সোমবার   ২৫ নভেম্বর ২০২৪   অগ্রাহায়ণ ১১ ১৪৩১   ২৩ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

ভ্রমণে তাবুবাস নিয়ে কিছুকথা

প্রকাশিত : ০৭:৫৫ পিএম, ৩১ জানুয়ারি ২০২২ সোমবার

ভ্রমণে-তাবুবাস-নিয়ে-কিছুকথা

ভ্রমণে-তাবুবাস-নিয়ে-কিছুকথা

সম্পর্কিত খবর মা-ছেলের ভ্রমণ : ৫১ দিনে ঘুরলেন ভারতের ২৮ রাজ্য ক্যাম্পিং শব্দটার সঙ্গে প্রকৃতির আদিম এক অনুভূতি জড়িত। কয়েকজন মিলে নিখাদ প্রাকৃতিক পরিবেশে তাবু গেঁড়ে আড্ডা মুখর রাত্রিযাপন, নানারকম পাখি ও অজানা পোকার শব্দ মনকে এক অদ্ভুত প্রশান্তিতে ভরিয়ে তোলে। নগরের যান্ত্রিকতার বাইরে গিয়ে নৈস্বর্গিক পরিবেশে একটি রাত কাটানোর মুহূর্তগুলো আপনাকে দিতে পারে প্রাণবন্ত থাকার রসদ। তাইতো অনেকেই ভ্রমণে গেলে আজকাল তাবুবাসকেই বেশি পছন্দ করছে। অনেকেই ভেবে রেখেছেন শীঘ্রই করবেন তাবু ক্যাম্পিং। আজকের লেখাটি তাদের জন্য।

তাবুবাসের কিছু নিয়মাবলী

তাবুবাসের কিছু সাধারণ নিয়মাবলী রয়েছে। যেখানে তাবু পাতনো হবে সেই জায়গাটি সঠিকভাবে খুঁজে বের করা খুবই জরুরি। জায়গাটা যেন সমতল হয় ও উচু-নিচু পাথর বা গাছের শেকড় না থাকে। প্রয়োজনে পরিস্কার করে নিন, শেকড় বা নুড়িপাথার সরিয়ে দিন। ধারালো কোনো কিছু থাকলে তা তাবুর ফ্লোরের ক্ষতি করতে পারে। আর সমান না হলে ঘুমাতে কষ্ট হবে।

 তাবু বাসের রয়েছে কিছু নিয়মাবলী। ছবি : সংগৃহীত

বর্ষার সময় ঢালু যায়গায় যেদিক দিয়ে পানি নামে এমন কোথাও তাবু ফেলা যাবে না। বৃষ্টি হলে সব পানি গড়িয়ে তাবুর ভেতরে চলে আসবে। বর্ষায় কখনোই শুকনা ঝিরি বা ঝিরির পানির একদম পাশে ক্যাম্প করা যাবে না। যেকোনো সময় ফ্ল্যাশ ফ্লাডে তাবু ভেসে যাওয়ার সম্ভাবনা থাকবে।

খাওয়া দাওয়া রান্না এইসব তাবু থেকে কিছুটা দূরে রাখতে হবে। নাহলে পরে গন্ধে পোকামাকড় ও পশু পাখি কাছে আসার সম্ভাবনা থাকে। আগুন ও ক্যাম্প ফায়ার তাবু থেকে যথেষ্ট দূরে করতে হবে। আগুন থেকে বাতাসের দিকে তাবু থাকলে অনেকসময় আগুনের ফুলকি উড়ে যেয়েও তাবুতে আগুন ধরে দুর্ঘটনা ঘটতে পারে।

আরো পড়ুন : কেরালা : যেন এক ভিন্ন ভারত

তাবুর মধ্যে বসে খাওয়া দাওয়া নিষিদ্ধ। সন্ধ্যায় তাবুর রশি হালকা ও সকালে তাবুর রশি শক্ত করে বাধঁতে হবে। তাবুর ফ্লাপগুলো পতন স্থানের বরাবর ৮ সে.মি. গভীর নালা কেটে বৃষ্টির পানি নিস্কাশ্নের ব্যবস্থা রাখতে হবে। প্রতিবার রান্নার পর চুলার আগুন নিভিয়ে ফেলতে হবে। সকালে ঘুম থেকে ওঠার পর বিছানা এবং ব্যবহার্য পোশাক-পরিচ্ছদ, হারিকেন তাবুরে বাইরে রাখাই ভালো।

সন্ধ্যায় তাবুর রশি হালকা ও সকালে তাবুর রশি শক্ত করে বাধঁতে হবে।

তাবু প্রস্তুত করা

শুরুতে তাবুর সঙ্গে থাকা ম্যানুয়ালটি দেখে নিন। যেখানে তাবু পাতবেন সেখানে তাবুটা খুলে ফ্লোরের চারকোনার পেগ বা স্টেক মাটিতে ৪৫ ডিগ্রো কোন করে ভালোভাবে গেথে নিব। তাবুর পোলগুলো ভালোভাবে দেখতে হবে সব ঠিক আছে কিনা। এইবার পোলগুলো সমানভাবে খুলে শক কর্ডের মাধ্যমে পুরাটা সেট করতে হবে। যদি পোল ঢুকানোর সিস্টেম স্লিভ টাইপ হয় তাহলে একদিক থেকে ধিরে ধিরে ঠেলে পোলগুলো সঠিক যায়গায় নিতে হবে। যদি ক্লিপ সিস্টেম হয় তাহলে ক্লিপ কখনই আগে লাগানো জাবে না।

কখনই পোল টানা যাবে না, সবসময় ঠেলা (পুষ) দিতে হবে, টানলে শক কর্ড থেকে পোল বের হয়ে আসবে ও ছিড়ে যেতে পারে। এইবার দুইজন মিলে পোলের দুইদিক ধরে ধিরে ধিরে চাপ দিয়ে মাঝখানটাকে উচু করে পোলের মাথাগুলো পোল লাগানোর গুটাতে বা ক্লিপে লাগিয়ে ফেলুন। একইভাবে বাকি দিকগুলো লাগিয়ে ফেলুন। সাহাজ্য করার কাউকে না পেলে একদিকে পোল ক্লিপে লাগিয়ে নিয়ে আরেকদিক থেকে একাই চাপ দিয়ে তাবু টাঙানো যাবে।

 ঝড়ের সময় বড় গাছের নিচে তাবু পাতা যাবে না, গাছের ডাল পড়তে পারে।

পোল লাগানো শেষ হলে এইবার ফিতা ও ক্লিপগুলো লাগিয়ে ফেলতে হবে। রেইনফ্লাই লাগাতে হবে ফিতার মাধ্যমে। যদি ঝড়ো বাতাস থাকে বা আসার সম্ভাবনা থাকে তাহলে গাই রোপগুলো ঠিকভাবে টানা দিয়ে লাগাতে হবে। সবগুলো পেগ সঠিকভাবে সঠিক যায়গায় টানটান করে লাগাতে হবে।

আরো পড়ুন : শান্তির সান্নিধ্য মিলবে হরিণঘাটা বনে

তাবু লাগানো হয়ে গেলে একটা ছোট কাপড় বা টিস্যু পেপার দিয়ে ভেতরের ফ্লোর থেকে বালু, ধুলা পরিস্কার করে নিতে হবে। দিনের বেলা যদি তাবু পাতাই থাকে তাহলে খেয়াল রাখতে হবে তাবু যেন কিছুটা ছায়ায় থাকে, সারাদিন রোদ ও রোদের আলট্রাভায়োলেট রশ্মি তাবুর কাপড় ও পোলের ক্ষতি করে। ঝড়ের সময় বড় গাছের নিচে তাবু পাতা যাবে না, গাছের ডাল পড়তে পারে। তাবু পাতার আগে মাটিতে ফুটপ্রিন্ট বা একটা কাপড় বা পলিথিন পেড়ে নিলে তাবুর ফ্লোর কম ময়লা হবে ও সহজেই খোলার সময় পরিস্কার করা যাবে।

খাওয়া দাওয়া রান্না এইসব তাবু থেকে কিছুটা দূরে রাখতে হবে।

চলুন জেনে নেই বাংলাদেশের কোথায় কোথায় রয়েছে তাবুবাসের পরিবেশ

নিঝুম দ্বীপ, সেন্টমার্টিন, মনপুরা, সোনাদিয়া, আড়াইহাজার, কুতুবদিয়া, সন্দ্বীপ, হাজারিখিল অভয়ারণ্য, তিন্দু, নাফাখুম, মহামায়া লেক, চর কুকরী মুকরী, খাদিমনগর জাতীয় উদ্যান, সাতছড়ি জাতীয় উদ্যান, মারায়ন তং, বাঁশবাড়িয়া সমুদ্র সৈকত, রেমা-কালেঙ্গা জাতীয় উদ্যান, কাপ্তাই লেক, সহস্রধারা ঝর্ণা, বারৈয়াঢালা জাতীয় উদ্যান, নাজিমগড় ট্যান্ট ক্যাম্প, নিওক্যাম্পারস, দেবতাখুমসহ আরো কিছু যায়গায় আজকাল অনেকেই তাবু ক্যাম্পিং করে থাকে।