ভ্যাপসা গরমে বছরে ৩২০০ কর্মঘণ্টা হারাচ্ছে বাংলাদেশ: গবেষণা
প্রকাশিত : ০২:৪৫ এএম, ১৫ জানুয়ারি ২০২২ শনিবার
ভ্যাপসা-গরমে-বছরে-৩২০০-কর্মঘণ্টা-হারাচ্ছে-বাংলাদেশ-গবেষণা
সম্প্রতি এনভায়রনমেন্টাল রিসার্চ লেটার্স জার্নালে প্রকাশিত এক গবেষণায় এমন তথ্য পাওয়া গেছে। গবেষণায় মূলত বাইরে খোলা স্থানে ভারি কাজ করা মানুষের কর্মঘণ্টা কমে যাওয়ার বিষয়টি উঠে এসেছে।
যারা রিকশা চালান, তারা সাধারণত সপ্তাহে ছয় দিন দৈনিক সাত থেকে ১২ ঘণ্টা রিকশা চালান। কিন্তু মে থেকে অক্টোবর- এই ছয় মাস কাজটি সমানভাবে অব্যাহত রাখতে তাকে ভীষণ কষ্ট করতে হয়।
যারা রিকশা চালান, কৃষি ও নির্মাণ শিল্পে কায়িক শ্রমের কাজ করেন, তাদের স্বাস্থ্য এবং সুস্থতার ওপর এমন দমবন্ধ করা তাপমাত্রা যে কতোটা নেতিবাচক প্রভাব ফেলছে সে বিষয়টি এতদিন তেমন গুরুত্ব পায়নি।
গবেষণার ফলাফলে দেখা গেছে, ২০০১ থেকে ২০২০ সালের মধ্যে এই ভ্যাপসা গরমের জন্য মানুষদের বাইরে কাজ করা ক্রমেই কঠিন এবং বিপজ্জনক হয়ে উঠছে।
সবশেষ ২০ বছরে সারাবিশ্বে প্রতি বছর প্রায় ৬৭ হাজার ৭০০ কোটি কর্মঘণ্টা নষ্ট হয়েছে, যা আগের ২০ বছরে তুলনায় ৪০০ ঘণ্টা বেশি। টাকার অংকে এই ক্ষতির পরিমাণ প্রতি বছর দুই লাখ কোটি ডলারেরও বেশি।
এই ভ্যাপসা গরমের কারণে ভবিষ্যতে আরো কী ধরনের ক্ষতি হবে, সেই বিষয়টি তুলে ধরার পাশাপাশি উষ্ণতা বৃদ্ধির কারণে বিশ্বজুড়ে যে চলমান পরিস্থিতি সেটিও এই গবেষণায় গুরুত্ব পেয়েছে।
গবেষণায় জানানো হয়েছে, এমন প্রতিকূল পরিবেশের কারণে মানুষের অসুস্থতা ও মৃত্যুহার যেমন বাড়ছে। সেইসঙ্গে সিদ্ধান্ত নেয়ার ক্ষমতা এবং উৎপাদনশীলতা কমে যাচ্ছে। যার কারণে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে দেশের জিডিপিও।
এ ব্যাপারে ডিউক বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রধান গবেষক লুক পার্সনস বলেছেন, যদি বাইরে কাজ করা শ্রমিকরা এমন তাপমাত্রা এবং আর্দ্রতার কারণে তাদের উৎপাদনশীলতা হারায়, তাহলে গ্রীষ্মমণ্ডলীয় অঞ্চলে শ্রমের ক্ষতি প্রতি বছর ৫০০ থেকে ৬০০ ঘণ্টা পর্যন্ত হতে পারে, যা আগের গবেষণার দ্বিগুণ।
এই গবেষণা ফলাফলের সঙ্গে একমত প্রকাশ করে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগের শিক্ষক সায়মা হক বিদিশা জানান, এই হিউমিড হিট বা ভ্যাবসা গরম সরাসরি মানুষের স্বাস্থ্যের ওপর প্রভাব ফেলে। আর একজন কর্মক্ষম মানুষের স্বাস্থ্যের সঙ্গে অর্থনীতির বড় সংযোগ রয়েছে।
তিনি জানান, শীতের দেশের মানুষ যেমন গরম কাপড় পরে কিংবা হিটার জ্বালিয়ে, আগুন জ্বালিয়ে নিজেকে গরম রাখতে পারলেও বাংলাদেশে শ্রমজীবী মানুষদের এই গরম আবহাওয়া থেকে বাঁচার কোনো সুযোগ নেই। বাধ্য হয়েই তাদের এই বিরূপ আবহাওয়া সহ্য করতে হচ্ছে। মানুষ প্রচুর ঘামছে, সহজেই ক্লান্ত হয়ে যাচ্ছে। যার প্রভাব গিয়ে পড়ছে উৎপাদনশীলতায়।
সূত্র: বিবিসি