সোমবার   ২৫ নভেম্বর ২০২৪   অগ্রাহায়ণ ১১ ১৪৩১   ২৩ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

দেখে আসুন সাগরের বুকে জেগে ওঠা ‘চর বিজয়’

প্রকাশিত : ০৩:৫৫ পিএম, ৪ জানুয়ারি ২০২২ মঙ্গলবার

দেখে-আসুন-সাগরের-বুকে-জেগে-ওঠা-চর-বিজয়

দেখে-আসুন-সাগরের-বুকে-জেগে-ওঠা-চর-বিজয়

বঙ্গোপসাগরের বুকে জেগে ওঠা এক নতুন ভূখণ্ডের নাম ‘চর বিজয়’ । যার চারদিকে ঢেউয়ের খেলা, রয়েছে অথৈ জলরাশি। সূর্যের আলোতে চিকচিক করে চরের বালুকাবেলা। বালিয়াড়িতে বিছিয়ে থাকে অগণিত লাল কাঁকড়া। সকাল থেকে সন্ধ্যা অবধি চরটি হরেক রকম পাখির কলতানে মুখরিত থাকে। নয়নাভিরাম নীল দিগন্তবিস্তৃত সৌন্দর্যের হাতছানি দিচ্ছে চরটি। সাগরের বুকে এ যেন অন্য এক বাংলাদেশ।

দেশের অন্যতম সমুদ্রসৈকত কুয়াকাটার গঙ্গামতী থেকে দক্ষিণ-পূর্ব কোণে প্রায় ৪০ কিলোমিটার দূরে গভীর সাগরে জেগে আছে মনোমুগ্ধকর এই দ্বীপ ‘চর বিজয়’। দ্বীপটি পূর্ব-পশ্চিম দিকে লম্বা। দৈর্ঘ্যে প্রায় ১০ কিলোমিটার ও প্রস্থে তিন কিলোমিটার হলেও জোয়ারের সময় এর দৈর্ঘ্যে কমে যায়। পানিতে তলিয়ে যাওয়ার পরে দ্বীপটির দৈর্ঘ্যে চোখে পড়ে তিন কিলোমিটার এবং প্রস্থে এক কিলোমিটার। বর্ষা মৌসুমের ছয় মাস দ্বীপটি সাগরের জলরাশির নিচে হাটু পরিমাণ ঢাকা থাকে। তবে শীত মৌসুমে উঁকি দেয়। প্রান্তিক জেলেরা তখন মাছ ধরতে সাগরে যায় ও মাঝেমধ্যে দ্বীপেই অবস্থান করে। এ ছাড়াও চরে ছোট ছোট ডেরা তৈরি করে মাছ শিকার ও শুঁটকি করার জন্য দুই তিন মাস চরে থাকেন জেলেরা।

২০১৭ সালে ভ্রমণ পিপাসুদের একটি দল দ্বীপটির সন্ধান পায়। বঙ্গোপসাগরে মাছ ধরা জেলেদের মুখে বিবরণ শুনে  দলটি ২০১৭ সালের ৫ ডিসেম্বর দ্বীপে পৌঁছায়। এর আগেই জেলেরা স্থানীয়ভাবে দ্বীপটির নামকরণ করেন ‘হাইরের চর’। জেলেদের ভাষায় ‘হাইর’ হলো মাছ ধরার নির্ধারিত সীমানা।

সাগরের বুকে জেগে ওঠা চর বিজয়। ছবি : লেখক

দ্বীপে পৌঁছে ভ্রমণপিপাসু দলটি দ্বীপটির নাম দেয় ‘চর বিজয়’। বিজয়ের মাসে চরটি আবিষ্কার করায় চর শব্দের সঙ্গে বিজয় শব্দটি যুক্ত করে লাল সবুজের জাতীয় পতাকা উত্তোলন করেন তারা।

আরো পড়ুন : উপকূলীয় সৌন্দর্যের লীলাভূমি ‘তাড়ুয়া সমুদ্র সৈকত’

সম্ভাবনাময় এই চর বিজয় ইতোমধ্যে সমুদ্রসৈকত কুয়াকাটায় আগত পর্যটকদের দৃষ্টি কেড়েছে। দেশি-বিদেশি পর্যটকদের কাছে চরটিকে আরো আকর্ষণীয় করে তুলতে ও নিরাপদ ভ্রমণের সম্ভাব্যতা নিশ্চিত করতে ২০১৭ সালে পটুয়াখালী জেলা প্রশাসন, কুয়াকাটা পৌর প্রশাসন, বন বিভাগ, টুরিস্ট পুলিশ, নৌ পুলিশ, হোটেল মালিক সমিতি, পর্যটন ব্যবসায়ীরাসহ বিভিন্ন সংগঠনের লোকজন চরটি পরিদর্শন করে ম্যানগ্রোভ প্রজাতির বাগান সৃজনের জন্য প্রায় দুই হাজার গোল, ছইলা, কেওড়া ও সুন্দরী গাছের চারা রোপণের মাধ্যমে আনুষ্ঠানিকভাবে জাতীয় পতাকা ও সাইনবোর্ড টানিয়ে চরের নামকরণ করেন ‘চর বিজয়’।

সাগরের বুকে জেগে ওঠা চর বিজয়ে পর্যটকরা। ছবি : লেখক

যাতায়াত

ঢাকার সায়েদাবাদ ও গাবতলি থেকে প্রতিদিন সকাল ও সন্ধ্যায় একাধিক বাস ছাড়ে কুয়াকাটার উদ্দেশ্যে। ভাড়া জনপ্রতি ৬০০-৮০০ টাকা। নৌপথে ভ্রমণ করতে চাইলে বরগুনার আমতলী রুটের লঞ্চে যেতে পারবেন। ঢাকার সদরঘাট থেকে প্রতিদিন সন্ধ্যা ৬টায় ছেড়ে যাওয়া এসব লঞ্চ আমতলী পৌঁছাবে সকাল ৭টার দিকে। ডাবল কেবিনের ভাড়া দুই হাজার ২০০ টাকা। সিঙ্গেল কেবিন ভাড়া এক হাজার ২০০ টাকা। আর ডেকের ভাড়া ২৫০-৩০০ টাকা। আমতলী থেকে স্থানীয় যানবাহনে যেতে হবে কুয়াকাটা পর্যন্ত। সেক্ষেত্রে আরও ১০০ টাকা খরচ হবে। কুয়াকাটা সমুদ্র সৈকতে পৌঁছে বোটে করে সোজা চর বিজয়। মাত্র দেড় ঘণ্টায় পৌঁছানো যাবে দ্বীপটিতে। টুরিস্ট বোটে জনপ্রতি খরচ লাগবে ৮০০ থেকে এক হাজার টাকা।

চর বিজয়। ছবি লেখক

থাকা-খাওয়া

কুয়াকাটায় থাকার অনেক আবাসিক হোটেল রয়েছে। এসব হোটেলে ৫০০ টাকা থেকে ১০ হাজার টাকা ভাড়ায় কামরা পাবেন। আর খাওয়ার জন্য এখানে মিলবে নানা জাতের সামুদ্রিক মাছ। এর মধ্যে ইলিশ, পোমা, রূপচাদা, চিংড়ি, ট্যাংরা, টুনা, কোরালসহ নানা জাতের মাছ পাবেন রেস্তোরাঁগুলোতে। এ ছাড়াও শুঁটকি রান্না ও মাছ ভর্তা তো রয়েছেই। বিকেল থেকেই সৈকতে মিলবে কাকড়া ফ্রাই ও বিভিন্ন প্রকার মাছের বারবিকিউ। তবে চর বিজয়ে থাকা খাওয়ার ব্যবস্থা নেই। সেখানে থাকতে চাইলে- খাবার, পানি, তাবুসহ অন্যন্য প্রয়োজনীয় সব সামগ্রী নিজেদেরকেই সঙ্গে করে নিয়ে আসতে হবে।

তাই একবার ঘুরে দেখে আসতে পারেন সাগরের বুকে জেগে ওঠা 'চর বিজয়' খেকে।