সোনার চর : চকচকে সেই বালুকাবেলা যেন এক সোনার থালা
প্রকাশিত : ০৪:৫৫ পিএম, ৬ জানুয়ারি ২০২২ বৃহস্পতিবার
সোনার-চরচকচকে-সেই-বালুকাবেলা-যেন-এক-সোনার-থালা
দ্বীপের নাম ‘সোনার চর’, তবে কোনো স্বর্ণ নেই এখনে। আছে সূর্যের আলোতে রাঙানো এক স্বর্ণময় বালুকাবেলা। দিগন্ত বিস্তৃত সাগরের নীল জলরাশি ঘেরা সোনারচর সমূদ্র সৈকতে বালিতে সূর্যের আলো প্রতিফলিত হয়ে যেন সোনার মতই মনে হয়।
পটুয়াখালী জেলায় অবস্থিত নয়ানাভিরাম একটি সমুদ্র সৈকতের নাম সোনারচর (Sonarchar)। পটুয়াখালীর গলাচিপা উপজেলা থেকে সোনারচরের দূরত্ব প্রায় ৮০ কিলোমিটার। সাগরের মাঝে অবস্থিত সোনারচর দ্বীপের দুর্গম ও বিপদসঙ্কুল যোগাযোগ ব্যবস্থা যেন সৌন্দর্য পাগল পর্যটকদের অদম্য ইচ্ছার কাছে হার মেনে যায় বারবার।
চঞ্চল সাগরের ঢেউ, জেলেদের মাছ ধরার দৃশ্য, সৈকত জুড়ে লাল কাঁকড়ার অবাধ বিচরণ এবং জীববৈচিত্রপূর্ণ ম্যানগ্রোভ বনাঞ্চল পর্যটকদের মোহিত করে আপন মহিমায়।
দ্বীপের ১২ কিলোমিটার সৈকতে রয়েছে লাল কাঁকড়া, বিভিন্ন প্রজাতির অতিথি পাখি, সামুদ্রিক বড় কাঁকড়া, কাশবন ও ঝাউবন। পুরো দ্বীপে রয়েছে আকাশমণি, গর্জন, সেগুন ও ম্যানগ্রোভ গাছপালা। জনমানবহীন এ দ্বীপে রয়েছে হিংস্র বন্য মহিষের পাল। এ ছাড়া হরিণ, শিয়াল, মেছোবাঘ, বন্য শূকর, অজগরসহ নানা প্রজাতির সরীসৃপের দেখা মেলে এ বনে।
আরো পড়ুন: ঝিলিমিলি : ভারতের এক মনোরম সৌন্দর্য
সোনারচর সমুদ্র সৈকতের দৈর্ঘ্য প্রায় ৩ কিলোমিটার। কুয়াকাটার মতো সোনাচর দ্বীপের একই স্থান থেকে সূর্যোদয় এবং সূর্যাস্থ উপভোগ করা যায়। সাগরে যখন জোয়ারের পানি উথলে ওঠে তখন অনন্য এক সৌন্দর্য বিকশিত হয় সোনারচরে। তবে এই অপার্থিব জায়গাটা এখনও প্রায় বিচ্ছিন্নই। বন বিভাগের আওতাধীন সোনার চর বন্য-প্রাণীর এক অভয়ারণ্য।
নির্জন শেষ বিকেলে সূর্যের ম্লান আলো যখন লালচে হয়ে সৈকতের বুকে ঢলে পড়ে তখন অবিশ্বাস্য এক মনোরম দৃশ্য চোখে পড়ে। সৈকতের বুকে আছড়ে পড়া আলোয় সাগরের পানির রং যেন সোনালী বর্ণের হয়ে যায়। আর বিকেলে সৈকতের চকচকে বালু কণা যেন লালচে হয়ে সোনার থালায় রূপ নেয়। দূর থেকে মনে হয় সাগরের বুকে একটি সোনার টুকরা এ যেন উপভোগ করার মতো দৃশ্য। এই বেলাভূমিতে গোধূলির রূপ আপনাকে আবদ্ধ করবে অপার মুগ্ধতায়।
আরো পড়ুন: যেসব তৃপ্তি দেবে দীঘা ভ্রমণ
ইচ্ছে করলে এখানে ক্যাম্পিং করা যায় তবে বন বিভাগের অনুমতি নিতে হবে। সোনার চর ভ্রমণ সেইন্ট মার্টিনের মতোই অ্যাডভেঞ্চারাস এবং আনন্দময়। গোলাচিপা থেকে লঞ্চে করে চর কাজল, রাঙ্গাবালী এবং চর মন্তাজ হয়ে সোনার চর যাবার পুরোটা পথই অপরূপ সুন্দর।
যাতায়াত
ঢাকার সদরঘাট থেকে লঞ্চে করে চর কাজল (ভাড়া ৩৫০ টাকা), চর কাজল থেকে ছোট লঞ্চে চর মন্তাজ (ভাড়া ৭০ টাকা)। তারপর রিজার্ভ ট্রলারে করে সোনার চর আসা-যাওয়া (ভাড়া ১৫০০ টাকা)।
থাকা-খাওয়া
সোনার চরে থাকা-খাওয়ার কোনো ব্যবস্থা নেই। তবে চর মন্তাজ ও রাঙাবালি দ্বীপে জনপ্রতি ১০০ টাকায় থাকার মতো বোর্ডিং আছে এবং অল্প টাকায় খাবারের হোটেলও রয়েছে।
সতর্কতা ও পরামর্শ
যেকোনো চর বা দ্বীপে ভ্রমণের জন্যে শীতকাল সবচেয়ে ভালো সময়। তাই অন্য সময় গেলে আবহাওয়া ও সেই সময় পানি পথে ভ্রমণের ক্ষেত্রে নিরাপদ কিনা তা জেনে যাওয়া ভালো। এ ছাড়া সোনারচর দুর্গম এলাকায় হওয়ায় সেখানে যেতে চাইলে সেই জায়গা সম্পর্কে ভালো করে জেনে নিতে হবে। নিজেদের নিরাপত্তার কথাও চিন্তা করতে হবে। সোনারচরে ক্যাম্পিং করে থাকতে গেলে বা ঘুরতে গেলে একসঙ্গে কয়েকজনের গ্রুপ করে গেলেই সবচেয়ে ভালো হবে।