সোমবার   ২৫ নভেম্বর ২০২৪   অগ্রাহায়ণ ১১ ১৪৩১   ২৩ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

কাঠের তৈরি দৃষ্টিনন্দন শতবর্ষী ‘মমিন মসজিদ’

প্রকাশিত : ০৩:৫৫ পিএম, ৫ ফেব্রুয়ারি ২০২২ শনিবার

কাঠের-তৈরি-দৃষ্টিনন্দন-শতবর্ষী-মমিন-মসজিদ

কাঠের-তৈরি-দৃষ্টিনন্দন-শতবর্ষী-মমিন-মসজিদ

সম্পর্কিত খবর ভ্রমণ হোক নিঝুম দ্বীপে কাঠের তৈরি শিল্পসমৃদ্ধ দৃষ্টিনন্দন স্থাপত্য নিদর্শন শতবর্ষী ‘মমিন মসজিদ’। পিরোজপুরের মঠবাড়িয়া উপজেলার উদয়তারা বুড়িরচর গ্রামের মমিন উদ্দিন আকন ঊনবিংশ শতাব্দীর শুরুর দিকে মসজিদটি নির্মাণ করেন। সম্পূর্ণ নিজস্ব শৈল্পিক ভাবনা ও অভিজ্ঞতা দিয়ে তিনি মসজিদটি তৈরি করেন। যা শিল্পকর্মের অপূর্ব নিদর্শন হয়ে রয়ে গেছে আজও। বিচিত্র কারুকাজখচিত সম্পূর্ণ কাঠ দিয়ে তৈরি এই মসজিদ স্থানীয়ভাবে ‘কাঠ মসজিদ’ নামে পরিচিত।

ইতিহাসের নিদর্শন এ মসজিদটি দেখতে প্রতিদিন দেশের বিভিন্ন এলাকা থেকে লোক আসেন।

১৯১৩ সালে কাঠ মসজিদ নির্মাণের কাজ শুরু হয়। কাঠশিল্পের অন্যতম প্রধান কেন্দ্র পিরোজপুরের নেছারাবাদ উপজেলা থেকে তিনি হরকুমার নাথকে মাসিক ৪০ টাকা বেতনে মসজিদ তৈরির প্রধান মিস্ত্রি নিয়োগ করেন। ২২ জন মিস্ত্রি দীর্ঘ সাত বছর নিরলস কাজ শেষে ১৯২০ সালে শেষ করেন নির্মাণকাজ। মমিন উদ্দিন আকন সবসময় মিস্ত্রিদের কাছে থেকে তাদের কাজ পরিচালনা করতেন এবং কারুকাজগুলো সূক্ষ্মভাবে পরীক্ষা করে দেখতেন।

মমিন মসজিদ তৈরিতে ব্যবহার করা হয়েছে লোহাকাঠ ও সেগুনকাঠ।

মসজিদটি বাংলাদেশ সরকারের প্রত্নতত্ত্ব অধিদফতর কর্তৃক সংরক্ষিত। বহু দুষ্প্রাপ্য ও মূল্যবান কাঠ দ্বারা এটি নির্মিত। অসাধারণ ও দৃষ্টিনন্দন এর নির্মাণশৈলী। বিভিন্ন সময় বর্ষার কারণে নামমাত্র কিছু কাঠ বা রঙের ক্ষতি হলেও পরবর্তীতে মেরামত করে সৌন্দর্য ধরে রাখা হয়েছে। মমিন মসজিদ তৈরিতে ব্যবহার করা হয়েছে লোহাকাঠ ও সেগুনকাঠ। কাঠগুলো মিয়ানমার, ত্রিপুরা ও আসাম থেকে সংগ্রহ করা হয়েছিল।

আরো পড়ুন : ব্যাঙ গিলে খাচ্ছিল সাপকে, সেখানেই নাটোরের রাজবাড়ি

মসজিদের কাঠামো তৈরিতে লোহার পেরেক ব্যবহার না করে কাঠের শলা ব্যবহার করা হয়। ২৪ ফুট দৈর্ঘ্য ও ১৮ ফুট প্রস্থের মসজিদটিতে চৌচলা টিন শেড দিয়ে পাটাতন তৈরি করা হয়েছে। ভেতরে আলো-বাতাস প্রবেশ ও সৌন্দর্য বৃদ্ধির জন্য পাটাতনের মাঝখানে তৈরি করা হয়েছে দ্বিতীয় আর একটি দোচালা টিনের ছাউনি। মসজিদের উত্তর ও দক্ষিণ দিকে দুটি করে এবং পূর্ব ও পশ্চিমে চারটি করে জানালা। পূর্ব দিকে একটি মাত্র প্রবেশদ্বারে কারুকার্যখচিত দুটি খাম্বাবিশিষ্ট দরজা রয়েছে, যাতে মসজিদ নির্মাণের সূক্ষ্ম শিল্পকর্ম ফুটে উঠেছে।

 প্রবেশদ্বারে কারুকার্যখচিত দুটি খাম্বাবিশিষ্ট দরজা রয়েছে।

উল্লেখ্য যে, ইউনিসেফ প্রকাশিত বিশ্বের অনন্য মসজিদ নিয়ে প্রকাশিত ৪০০ পৃষ্ঠার একটি বইয়ে এ কাঠ মসজিদটির সচিত্র বর্ণনা স্থান পেয়েছে। তা ছাড়াও গোটা বরিশাল বিভাগের মধ্যে শুধু এই মসজিদটির আলোকচিত্র ২০১৪ সাল থেকে জাতীয় জাদুঘরের স্থাপত্য গ্যালারিতে স্থান পেয়েছে।

যোগাযোগ ব্যবস্থা:

ঢাকা থেকে সড়ক বা নৌপথে পিরোজপুরের মঠবাড়িয়া যাওয়া যায়। ঢাকার গাবতলী বা সায়েদাবাদ বাস টার্মিনাল থেকে সাকুরা, হামিম এবং বনফুল পরিবহনে যাওয়া যায়। আর নৌপথে লঞ্চে ঢাকার সদরঘাট থেকে বরিশাল যাওয়া যায়। বরিশাল থেকে যেকোনো স্থানীয় পরিবহণে মঠবাড়িয়া যেতে পারবেন। মঠবাড়িয়া থেকে মমিন মসজিদের দূরত্ব প্রায় ১২ কিলোমিটার।

মসজিদটি বাংলাদেশ সরকারের প্রত্নতত্ত্ব অধিদফতর কর্তৃক সংরক্ষিত। ছবি : সংগৃহীত

কোথায় থাকবেন:

মঠবাড়িয়ায় হোটেল কুটুম বাড়ি, জেলা পরিষদের ডাক বাংলোসহ বিভিন্ন আবাসিক হোটেলে রাত্রিযাপন করতে পারবেন।

কোথায় খাবেন:

মঠবাড়িয়ায় ক্যাফে আড্ডা, আফজাল হোটেল, মোঘলসহ ভালোমানের কিছু রেস্তোরাঁ রয়েছে। সুযোগ থাকলে পিরোজপুরের দুলালের দধি ভান্ডারের রসগোল্লা, রসমালাই এবং ঋতুপর্ণা মিষ্টান্ন ভান্ডারের রসমঞ্জুরি খেয়ে দেখতে পারেন।

পাশাপাশি অন্যান্য দর্শনীয় স্থান: