রোববার   ২৪ নভেম্বর ২০২৪   অগ্রাহায়ণ ১০ ১৪৩১   ২২ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

দিদি ।। মোর্শেদ হাবীব সোহেল

দৈনিক প্রভাতী

প্রকাশিত : ১২:৫০ এএম, ২৩ মে ২০১৯ বৃহস্পতিবার

দিদি ।। মোর্শেদ হাবীব সোহেল

দিদি ।। মোর্শেদ হাবীব সোহেল

-কিরে, চুপ করে আছিস কেন? কিছু বল! 
-ও হ্যাঁ কি যেন বললে?
-মানে কী? এতক্ষণ কোথায় ছিলি? আমার একটা মেসেজও পড়িসনি? মাইর খাবি কিন্তু।
-আরে ছিলাম তো। আর ওই বুড়ো ব্যাটার কথাও পড়লাম। আমি বলি কি, তুমি রাজি হয়ে যাও। বুড়ো প্রেমিক। খারাপ না। বেশ হবে। হাহাহা...
-এবার কিন্তু সত্যই মাইর খাবি।


 
এভাবেই ফেইসবুক মেসেঞ্জার এ কথা চলছিল কৌশিক আর আভা'র মাঝে।
কৌশিক, একটা অন্যরকম ছেলে। লাজুক, চঞ্চল, অল্পভাষি কিংবা বাচাল সব শ্রেণিতেই ফেলানো যায়। অপরিচিত কারো সাথে খুব কম কথা বলে। কিন্তু পরিচিতদের সাথে সবসময় হাসি ঠাট্টা করে। কৌশিক কবিতা লেখে। ও জানে যে এই আধুনিক ফেইসবুক এর যুগে ওর কবিতা পড়ার মত কেউ নেই। তবুও লেখে। সখের বশে। পাঠক নেই বলা যাবে না। একজন পাঠক আছে। নিয়মিত পাঠক। আভা। কৌশিক এর একমাত্র বন্ধু। দুজনের মাঝে খুব ভাব। আর খুনসুটি তো লেগেই আছে। সব কথায় কৌশিক মজা করতে ছাড়ে না। আর সেটা নিয়েই চলে হাসাহাসি, রাগারাগি। দিনের কখন কী হয় সব জানা চাই একে অপরের। এত কিছুর মাঝে আরোও একটা সম্পর্ক ওদের মাঝে গড়ে উঠেছে। ভাই-বোনের সম্পর্ক। কৌশিক আভাকে দিদি বলে ডাকে। আর এই দিদি ডাকটা কৌশিক এর ঠিক অন্তর থেকেই আসে। দিদিকে সে খুব ভালবাসে। তাইতো একদিন কথা না বলে থাকতেই পারে না।

কৌশিক আর আভার পরিচয় প্রায় তিন বছর, ফেইসবুক এ। লেখালেখি করতে গিয়েই দুজনের পরিচয়। আভাও কবিতা লেখে। নিতান্ত সময় কাটানোর জন্য। তবে এই সময় কাটানোটা যে ফেইসবুক আশক্তিতে পরিণত হবে তা কৌশিক কিংবা আভা কেউ জানতো না। কৌশিকের কাছে আভা হল অপার স্বাধীনতার প্রতিচ্ছবি। মন খুলে গল্প করা, গলা ছাড়িয়ে কবিতা আবৃতি কিংবা কথায় কথায় দিদিকে রাগানো, হাসাহাসি সব চলে। তবে মাঝে মাঝে কেমন যেন অচেনা লাগে। মনে হয় একটু বেশিই রিঅ্যাক্ট করে। তারপর আবার সব ঠিক। সব মিলিয়ে কৌশিক দিদিকে নিয়ে অনেক সুখী।


 
-এই কৌশিক, কি করছিস?
-কিছু না। তুমি?
-মেজাজ টা খুব খারাপ।
-কেন?
-আর বলিস না। আমি ফেইসবুক এ আর থাকবই না।
-কেন? কি হল আবার? 
-সব পুরুষই এক। কোথাকার কোন এক ছেলে আমাকে কিসব বলে জানিস? বলে কিনা আমাকে ভালবাসে। 
-তুমি বল নি যে তোমার স্বামী আছে? একটা ছেলেও আছে।
-বলছি। বিশ্বাস করে না।
-তাহলে ব্যাটাকে ব্লক মারো। শিক্ষা হওয়া দরকার।
-হ্যাঁ দিয়েছি।
-ভাল করেছ।
-বাই দ্য ওয়ে, আমিও তো একটা ছোট খাট পুরুষ।


 
-তুই তো একটা পিচ্চি। তোকে পুরুষ বলবে তোর ক্লাশের ওই পিচ্চি মেয়েগুলো। আর তুই তো আমার ভাই। তোর কথা আলাদা।
এমনি কথা আভা কৌশিক কে মাঝে মাঝেই বলত। আভা’র স্বামী সন্তান আছে। স্বামী কি যেন ব্যবসা করে আর ছেলে সম্পর্কে কিছু খুলে বলে না। কখনো বলে ছোট আবার কখনো বলে স্কুলে পড়ে। নামটাও ঠিকভাবে বলে না। কৌশিক অনেক জিজ্ঞেস করেছে কিন্তু আভা কিছুই বলেনি। প্রসঙ্গটা এড়িয়ে গেছে। পরে কৌশিক আর প্রসঙ্গটা তোলেনি। কৌশিকের কাছে ব্যাপারটা কেমন যেন রহস্যময় লাগে। কৌশিক মাঝে মাঝে দিদিকে নিয়ে চিন্তায় থাকে। হঠাৎ দিদির রেগে যাওয়া, সারাদিন ফেইসবুক বন্ধুদের নিয়ে ঝামেলা কৌশিক কে ভাবিয়ে তোলে। তবে ইদানীং সে এসব কে একটু হালকাভাবেই নেয়। কারন এসব আর নতুন কিছু নয়। তবে একটা চিন্তা থেকেই যায়। দিদির স্বামীর সাথে সম্পর্ক খুব একটা ভাল না।

-কৌশিক, কি করছিস?
-কিছু না। তুমি কি কর?
-বসে আছি।
-দুলাভাই কই? 
-শয়তানটার কথা বলিস না তো।
-কেন কি হয়েছে?
-কি আর হবে। থাকি একটা জানোয়ারের সাথে।


 
এমন কথায় কৌশিক এর বুকের ভিতরটা অজানা বিপদের আশঙ্কায় কেঁপে ওঠে। মাঝেই মাঝেই দিদি কৌশিক এর কাছে ইঙ্গিতে নালিশ করত। স্বামীর সাথে ঝগড়া হয়। এই চিন্তাটা কৌশিক কে খুব পিড়া দেয়। কিন্তু কিছু করতে পারে না। একবার কৌশিক এর সাথে আভা'র বড় বোন অপলার ফেইসবুক এ কথা হয়। তিনিও এই একই কথা বলেন। আভা'র স্বামী তার ওপর অত্যাচার করে, গায়ে হাত তোলে। শুনে কৌশিক এর ভিতরটা আর্তনাদ করে কেঁদে ওঠে। সেই থেকে সে দিদির খবর বেশি করে নেয়। কৌশিক অনেকবার দেখা করতে চেয়েছে। কিন্তু আভা রাজি হয় নি। এমনকি একটা ফটো পর্যন্ত দেখায় নি। দিদি টা দেখতে কেমন, আসলেই দিদির মত নাকি আন্টির মত দেখতে সেটাও সে জানে না। তবুও কৌশিক দিদিকে অনেক ভালবাসে। 

-কিরে গাঁধা, কোথায় তুই?
-কি? আমি গাঁধা?
-হ্যাঁ, পিচ্চি গাঁধা। হাহাহা…
-ভাল।
-আচ্ছা তুই আমার কবিতা আজকাল পড়িস না কেন?
-পড়ি তো। সবগুলোই পড়ি। 
-আচ্ছা শোন, বই মেলায় একটা বই বের করলে কেমন হয়? 
-বল কি ! বই বের করবে ! অনেক ভাল হবে।
-হুম, সব কিছু ঠিক করছি তোকে আগেই বলি নি। কাল পান্ডুলিপি জমা দিয়ে এলাম। 
-তাই নাকি ! আমি তোমার বই সবার আগে কিনব।

বই মেলায় বই এলো। কৌশিক বই কিনতে গিয়ে শোনে যে তার আগেই কে যেন এক কপি কিনেছে। আভাকে বলেছিল বই মেলায় দেখা করবে। কিন্তু আসেনি। কৌশিক একটু মন খারাপ করে। তারপর কৌশিক বই মেলায় অনেক বার গেল। বইয়ের স্টলে খোঁজ নিয়ে জানতে পারল মাত্র দুই কপি বিক্রি হয়েছে।
-তুই নাকি আমার বই সবার আগে কিনিস?
-হ্যাঁ তাই তো চেয়েছিলাম। কিন্তু প্রথম টা কে কিনল?
-আছে একজন। তার কাছে তুই হেরে গেলি।
কৌশিকের কাছে এই একজন টাও একটা রহস্য। এই রকম আভাস অনেক পেয়েছে কিন্তু বিস্তারিত পরিচয় কখনো পায়নি। 
-কৌশিক, তোর পরীক্ষা কবে?
-পরীক্ষা তো শেষ।
-তাহলে কাল সকালে আমার বাড়ি চলে আয়।
-হঠাৎ বাড়িতে তলব !
-আগে আয়। তারপর দেখবি। আসবি কিন্তু। না এলে খবর আছে।
-জোহুকুম মহারানী। হাহাহা…


 
পরদিন সকালে কৌশিক বেড়িয়ে পরল। ঠিকানামত পৌঁছে কৌশিক তো রীতিমত অবাক। গাজীপুরের নিরিবিলি এলাকায় এত সুন্দর এত বড় বাড়ি। বাগান বাড়ি। গাছপালায় ভরপুর বিশাল জায়গা জুড়ে একটি বাড়ি। সামনে একটা বিশাল আঙ্গিনা সহ উঁচু প্রাচীরে ঘেরা একটা দোতলা বাড়ি। ভিতরে ঢুকতেই চোখে পড়ে আঙ্গিনার বাগানে একটা মেয়ে দাঁড়িয়ে। কৌশিক বুঝে গেল এই সেই দিদি। খুব মার্জিত পোশাকে দিদিকে ঠিক দিদির মতই লাগছে, আন্টির মত না। মেয়েটি এরপর কাছে এসে বলল আমি তোমার দিদি না। তোমার দিদি উপরে আছে, চল। কৌশিক ভাবল হয়তো তার অনুমান ভুল। সে মেয়েটির পেছন পেছন দোতলায় উঠল। হঠাৎ মেয়েটি জোড়ে হেসে উঠল।

-হাহাহাহা…এই তোর দিদির প্রতি ভালবাসা? খুব তো চাপা মারছিলি যে আমার চোখ দেখেই চিনে ফেলবি? কই, চিনলি না তো।
-তার মানে তুমিই আভা’দি? 
-যা বাবা, এখনো চিনতে পারিস নি?
-না, আমি আগেই চিনে ফেলছি। কিন্তু তুমি এমন চালাকি করবে ভাবিনি।
-তা তো দেখতেই পারলাম। কেমন বোকা তুই। তুই আমার ভাই? তোকে তো অল্পতেই বোকা বানানো যায়। ঢাকায় চলাফেরা করিস কিভাবে? চল এবার ফ্রেস হয়ে নে। তোর রুম দেখিয়ে দেই।
আভা কৌশিককে একটা ছিমছাম রুমে নিয়ে গেল। কৌশিক ফ্রেস হয়ে এল। আভা ততক্ষণে চা নিয়ে হাজির। 
-কিরে, হল?
-হ্যাঁ।
-তারপর, কেমন দেখলি দিদিকে? তুই তো ভেবেছিলি নিশ্চয় আন্টি টাইপের হবে। তাই না?
-মোটেও না। ঠিক যা ভেবেছিলাম তুমি তাই। 
-তাহলে চিনলি না কেন? তুই আসলে সারা জীবন গাঁধাই থেকে যাবি। তুই এত বোকা কেন রে? একটু চালাক হওয়ার চেষ্টা কর।
-আরে আমি প্রথমে তোমাকেই ভাবছি। কিন্তু তুমি এমন ভাবে বললে বিশ্বাস না করে উপায় ছিল না।
-হাহাহাহা…
আর তুই এত শুকনা কেন? কিছু খাস না? 
এরপর দুজন অনেক গল্প করল। বিকেলে ঘুরতে বের হবে এমন সময় কাজের মেয়েটা এসে বলল, 
-দিদি কই যাচ্ছেন? দাদাবাবু এস পড়বে এখনই। 


 
কথাটা বলতেই আভা অস্বাভাবিক রেগে মেয়েটাকে একটা চড় মারল আর অনেক বকা দিল। কৌশিকের কাছে ব্যপারটা কেমন যেন লাগল। আভা পিচ্ছি মেয়েটার কথায় এমন রিঅ্যাক্ট করল কেন? মেয়েটাই বা কেন কথাটা বলল? তারপর দুজন বাড়ির পাশের একটা রাস্তা ধরে হাটতে লাগল। দুপাশে শাল বন। রাস্তার দুপাশ উচু আর উচু উচু শাল গাছে ঢাকা। রাস্তাটা ধীরে ধীরে ঘন জঙ্গলে চলে গেছে। সন্ধ্যা হয়ে আসছে। আর হাটতে হাটতে ওরা অনেকদূর এসে গেছে। কৌশিক আভা কে ফিরে যাওয়ার কথা বলল। কিন্তু আভা শুনছেই না। হেটেই চলছে আর নিজের মত গল্প করেই যাচ্ছে। কৌশিকের একটু একটু ভয় করছে। জায়গাটা কেমন ছমছমে। হঠাৎ পিছন থেকে কার যেন ডাক শুনতে পেল কৌশিক।
কে যেন চিৎকার করে বলছে “আভা, এই আভা।”
-দিদি, কে যেন ডাকছে।
ততক্ষণে লোকটা কাছে এল। মনে হয় খুব দ্রুত পায়ে এসেছে। একটু একটু হাপাচ্ছে।
আভা বলল,
-দাদা, কি হয়েছে? আমি আজ ঘুরতে এসেছি।
-হ্যাঁ, অনেক হয়েছে। সন্ধ্যা হয়ে এসেছে এবার বাড়ি চল।(শান্ত কন্ঠে)
-আচ্ছা। ও হ্যাঁ তোমাকে তো পরিচয় করেই দেই নি। এই হল কৌশিক। তোমাকে তো বলেছিলাম। 
কৌশিক ভদ্রলোকের পরিচয় পেল। আভার একমাত্র বড় ভাই। কৌশিক ভেবেছিল এটা আভার স্বামীর বাড়ি কিন্তু এখন জানতে পারল এটা আভার বাবার বাড়ি। তাহলে আভার স্বামী কোথায়? 
বাড়ি আসার পথে জানতে পারল আভা’র দাদার সন্তানাদি নেই। বিয়ের এক বছর পর দাদার স্ত্রী মারা যায়। তারপর আর বিয়ে করেনি। বাড়ি এসে তিনজন অনেক গল্প করল, হাসাহাসি, গান কবিতা সব হল। তারপর শুতে গেল। শোয়ার আগে আভা কৌশকের রুমে এল।
-কিরে একা থাকতে পারবি তো? নাকি ভয় পাবি?
-কিযে বল। আমি কি এখনো ছোট আছি?
-ঠিক আছে ঘুমা আমি যাই। গুড নাইট
গুড নাইট।
সকালে উঠে নাস্তা খাওয়ার সময় দাদার সাথে কথা হল কৌশিকের।
-তোমার কথা অনেক শুনেছি। আজ আমি অনেক খুশি। তুমি আসাতে অনেকদিন পর আভা বাইরে বেরিয়েছে। বাড়িটা কেমন প্রাণ ফিরে পেয়েছে। তোমরা থাক আমি অফিস থেকে আসি।

বলেই দাদা চলে গেল। কৌশিক একটা গোলক ধাধার মাঝে পড়ে গেল। আভা অনেকদিন পর বাইরে বের হল মানে কি? এতদিন আভা কোথায় ছিল? সারাদিন আভা আর কৌশিক অনেক গল্প করল। আভা তার কম্পিউটার দেখাল, ফেইসবুক এর সব বন্ধুদের সম্পর্কে বলল, দিনটা খুব ভাল কাটল। সন্ধ্যা বেলা দাদার সাথে আরো একটা লোক আসলো। তাকে দেখেই আভা বলল,
-কি ব্যাপার, তোর না কাল আসার কথা ছিল?
-স্যরি, কাল একটু ব্যস্ত ছিলাম। তাই আসা হল না।

কৌশিক ভদ্রলোকের পরিচয় পেল। এই সেই ভদ্রলোক যে আভা’র বইয়ের প্রথম কপি কিনেছিল। আভা’র ছোটবেলার বন্ধু। রাহুল।
রাতের খাবারের আগে দাদা,রাহুল আর কৌশিক ছাদে বসে আড্ডা দিচ্ছিল এমন সময় গাড়ি করে এক ভদ্রলোক এল। রাহুল তাকে সোজা ছাদে আসার জন্য বলল। তারপর তার সাথে কৌশিকের পরিচয় হল। আভা’র স্বামী। সবাই মিলে এবার গল্প শুরু করল। এমন সময় আভা চা নিয়ে হাজির। কিন্তু স্বামীকে দেখে আভা খুব রেগে গিয়ে বলল,
-তুমি কেন এসেছ? তোমাকে না সেদিনই বললাম আর কখনো আসবে না। রাহুল, এই শয়তানটার সাথে তুই কি গল্প করছিস? ওকে এখান থেকে এখনই যেতে বল।
কৌশিক অপ্রস্তুত হয়ে দেখতে লাগল। আভা’র দাদা ওকে বাঁধা দিতে গেল কিন্তু তাতে ও আরো বেশি রেগে গেল। দাদার হাত ঝটকা মেরে পাশেই থাকা একটা ফুলের টব নিয়ে ওর স্বামীর কপালে ছুড়ে মারল। সবাই আভা’র স্বামীর দিকে এগিয়ে গেল। কপাল থেকে রক্ত ঝড়ছে। হঠাৎ কৌশিক তাকিয়ে দেখে আভা ছাদের কার্নিশে নেই। দৌড়ে গিয়ে নিচে তাকিয়ে দেখে আভা নিচে পড়ে আছে। রক্ত দিয়ে ধীরে ধীরে মাটি ভিজে যাচ্ছে। কৌশিক দিদি বলে চিৎকার করে ওঠে। তারপর দৌড়ে নিচে নেমে দেখে আভা’র নিথর দেহটা পড়ে আছে। রাহুল এসে হাতটা নিয়ে পালস দেখে মাথা ঝুকে চোখের জল মুছল। কৌশিক পাগলের মত আভাকে বুকে জড়িয়ে চিৎকার করে কেঁদে উঠল। ওর দুষ্টু দিদিটা ওকে ছেড়ে চলে গেল।


 
পরদিন আভা’র সৎকার করে কৌশিক ফিরে এল। এর পর থেকেই কৌশিক ফেইসবুকে বসলেই কাঁদে।  মেসেঞ্জার বক্স’র মেসেজগুলো পড়ে আর কাঁদে। কৌশিকের ঘরের সব জায়গায় আভার স্মৃতি। আভার বই, চিঠি, বিছানায় শুয়ে চ্যাটিং সবখানে। কৌশিক আর আগের মত নেই। আগের মত কারো সাথে কথা বলে না। খুব শান্ত হয়ে গেছে। সেদিন ফেরার আগে জানতে পারল যে আভা একটা মানসিক রোগী ছিল। আভা প্রেম করে বিয়ে করেছিল। একটা ছেলে ছিল। কিন্তু একদিন একটা দুর্ঘটনায় ওর ছেলে মারা যায় আর আভা পাগল হয়ে যায়। সেই থেকেই আভা স্বামীকে দেখলেই রেগে যায়। হাতের কাছে যা পায় তাই দিয়ে আক্রমণ করে। আর রাহুল সেদিন সেজন্যই এসেছিল। রাহুল আভা’র ডক্টর। প্রতি সপ্তাহে আসত। আর আভা’র কোন বোন নেই। আভা নিজেই একটা ফেইক একাউন্ট থেকে কৌশিককে নিজের স্বামীর নামে দুর্নাম করেছে। কিন্তু বাস্তবে ওর স্বামী ওকে খুব ভালবাসে। আভা একটু জেদি ছিল। আর জিদ করেই সেই বইটা বের করেছিল। 
আভা চলে গেছে দুই বছর হল। কৌশিক আজও দিদিকে খুব মিস করে। তাই কৌশিকের লেখা দিদির প্রিয় কবিতাটা দিদিকে মনে পড়লেই আবৃতি করে।

কষ্ট
কষ্ট কাকে বলে জানো?
আমাকে দেখ,
আমার সমস্ত শরীরে
শিরায় উপশিরায় কষ্ট।
কষ্ট কাকে বলে জানো?
মেহেদী পাতার মত
বুকের মাঝে রক্তরাঙা কষ্ট।
হরেক রকম কষ্ট আমার
লাল কষ্ট, নীল কষ্ট,
পদ্মপাতায় টলমল
একফোটা জলের কষ্ট।
কষ্ট কাকে বলে জানো?
রাত্রি শেষে শিউলীর কষ্ট,
মরা নদীর বুকের কষ্ট,
খড়ায় পোড়া ক্ষেতের কষ্ট,
কষ্ট কাকে বলে জানো?
আমাকে দেখ,
আষ্টেপৃষ্ঠে কষ্ট আমার,
হৃদপিন্ডের প্রকোষ্ঠে প্রকোষ্ঠে
হাজারো কষ্টের আবাস।