রোববার   ২৪ নভেম্বর ২০২৪   অগ্রাহায়ণ ১০ ১৪৩১   ২২ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

জোয়ারে ভরে পেট, ভাটায় ভেজে গলা

প্রকাশিত : ০৫:১৫ পিএম, ১৪ জানুয়ারি ২০২২ শুক্রবার

জোয়ারে-ভরে-পেট-ভাটায়-ভেজে-গলা

জোয়ারে-ভরে-পেট-ভাটায়-ভেজে-গলা

সম্পর্কিত খবর মেয়ে সপ্তমে, অন্তঃসত্ত্বা হতেই ধরা ১০ম শ্রেণির ‘প্রেমিক ছাত্র’ মেঘনা নদীর মাঝে গড়ে ওঠা দ্বীপ চরআব্দুল্লা। প্রায় তিন হাজার মানুষের বসতি এখানে। জীবিকার তাগিদে প্রায়ই পার হতে হয় নদী। তবে তাদের একমাত্র ভরসা নৌকা। কিন্তু শীত মৌসুম এলে চেয়ে থাকতে হয় জোয়ার-ভাটার দিকে। জোয়ার এলে প্রয়োজনীয় কাজ কিংবা বাজারে গেলেও ভাটায় থাকতে হয় আটকা। অপেক্ষা করতে হয় পরের জোয়ারের। অপেক্ষার প্রহর গুনতে গুনতে ক্ষুধা লাগলেও খান না ভারী কোনো খাবার। ভাটার সময় পানি খেয়েই পার করেন সময়।

এভাবেই দিন কাটে লক্ষ্মীপুরের রামগতি উপজেলার ৫ নম্বর চরআব্দুল্লা ইউনিয়নের বাসিন্দাদের। দুঃখ-দুর্দশা আর ঝড়-বৃষ্টি উপেক্ষা করেই চলছে তাদের জীবন।

পাড়ায় অপেক্ষায় মানুষ

চরআব্দুল্লা ইউনিয়নে তিন হাজার মানুষের বসবাস হলেও নেই কোনো সড়ক যোগাযোগ। উপজেলা থেকে বিচ্ছিন্ন দ্বীপের দূরত্ব ১৬ কিলোমিটার। মাঝখানে মেঘনা নদী।

সড়ক যোগাযোগ না থাকলেও চরে রয়েছে পুলিশ ক্যাম্প, কমিনিটি ক্লিনিক, প্রাথমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক বিদ্যালয়। তবে নদী পারাপারে তাদের ভরসা নৌকা। জীবনের ঝুঁকি জেনেও বাধ্য হয়ে নদী পার হতে হয় তাদের।

সাধারণত যানবাহন বা হেঁটে বাজারে যাওয়ার কথা। কিন্তু জীবিকার তাগিদে নৌকায় করে নদী পার হন চরআব্দুল্লার বাসিন্দারা। নদীর সামান্য ঢেউয়ে নৌকা উল্টে যাওয়ার ভয় থাকলেও প্রতিদিনই ঝুঁকি নিয়ে রওনা হন তারা।

সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, সকাল তখন ৭টা। মেঘনা নদীপাড়ে ছোট-বড় নৌকা। তাড়াহুড়ো করে নৌকায় উঠছে একদল মানুষ। গন্তব্য এপার থেকে ওপার। কথা হয় নৌকার যাত্রী শফিকুল ইসলামের সঙ্গে।

পারের অপেক্ষায়

তিনি বলেন, এ চরের মানুষরা ছোট-বড় নৌকায় করে ঝুঁকি নিয়ে ১২ মাস আলেকজান্ডার বাজারে যাতায়াত করেন। এ পর্যন্ত তিনবার নৌকাডুবির ঘটনা ঘটেছে। এর মধ্যে ২০০৩ সালে নৌকা ডুবে নারী-শিশুসহ কয়েকজন মারা গেছেন। তবু ঝুঁকি নিয়ে চলতে হয়। তবে এখানকার মানুষ সাঁতার জানায় দুর্ঘটনা ঘটলেও হতাহতের সংখ্যা কিছুটা কম হয়।

শীতকাল এলে নদীতে জোয়ার-ভাটাসহ পানিও কম থাকে। বিভিন্ন স্থানে দেখা দেয় ডুবোচর। তখন আবার ভিন্ন সমস্যা। কোনো যান-বাহন না চলায় জোয়ার-ভাটার ওপর নির্ভর করে নদী পারাপারের সময়সূচি। জোয়ার এলে কাজ কিংবা বাজারে যেতে পারেন এখানকার বাসিন্দারা। তবে ভাটা এলে বাজারেই আটকা পড়েন তারা। অপেক্ষা করতে হয় পরের জোয়ারের। মাঝে মধ্যে জোয়ার আসতে সন্ধ্যা ঘনিয়ে রাত নামলেও দেখা মেলে না।

স্থানীয় বাসিন্দা মো. আলমগীর বলেন, দরিদ্র পরিবারের হওয়ায় অনেক সময় জোয়ার-ভাটার অপেক্ষায় থাকা এসব মানুষ ক্ষুধা নিয়ে বাড়ি ফেরেন। বাড়ি ফিরলেই জীবন পান তারা। তবে ভাটা থাকলে পানি খেয়েই পার করেন সময়।

নৌকার মাঝি আব্দুল্যাহ বলেন, সকালে নদীতে জোয়ার আসে। এতে পানি থাকে বেশি। তাই সকালে বাজার কিংবা প্রয়োজনীয় কাজে বের হওয়ার সঠিক সময়। এ কারণে তাড়াহুড়ো করে নৌকায় ওঠেন অনেকে। কারণ ভাটা এলে পানি কমলে আটকা পড়তে হয়।