১৮০০ বছর আগের পুরাকীর্তি ‘ভরতের দেউল’
প্রকাশিত : ০৭:৫৫ পিএম, ২২ ফেব্রুয়ারি ২০২১ সোমবার
১৮০০-বছর-আগের-পুরাকীর্তি-ভরতের-দেউল
খুলনা-যশোর সীমান্তবর্তী কেশবপুর উপজেলার ভরত ভায়না গ্রামে শতবর্ষী এক বটগাছের নিচে মাথা উঁচু করে দাঁড়িয়ে আছে প্রায় ১৮শ বছর পূর্বের এ পুরাকীর্তি।
প্রায় ১৮০০ বছর আগে গুপ্ত যুগে এ বিশাল আকৃতির সপ্তকটি নির্মাণ করেছিলেন ভরত রাজা। কালের সাক্ষী হিসেবে সগৌরবে এখনো মাথা উঁচু করে দাঁড়িয়ে আছে ভরত ভায়নার দেউল। এটি ইতিহাস আর ঐতিহ্যের প্রতীক।
বিশেষজ্ঞদের অনুসন্ধানে জানা যায়, দেউলটি খ্রিস্টাব্দে বিশ’ শতকে গুপ্তযুগে নির্মিত। ১৮০০ বছর আগে ভরত নামে তৎকালীন এক প্রভাবশালী রাজা ভদ্রানদীর তীরবর্তী এলাকাসহ সুন্দরবনের অনেকাংশে রাজত্ব আদায় করেছিলেন। কালের আবর্তে তার স্মৃতি ধরে রাখার জন্য তিনি ভদ্রানদীর তীরে ভরত ভায়না নির্মাণ করেন।
ভরতের দেউল থেকে প্রাপ্ত নিদর্শনের মধ্যে রয়েছে পোড়া মাটির তৈরি নারীর মুখমণ্ডল, নকশা করা ইট, মাটির ডাবর, পোড়ামাটির অলংকার এবং দেবদেবীদের টেরাকোটার ভগ্নাংশ। ভরতের দেউলে ব্যবহৃত টেরাকোটা ও ইটের আকার বাংলাদেশের অন্যান্য সব প্রাচীন স্থাপনায় ব্যবহৃত টেরাকোটা ও ইটের মধ্যে সর্ববৃহৎ।
পুরাকীর্তিটি টিলা আকৃতির। এর দেউলের উচ্চতা ১২.২০ মিটার এবং পরিধি ২৬৬ মিটার। চারপাশে ৪টি উইং ওয়ালে ঘেরা ১২টি কক্ষ ছাড়া বাকি ৮২টি কক্ষগুলো বৌদ্ধ স্তুপাকারে তৈরি। আর স্তুপের চূড়ায় থাকা ৪টি কক্ষের দুইপাশে আরও ৮টি ছোট ছোট কক্ষ দেখতে পাওয়া যায়।
১৮৯৭ সালের ভূমিকম্পের ফলে দেউলটি ক্ষতিগ্রস্ত হয়। ১৯২৩ সালের ১০ জানুয়ারি এই দেউলটিকে প্রত্নতাত্ত্বিক স্থাপনা হিসেবে তালিকাভুক্ত করা হয়। ১৯৮৪ থেকে ২০০১ সাল পর্যন্ত বিভিন্ন দফায় খনন কাজের ফলে দেউলের আকার, মঞ্চ, মন্দির এবং প্রায় ৯৪টি কক্ষের সন্ধান পাওয়া যায়।
ভরতের দেউলের একাংশ আগলে রেখছে বিরাট এক প্রাচীন বটবৃক্ষ। এর পাশ দিয়ে বয়ে চলেছে ভদ্রা নদী। সবকিছু মিলেমিশে ভরতের দেউলের স্থানটি বেশ মনোরম এবং প্রাকৃতিক দৃশ্যাবলী খুবই চমৎকার।
যেভাবে যাবেন
ভরতের দেওল দেখতে হলে আপনাকে প্রথমে খুলনা যেতে হবে। কারণ ভরত রাজার দেউলটি যশোরে হলেও খুলনা হয়ে যাওয়াটা সহজ। খুলনা থেকে ভ্যান, ইঞ্জিনচালিত ভ্যান অথবা মোটরসাইকেলে করে ভরত ভায়নায় যেতে হবে। খুলনা-সাতক্ষীরা মহাসড়কের খর্ণিয়া বা চুকনগর হয়েও খুব সহজে ভরত ভায়নায় যাওয়া যায়।