রোববার   ২৪ নভেম্বর ২০২৪   অগ্রাহায়ণ ১০ ১৪৩১   ২২ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

‘নারী’তে রূপ নিতে ভারতে বাংলাদেশি যুবক, অতঃপর...

প্রকাশিত : ০৫:১০ পিএম, ২৫ মে ২০১৯ শনিবার

নারীতে-রূপ-নিতে-ভারতে-বাংলাদেশি-যুবক-অতপর

নারীতে-রূপ-নিতে-ভারতে-বাংলাদেশি-যুবক-অতপর

সম্প্রতি খবর মিলেছে, ভারতের একটি হাসপাতালে বাংলাদেশি এক যুবকের অস্ত্রোপচার সম্পন্ন হয়েছে। তবে এটি কোনো সামান্য অস্ত্রোপচার নয়, ওই যুবক নাকি সেখানে ভর্তি হয়েছেন নিজের লিঙ্গ রুপান্তরের জন্য। তিনি নাকি অনেকদিন ধরে নিজেকে পরিবর্তন করতে চাইছিলেন। তাই ‘নারী’ হতে গুজরাটের ভডোদারার হাসপাতালে সম্প্রতি অস্ত্রোপচারটি সেরেছেন।  

এদিকে, এই খবর দিয়েছে ভারতের জনপ্রিয় সংবাদ মাধ্যম টাইমস অব ইন্ডিয়া। তাদের দেয়া প্রতিবেদনটিতে বলা হয়েছে, এই প্রথম কোনো বিদেশির (বাংলাদেশি) লিঙ্গ পরিবর্তনে অস্ত্রোপচার করে এই হাসপাতালটি (গুজরাটের ভডোদারার) নতুন রেকর্ড গড়েছে। এর আগে, এখানকার চিকিৎসকরা কোনো রূপান্তরকামীর স্তনের জন্য কখনো গ্রাফটিংয়ের কাজ করেননি। তাই এটাও এখানকার চিকিৎসকদের জন্য নতুন একটি রেকর্ড হিসেবে অভিহিত করা হতে পারে। তবে এর আগে নাকি ভডোদারার হাসপাতালের চিকিৎসকরা ১২ থেকে ১৫ জন ভারতীয়কে নারীতে রূপান্তরে অস্ত্রোপচার করেছে। তবে বাইরের নাগরিক হিসেবে নাকি এটাই প্রথম! এর মাধ্যমে সেক্স রিঅ্যাসাইমেন্ট সার্জারির (এসআরএস) ক্ষেত্রে ভডোদারা হাসপাতাল একটি নতুন অধ্যায় খুলেছে বলেও মন্তব্য করেছে এই সংবাদ মাধ্যমটি। 
 
এদিকে জানা গেছে, ২৬ বছর বয়সী বাংলাদেশি ওই যুবক নাকি পেশায় একজন বাবুর্চি। গুজরাটে যাওয়ার পূর্বে এখানকার ডাক্তারদের বিষয়ে তিনি সোশ্যাল মিডিয়ার মাধ্যমে জানতে পারেন। এবং অনলাইনে যোগাযোগ করেই শহরভিত্তিক হাসপাতালটি বেছে নেন। তবে এর আগে নাকি, অনেকদিন ধরে ওই বাবুর্চি নিজেকে পরিবর্তনের জন্য হন্যে হয়ে হাসপাতাল খুঁজছিলেন। পরে এই হাসপাতালটি পেয়ে তিনি নিমিষেই সেখানে সার্জারি করাতে রাজি হন।

বাবুর্চির বিষয়ে টাইমস অব ইন্ডিয়াকে দেয়া এক সাক্ষাৎকারে তার ভাই ইকবাল বলেন, আমরা প্রথমে বড় ভাইকে রূপান্তরকামী করতে বাংলাদেশি ডাক্তারদের পরামর্শ নিয়েছিলাম কিন্তু তারা আমাদের অপারগতা দেখিয়েছেন। বলেছেন এসআরএস সুবিধা দিতে তারা সক্ষম নন। পরে তারা আমাদের কিছু পরামর্শ দেয়, তাতে বাংলাদেশি ডাক্তাররা এখানকার ডাক্তারদের কথা বলেন। পরে তাদের কথা শুনে আমরা ইন্টারনেটে খবর নেয়। পরে ভাইকে এখানে নিয়ে আসি।

তবে ইকবালের ভাইয়ের নাকি বাংলাদেশে স্যালুন ব্যবসা রয়েছে। তার ভাই নাকি তার দোকানে গিয়ে সবসময় পুরুষ হিসেবে অস্বস্তিকর অবস্থার কথা বলত এবং প্রায়ই লিঙ্গ পরিবর্তনের বিষয়ে ইচ্ছা ব্যক্ত করতো। তাই ভাইয়ের কথা চিন্তা করে এই ধরনের সিদ্ধান্তে রাজি হয়েছেন তিনি।

এদিকে, ভারতের ওই হাসপাতালের প্রস্রাব বিশেষজ্ঞ ও অ্যান্ড্রোলজিস্ট সঞ্জীব শাহ বলেন, আমরা এর আগে ১২ থেকে ১৫ জনকে সফল অপারেশন সফলভাবে সম্পন্ন করেছি, তবে বিদেশ থেকে রোগীর সার্জারি পরিচালনার জন্য এটিই প্রথম। সঞ্জীব শাহ আরো বলেন, রোগী এখন ফ্যাট গ্রাফটিং অস্ত্রোপচার সম্পন্ন করেছে। এরপর তার অণ্ডকোষ অপসারণ করা হবে। আর এখন আমরা তার হরমোন থেরাপির দিকে যাব। এরপর তার জরায়ু পুনর্গঠনের (ভেজাইনাল রিকন্সট্রাকশন) কাজ সম্পন্ন করব।

তবে এই অপারেশনের টিমে সঞ্জীব ছাড়াও অন্যদের মধ্যে ছিলেন, প্লাস্টিক সার্জন ডা. উমেশ শাহ, ফিজিয়াট্রিস্ট ড. গৌতম আমিন এবং মেডিকো-লিগ্যাল বিশেষজ্ঞ ডা. বিজয় শাহ। তারা প্রত্যেকে সংবাদ মাধ্যমটিতে কথা বলেছেন। লিঙ্গ রূপান্তরের ব্যাপারে প্লাস্টিক সার্জন ডা. উমেশ শাহ বলেন, আমরা এর আগে সিলিকন স্তন ইমপ্ল্যান্ট করেছি। ভারতীয় রোগীদের বেলায় এই পদ্ধতি গ্রহণ করেছিলাম। কিন্তু এই রোগীর ক্ষেত্রে আমরা বিকল্প পদ্ধতি বেছে নিয়েছি। যা আমরা আগে কখনো করিনি। আমরা দেখলাম এই রোগী মোটা। তার শরীরে বেশ চর্বি আছে। তাই আমরা স্তন তৈরিতে ফ্যাট গ্রাফটিং বেছে নিয়েছি, যা একটি নতুন স্তন পুনর্গঠন কৌশল হিসাবে আমাদের প্রথম পরীক্ষা।

আর ফিজিয়াট্রিস্ট ডাক্তার গৌতম আমিন বলেন, এসআরএস বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেয়ার আগে আমাদের প্রথম জানা উচিত, রোগী লিঙ্গভীতি রোগে আক্রান্ত কিনা? কোনো ব্যক্তি তার জন্মগত যৌনতা এবং লিঙ্গের কারণে নিজেদের দুর্দশাগ্রস্তভাবে কিনা? 

আমার এই আলোচনায় রূপান্তরিত লিঙ্গ সম্পর্কে বলা হয়েছে। আমরা হয়ত অনেকেই এই শব্দের সঙ্গে পরিচিত না। তাই প্রথমে জেনে নিই রূপান্তরিত লিঙ্গ বলতে কী বুঝায়? রূপান্তরিত লিঙ্গের (পুরুষ থেকে নারী হতে চাওয়া) ব্যক্তিরা হলো- সেসব ব্যক্তির মানসিক লিঙ্গবোধ জন্মগত লিঙ্গ চিহ্ন হতে ভিন্ন। অর্থাৎ যারা তাদের লিঙ্গ পরিবর্তন করতে ডাক্তারি সাহায্য কামনা করে তাদেরকে অনেকসময় রূপান্তরকামী নামে ডাকা হয়। এছাড়াও রূপান্তরিত লিঙ্গ একটি শ্রেণিগত পরিভাষা: যাতে এমন ব্যক্তিদেরও যোগ করা হয়, যাদের মানসিক লিঙ্গবোধ তাদের জন্মগত লিঙ্গচিহ্নের বিপরীত (রূপান্তরকামী পুরুষ বা রূপান্তরকামী নারী)।

এছাড়াও এতে এমন শ্রেণিও অন্তর্ভুক্ত হয়, যারা স্পষ্টভাবে নারীসুলভ বা পুরুষসুলভ নয় (জেন্ডারক্যুয়্যার বা বিচিত্রলিঙ্গ, যেমন দ্বৈতলিঙ্গ, সর্বলিঙ্গ, লিঙ্গতরল, বা অলিঙ্গ)। এছাড়া তৃতীয় লিঙ্গের ব্যক্তিরাও এই রূপান্তরিত লিঙ্গের অন্তর্ভুক্ত। তবে মাঝে মাঝে, বিস্তৃত পরিভাষায় রূপান্তরিত লিঙ্গ বোঝাতে ক্রস-ড্রেসার বা বিপরীত লিঙ্গের পোশাক পরিধানকারীদেরকেও বোঝানো হয়।



দৈনিক প্রভাতী/এসআই