ঐতিহ্যের প্যাডেল স্টিমারের স্মৃতি
প্রকাশিত : ১১:৫৫ এএম, ১৭ ফেব্রুয়ারি ২০২২ বৃহস্পতিবার
ঐতিহ্যের-প্যাডেল-স্টিমারের-স্মৃতি
উপকূলীয় জেলা পিরোজপুরের মঠবাড়িয়ায় আমার বসতি। সেই সুবাদে জলপথে স্টিমার 'রকেট' ভ্রমণের আছে মজার মজার অভিজ্ঞতা। প্যাডেল স্টিমারের নাম শুনেছেন অনেকেই। যারা শোনেননি, তাদের জন্যে বলি, এই জলযানের বয়স প্রায় ১০০ বছর, কোনোটা হয়ত সেঞ্চুরি পূরণ করে ফেলেছে আরো অনেক আগেই। দুপাশে দুটো প্যাডেল দিয়ে পানি কেটে সামনে এগিয়ে যায় বলেই এগুলোর নাম প্যাডেল স্টিমার। বিশ্বজুড়ে এই প্যাডেল স্টিমার আছে হাতেগোনা অল্প কিছু। একদিন যাত্রী হয়েছিলাম সেই প্যাডেল স্টিমার ‘রকেটের’।
ঢাকা থেকে যাত্রা করে আসা স্টিমারগুলোর সর্বশেষ গন্তব্য পিরোজপুর জেলার মঠবাড়িয়া উপজেলার মাছুয়া ঘাট হয়ে খুলনা বিভাগের মোরেলগঞ্জ সন্ন্যাসী ঘাটে। আমার যাত্রা শুরু হয়েছিল মাছুয়া ঘাট থেকে।
মাছুয়া ঘাট থেকে ঢাকার উদ্দেশ্যে ছেড়ে যাওয়া স্টিমারগুলো ঘাটে এসে পৌঁছায় বেলা ১১টায়। এর আগে স্টিমারগুলোর প্রথম যাত্রা শুরু হয় মোড়লগঞ্জের সন্ন্যাসী ঘাট থেকে। ঘাটে এসে স্টিমার ভিড়তেই মানুষের দৌড়োদৌড়ি, হুড়োহুড়ি পড়ে যায় স্টিমারে ওঠার। যদিও আমার তাড়াহুড়া ছিল না। আমার কেবিন আগেই বুকিং দেয়া ছিল।
স্টিমারে উঠলাম। যাত্রীরা ডেকে বিছানা পাততে ব্যস্ত। যে যার প্রয়োজন ও পছন্দ অনুযায়ী জায়গায় বিছানা পেতে নিয়ে বসে গেছে। আমি আমার ব্যাগপত্র নিয়ে কেবিনে প্রবেশ করলাম। ফ্রেশ হয়ে সকালের নাস্তা সেরে একটু বিশ্রাম নিলাম। পরক্ষণেই মনটা আনচান করতে লাগল পুরো স্টিমারটা ঘুরে দেখার। ছোটবেলায় নানা-দাদুদের মুখে স্টিমার ভ্রমণের আনন্দের কথা অনেক শুনেছি। শুনেছি স্টিমারের পূর্ব ও বর্তমান ইতিহাস। তাই এবার ভেবেছি, যেভাবেই হোক স্টিমার ভ্রমণের আনন্দটা উপভোগ করবই।
বিলম্ব না করে মোবাইল ফোনটি নিয়ে বের হলাম পুরো স্টিমার ঘুরে দেখতে। বেলা ১১টা ৩০ মিনিটে মাছুয়া ঘাট থেকে ঢাকার উদ্দেশ্যে যাত্রা শুরু করলো স্টিমারটি। আমি ঘুরে ঘুরে খুঁটিনাটি দেখতে শুরু করলাম। কেবিন থেকে বের হয়ে প্রথমেই প্রবেশ করলাম ডেকে। ডেকের প্রতিটি বিছানায় চার-পাঁচজন করে যাত্রী। কেউ যাচ্ছেন পরিবার নিয়ে, কেউ কেউ যাচ্ছেন বন্ধু-বান্ধবের সঙ্গে। নদীর শীতল হাওয়ায় গা ভাসিয়ে দিয়ে ঘুমিয়ে পড়েছে অনেক শিশু-বৃদ্ধরা। ভ্রমণকে আরো একটু আনন্দময় করতে লুডু বা তাস খেলতে বসে গেছের অনেকেই।
ডেক রুম কাটিয়ে আমি চলে গেলাম ইঞ্জিন রুমের পাশে। বিশাল আকৃতির দুটি ও ছোটো ছোটো কয়েকটি ইঞ্জিনে ভরপুর ইঞ্জিন রুম। যেকোনো প্রকার সমস্যার সমাধান কিংবা ইঞ্জিন বন্ধ করার জন্য সার্বক্ষণিক ইঞ্জিন রুমের পাশে অবস্থান করে দুজন কর্মচারী। শুরুর দিকে এই স্টিমারগুলো কয়লায় চলত। কয়লা থেকে উৎপন্ন হওয়া স্টিমে এই নৌযানগুলো চলার কারণে এর নাম হয় স্টিমার। তবে কালের বিবর্তনে আধুনিকায়নের ফলে এই স্টিমারগুলো এখন চলে ডিজেলে। শুরুর দিকে এই নৌযানগুলো দ্রুতগামী হওয়ার কারণে স্টিমারের পাশাপাশি এগুলো রকেট নামেও বেশ পরিচিতি লাভ করেছে।
ইঞ্জিন রুম দেখা শেষ হতেই যে ব্যাপারটা আমার নজরে এসেছে সেটি হলো স্টিমারের দুইপাশে অবস্থিত বিশাল আকৃতির দুটি প্যাডেল। ইঞ্জিন থেকে উৎপন্ন হওয়া শক্তিতে চলে এই প্যাডেল দুটি। আর এই প্যাডেলের গতিতে নদীর বুক চিড়ে গন্তব্যের দিকে ছুটে চলে স্টিমার।
স্টিমারের আশপাশ দিয়ে কিছুক্ষণ পরপর লঞ্চ আসা-যাওয়া করছে। তার চেয়েও মুগ্ধকর- নদীতে ইলিশ ধরার দৃশ্য। প্রচণ্ড ঢেউয়ে জেলেদের নৌকা যেন ডুবুডুবু করছে। দেখে ভয়ে যেন শরীর শিউরে উঠলো। ছোট ছোট নৌকাগুলো নিভু নিভু করে বাতি জ্বলছে। তখন বিষখালী ও ক