শুক্রবার   ১৫ নভেম্বর ২০২৪   অগ্রাহায়ণ ১ ১৪৩১   ১৩ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

লবিস্ট নিয়োগে নাটের গুরু আব্দুল আউয়াল মিন্টু

প্রকাশিত : ০৩:০৫ পিএম, ১৮ ফেব্রুয়ারি ২০২২ শুক্রবার

লবিস্ট-নিয়োগে-নাটের-গুরু-আব্দুল-আউয়াল-মিন্টু

লবিস্ট-নিয়োগে-নাটের-গুরু-আব্দুল-আউয়াল-মিন্টু

২০০১ সালের নির্বাচনে আচমকা বিএনপির গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তি হয়ে ওঠেন প্রভাবশালী আবদুল আউয়াল মিন্টু। কখনোই মন্ত্রী-এমপি না হলেও সবক্ষেত্রে কলকাঠি নাড়ানোতে তার জুড়ি মেলা ভার। সম্প্রতি বাংলাদেশের বিরুদ্ধে যে আন্তর্জাতিক অপপ্রচার গুলো হচ্ছে, লবিস্ট ফার্মকে অর্থ দেওয়া হচ্ছে, এর পেছনে নাটের গুরু হিসেবে চিহ্নিত হয়েছেন বিএনপির প্রভাবশালী নেতা আবদুল আউয়াল মিন্টু। 

আব্দুল আউয়াল মিন্টু ও তার স্ত্রী-পুত্র যে বিদেশে বিপুল অর্থপাচার করেছে তার প্রমাণ পাওয়া গেছে প্যান্ডোরা পেপার্সে। অফশোর ব্যাংক একাউন্টের মাধ্যমে তিনি বিপুল অর্থের টাকা দিয়ে ট্যাক্স হলিডের সুযোগ নিয়ে কোম্পানি খুলেছেন। আর এ কোম্পানিগুলো মূলত ব্যবহৃত হচ্ছে তারেক জিয়া এবং বিভিন্ন লবিস্ট ফার্মকে অর্থ প্রদান কাজে।

দেখা গেছে যে, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে বাংলাদেশবিরোধী অপপ্রচারের জন্য যে বিভিন্ন লবিস্ট ফার্মগুলোকে নিয়োগ দেওয়া হয়েছে সেই লবিস্ট ফার্মগুলোর টাকার একটা বড় অংশই আবদুল আউয়াল মিন্টু দিচ্ছেন।

শুধু তাই নয়,  বাংলাদেশের বিরুদ্ধে  যেসব দেশ থেকে সাইবার হামলা হচ্ছে সেই সাইবার হামলায়ও অর্থ দেন আবদুল আউয়াল মিন্টু।

বিএনপি নেতারাই জানান, আবদুল আউয়াল মিন্টু হলেন তারেক জিয়ার ক্যাশিয়ার। গত নির্বাচনের সময় বিএনপির পক্ষ থেকে যে ব্যাপক মনোনয়ন বাণিজ্য হয়েছে সেই মনোনয়ন বাণিজ্যের পুরোটাই পরিচালনা করেছেন আবদুল আউয়াল মিন্টু। বিভিন্ন নেতার কাছে মনোনয়ন বিক্রি করে টাকা আদায় করেছে। এমনকি একাধিক ব্যক্তিকে মনোনয়ন দিয়ে টাকা আদায় করে তিনি শত কোটি টাকার বেশি লন্ডনে পাচার করেছেন।

গত নির্বাচনে বিএনপির যারা মনোনয়ন পাননি তাদের একাধিক ব্যক্তি বলেছেন যে, আবদুল আউয়াল মিন্টুর প্রস্তাব তারা মানেনি। এজন্যই তারা মনোনয়ন থেকে বঞ্চিত হয়েছেন। আবদুল আউয়াল মিন্টু সেই সময় মনোনয়নের বিনিময়ে একটা নির্দিষ্ট পরিমাণ অর্থ চেয়েছিলেন। এ অর্থের পরিমাণ সর্বনিম্ন পাঁচ কোটি টাকা থেকে সর্বোচ্চ ২০ কোটি টাকা পর্যন্ত ছিল। বিএনপি নেতা এহসানুল হক মিলনসহ অনেক গুরুত্বপূর্ণ নেতা সেই সময় মনোনয়ন বাণিজ্যের কারণে মনোনয়ন থেকে বঞ্চিত হয়েছিলেন। আর এসবের নাটের গুরু হিসেবে বিএনপিতেই আবদুল আউয়াল মিন্টুর নাম উচ্চারিত হয়।

বর্তমানে আবদুল আউয়াল মিন্টু বিভিন্ন দূতাবাসগুলোতে বাংলাদেশবিরোধী অপপ্রচারের গল্পগুলো ছড়িয়ে দেওয়ার কাজ করছেন। বিভিন্ন দূতাবাসের সঙ্গে গোপনে বৈঠকও করেছেন তিনি। 

একাধিক দায়িত্বশীল সূত্রগুলো বলছে, আবদুল আউয়াল মিন্টুর বিরুদ্ধে সুনির্দিষ্টভাবে অর্থপাচারের অভিযোগ প্রমাণিত হওয়ার পরও তিনি কেন আইনের আওতায় আসছে না, সেটি একটি বড় রহস্য। কারণ, এ পর্যন্ত আন্তর্জাতিকভাবে যে দেশগুলোর সম্পর্কে অর্থপাচারের তথ্য প্রকাশিত হয়েছে তার মধ্যে বাংলাদেশও রয়েছে। আর বাংলাদেশ থেকে যার অর্থপাচার করেছে তাদের সবাই বিএনপির রাজনীতির সঙ্গে প্রত্যক্ষ-পরোক্ষভাবে জড়িত। আর এদের মধ্যে সবচেয়ে আলোচিত ব্যক্তি হলেন আবদুল আউয়াল মিন্টু। এখন পর্যন্ত যে সমস্ত তথ্যগুলো বিশ্বগণমাধ্যমে প্রকাশিত হয়েছে তাতে দেখা যাচ্ছে, আবদুল আউয়াল মিন্টু, তার স্ত্রী নাসরিন আউয়াল মিন্টু, তার পুত্র তাবিথ আউয়ালরা বিদেশে কোম্পানি খুলেছে এবং সেখানে অর্থপাচার করেছেন। এ বাস্তবতায় এদের বিরুদ্ধে দ্রুত আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করা দরকার। কিন্তু বিএনপি এবং জনগণ সবকিছু জানলেও কেউ এখনো পর্যন্ত বিএনপির এ নাটের গুরুর বিরুদ্ধে কোনোরকম উচ্চবাচ্য করছে না।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক বিএনপির স্থায়ী কমিটির এক নেতা বলেছেন, বিএনপির পক্ষ থেকে আবদুল আউয়াল মিন্টুর বিরুদ্ধে কোনো কথা বলা হয় না। কারণ, মিন্টু সাহেবের সবচেয়ে বড় শক্তি হচ্ছেন তারেক রহমান। তারেক রহমানের ঘনিষ্ঠ হওয়ায় তার ব্যাপারে কেউ মুখ খুলতে সাহস পান না।