আসছে নতুন প্রযুক্তির ডেবিট-ক্রেডিট কার্ড
নিজস্ব প্রতিবেদক
দৈনিক প্রভাতী
প্রকাশিত : ০১:২০ পিএম, ২৭ নভেম্বর ২০১৮ মঙ্গলবার
নিরাপত্তা নিশ্চিতের লক্ষ্যে আগামী বছরের ফেব্রুয়ারির মধ্যে সব ডেবিট-ক্রেডিট কার্ডে নতুন প্রযুক্তি সংযোজনের নির্দেশ দিয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক। একই সঙ্গে চলতি বছরের ৩১ ডিসেম্বরের পর ম্যাগনেটিক স্ট্রিপ অর্থাৎ পুরানো প্রযুক্তির কার্ড ইস্যু না করারও নির্দেশ দিয়েছে বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলোর এই নিয়ন্ত্রক সংস্থা।
বাংলাদেশ ব্যাংকের পেমেন্ট সিস্টেমস ডিপার্টমেন্ট সোমবার (২৬ নভেম্বর) এ সংক্রান্ত একটি সার্কুলার জারি করে সব বাণিজ্যিক ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও প্রধান নির্বাহীদের কাছে পাঠিয়েছে।
এর আগে চলতি বছরের জুনের মধ্যে ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানের সব ডেবিট-ক্রেডিট কার্ড চিপ ও পিনযুক্ত তথা দুই স্তর বিশিষ্ট নিরাপত্তা করার নির্দেশনা থাকলেও তা বাস্তবায়নে ব্যর্থ হয় অধিকাংশ প্রতিষ্ঠান। এ কারণে নতুন করে আগামী ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত সময় বাড়িয়েছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক।
সংশ্লিষ্ট ব্যাংক কর্মকর্তারা জানান, বর্তমানে প্রচলিত ম্যাগনেটিক স্ট্রিপযুক্ত কার্ডের তুলনায় চিপযুক্ত কার্ড বেশি নিরাপদ। ম্যাগনেটিক স্ট্রিপ কার্ডের পেছনে কালো রঙের যে ফিতা বা ম্যাগনেটিক স্ট্রিপ থাকে, তাতে গোপনীয় তথ্য সংরক্ষিত থাকে। প্রতারকরা স্কিমিং ডিভাইসের মাধ্যমে এ ধরনের কার্ডের তথ্য চুরি এবং তা দিয়ে নকল কার্ড তৈরি করে এটিএম বুথ থেকে টাকা তুলতে পারে। আর চিপযুক্ত কার্ডের তথ্য সংরক্ষিত থাকে কম্পিউটার মাইক্রো চিপে। স্কিমিং ডিভাইস কোনোভাবে এ ধরনের কার্ড থেকে তথ্য চুরি করতে পারে না। যে কারণে বিশ্বব্যাপী এখন চিপভিত্তিক কার্ডের ব্যবহার বাড়ছে।
ভারত ও পাকিস্তানসহ প্রতিবেশী দেশগুলোর কার্ডের তথ্য চুরির ঘটনা বেশ আলোচিত। ভারতের কেন্দ্রীয় ব্যাংকও সাম্প্রতিক এক নির্দেশনায় আগামী এক মাসের মধ্যে সব ধরনের কার্ড চিপযুক্ত করার বাধ্যবাধকতা আরোপ করেছে।
কার্ডভিত্তিক লেনদেনের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে গত বছরের ২৪ আগস্ট বাংলাদেশ ব্যাংক একটি নির্দেশনা দেয়। ওই নির্দেশনায় বলা হয়েছিল, ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠান থেকে ইস্যু করা সব ব্র্যান্ডের কার্ড চিপ ও পিনযুক্ত হতে হবে। ম্যাগনেটিক স্ট্রিপযুক্ত সব কার্ড ২০১৮ সালের ৩০ জুনের মধ্যে চিপভিত্তিক করতে হবে। চলতি বছরের ডিসেম্বরের মধ্যে সব কার্ডের লেনদেন অবকাঠামো আন্তর্জাতিক মানসম্পন্ন পিসিআই ডাটা সিকিউরিটি স্ট্যান্ডার্ড সার্টিফাইড করতে বলা হয়।
এ ছাড়া কার্ডভিত্তিক সব ধরনের লেনদেনের তথ্য এসএমএসের মাধ্যমে জানাতে ব্যাংকগুলোকে নির্দেশনা দেয়া হয়। আর এজন্য নতুনভাবে স্থাপিত সব এটিএম বুথ বাধ্যতামূলকভাবে চিপ কার্ড পরিচালনার প্রযুক্তি, এন্টি স্কিমিং প্রযুক্তি, পিন গার্ড এবং এনক্রিপ্টেড পিন প্যাড সংবলিত করার নির্দেশনা দেয়া হয়। আগে স্থাপিত এটিএম বুথ এসব প্রযুক্তি সংবলিত করার জন্য গত বছরের ডিসেম্বর পর্যন্ত সময় দেয় কেন্দ্রীয় ব্যাংক। তবে অনেক ব্যাংক এখনও আগের এটিএম বুথ সরিয়ে নতুন প্রযুক্তির বুথ বসাতে সক্ষম হয়নি। যে কারণে চিপ প্রযুক্তির কার্ড সরবরাহ করতে পারেনি।
এর আগে ৩০ জুনের মধ্যে সব কার্ড চিপ ও পিনযুক্ত করার নির্দেশ দিয়ে সার্কুলার জারি করেছিল বাংলাদেশ ব্যাংক। তবে ব্যাংকগুলো তা বাস্তবায়ন করেনি। এমন পরিস্থিতিতে আগামী ৩১ ডিসেম্বরের পর থেকে নতুন কার্ড ইস্যু করার ক্ষেত্রে ম্যাগনেটিক স্ট্রিপ প্রযুক্তির ব্যবহার করা যাবে না। একইসঙ্গে আগামী ২৮ ফেব্রুয়ারির মধ্যে আগে ইস্যু করা ব্র্যান্ডেড ম্যাগনেটিক স্ট্রিপ কার্ডে চিপ ও পিনভিত্তিক করার প্রক্রিয়া জরুরি ভিত্তিতে শেষ করতে হবে।
বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, চলতি বছরের আগস্ট পর্যন্ত দেশের ব্যাংকগুলোতে মোট কার্ডের সংখ্যা এক কোটি ৪২ লাখ ৬১ হাজার। এসব কার্ডের মাধ্যমে মোট লেনদেন হয় ১৫ হাজার ৭২৮ কোটি টাকা। এর মধ্যে এক কোটি ৩০ লাখ ৫৫ হাজার ডেবিট কার্ডের মাধ্যমে লেনদেন হয় ১৪ হাজার ৩১৬ কোটি টাকা।
সারাদেশে মাত্র ১০ লাখ ৩২ হাজার ক্রেডিট কার্ডের মাধ্যমে লেনদেনের পরিমাণ ছিল এক হাজার ৩৩ কোটি টাকা। আর প্রিপেইড কার্ড রয়েছে এক লাখ ৭৪ হাজার, যেখানে ২৩ কোটি টাকার লেনদেন হয়েছে।