়িত্বপ্রাপ্ত নেতারা সবাই প্রশ্নবিদ্ধ। কেন্দ্রীয় নেতাদের ব্যর্থতায় গত ১৩-১৪ বছরে বিএনপির সাংগঠনিক ভিত্তি একেবারেই ভেঙে গেছে। জেলা ও উপজেলা পর্যায়ের অধিকাংশ কমিটিই মেয়াদহীন। যেখানে আছে, সে কমিটিগুলো বাণিজ্যের কবলে পড়ে কার্যকর নয়। পাশাপাশি অঙ্গ-সহযোগী সংগঠনের অবস্থাও অত্যন্ত নাজুক। এসব সাংগঠনিক দুর্বলতা নিয়ে বিএনপির আন্দোলন সফল হওয়া কঠিন।

বিশ্লেষকরা আরো বলেন, বিএনপির সবচেয়ে বড় সংকট হচ্ছে নেতৃত্ব শূন্যতা। বাংলাদেশের যেকোনো বড় আন্দোলন করতে গেলে প্রধান নেতার প্রয়োজন পড়ে। কিন্তু বিএনপির প্রধান নেতা বেগম খালেদা জিয়া দণ্ডিত। মানবিক বিবেচনায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নির্বাহী আদেশে খালেদা জিয়ার সাজা স্থগিত রেখে তাকে বাসায় রাখা হয়েছে। তিনি বয়সের কারণেও অসুস্থ। দ্বিতীয় নেতা দণ্ডিত তারেক রহমান লন্ডনে পলাতক। তিনি ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে দল পরিচালনা করেন। আর মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বারবার বিতকির্ত বক্তব্যের মাধ্যমে বিএনপিকে বেকায়দায় ফেলেছেন। এ অবস্থায় ঢাকাসহ দেশের তূণমূলের নেতাকর্মীরা ভরসা না পেয়েই নিরুত্তাপ রয়েছে।