শুক্রবার   ২৯ নভেম্বর ২০২৪ |  অগ্রাহায়ণ ১৫ ১৪৩১ |   ২৭ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

৭০০ আলোকবর্ষ দূরের বাতাসে কার্বন ডাইঅক্সাইড

প্রকাশিত: ২৭ আগস্ট ২০২২ ১৭ ০৫ ০২  

৭০০-আলোকবর্ষ-দূরের-বাতাসে-কার্বন-ডাইঅক্সাইড

৭০০-আলোকবর্ষ-দূরের-বাতাসে-কার্বন-ডাইঅক্সাইড

সে এক অন্য ‘পৃথিবী’। ৭০০ আলোকবর্ষ দূরে সূর্যের মতো একটি তারাকে প্রদক্ষিণ করছে সেও। তার বায়ুমণ্ডলে কার্বন ডাইঅক্সাইড বা সিওটু-র সন্ধান পেল মার্কিন মহাকাশ গবেষণা কেন্দ্র নাসার জেমস ওয়েব স্পেস টেলিস্কোপ।

নাসা জানিয়েছে, সৌরজগতের বাইরে অন্য কোনও গ্রহে এই প্রথমকার্বন ডাইঅক্সাইডের অস্তিত্বের স্পষ্ট প্রমাণ মিলল। এই সম্পর্কিত নাসার রিপোর্টটি প্রকাশের জন্য গ্রহণ করেছে ‘নেচার’ পত্রিকা।

নাসা জানিয়েছে, সৌরজগতের বাইরের ওই গ্রহটি বা এক্সোপ্ল্যানেটটির নাম ‘ডব্লিউএএসপি-৩৯বি’ রাখা হয়েছে। টেলিস্কোপে দেখা গিয়েছে, এটি একটি উত্তপ্ত দৈত্যাকার গ্যাসীয় পিণ্ড। ভর বৃহস্পতির চার ভাগের এক ভাগ। কিন্তু ব্যাস বৃহস্পতির ১.৩ গুণ বড়। এর ফাঁপা চেহারার কারণ এর ভয়ানক উত্তাপ, প্রায় ৯০০ ডিগ্রি সেলসিয়াস। পুরো গ্রহটিই তাই গ্যাসীয় পিণ্ড দশায় রয়েছে।

সৌরজগতের গ্রহেরা তুলনায় অনেকটাই ঠান্ডা হয়ে গিয়েছে। ফলে এদের ঘনত্ব বেশি। এ ছাড়াও একটি গুরুত্বপূর্ণ পর্যবেক্ষণ— ‘ডব্লিউএএসপি-৩৯বি’ তার নক্ষত্রের খুব কাছাকাছি রয়েছে। সূর্য থেকে তার সবচেয়ে কাছের গ্রহ বুধের যা দূরত্ব, তার আট ভাগের এক ভাগ দূরত্বে রয়েছে এটি। পৃথিবীর চার দিনেই গ্রহটি তার নক্ষত্রকে সম্পূর্ণ প্রদক্ষিণ করে ফেলে।

‘ডব্লিউএএসপি-৩৯বি’-কে ২০১১ সালে প্রথম চিহ্নিত করা হয়েছিল। তার পর থেকে এর সম্পর্কে বহু তথ্যই জানা যায় হাবল ও স্পিৎজ়ার স্পেস টেলিস্কোপের সাহায্যে। তবে কার্বন ডাইঅক্সাইডের সন্ধান মিলল এই প্রথম।

আরো পড়ুন>> ইউক্রেনকে অস্ত্র না দেওয়ার আহ্বান জার্মান আইনপ্রণেতাদের

জেমস ওয়েব টেলিস্কোপের এই নতুন সাফল্যে দু’টি বিষয় নিয়ে উচ্ছ্বসিত বিজ্ঞানীরা। এক, সৌরজগতের বাইরের এই গ্রহটি গ্যাসীয় পিণ্ড অবস্থায় রয়েছে। অর্থাৎ এখনও তৈরি হচ্ছে সে। এর উপর নজর রাখলে বোঝা সম্ভব হবে, কী ভাবে একটি গ্রহ তৈরি হয়। দুই, এত দূরের কোনও গ্রহের বায়ুমণ্ডলে কার্বন ডাইঅক্সাইডের অস্তিত্ব চিহ্নিত করেছে জেমস ওয়েব। এতে আশার আলো, এর পরে কোনও ছোট গ্রহের বায়ুমণ্ডলেও কী কী গ্যাসীয় পদার্থ রয়েছে, তা হয়তো বোঝা সম্ভব হবে। এমনকি, নির্দিষ্ট গ্যাসটির পরিমাণও হয়তো মাপা যাবে।

নাসার জেমস ওয়েব টেলিস্কোপ এ পর্যন্ত বিশ্বের আধুনিকতম দূরবীক্ষণ যন্ত্র। তার পূর্বসূরি হাবল্‌ টেলিস্কোপের থেকে বহু গুণ বেশি শক্তিশালী। একটি গবেষক দল এর ‘নিয়ার-ইনফ্রারেড স্পেকট্রোগ্রাফ’-এর সাহায্যে ‘ডব্লিউএএসপি-৩৯বি’-এর বায়ুমণ্ডলে উপস্থিত কার্বন ডাইঅক্সাইডকে চিহ্নিত করেছে। বিষয়টি অনেকটা এ রকম— কোনও নক্ষত্রকে প্রদক্ষিণ করার সময়ে নক্ষত্রটির আলোর কিছু অংশ তার গ্রহের বায়ুমণ্ডলের ভিতর দিয়ে প্রতিফলিত হয়। এবারে, বিভিন্ন গ্যাস বিভিন্ন রঙ-মিশ্রণ শুষে নিতে পারে। প্রতিফলিত আলোর রঙের ঔজ্জ্বল্য বিশ্লেষণ করে বিজ্ঞানীরা বুঝতে পারেন, ওই নির্দিষ্ট বায়ুমণ্ডলে কী কী গ্যাসীয় পদার্থ থাকতে পারে। ঠিক এই পদ্ধতিতেই ‘ডব্লিউএএসপি-৩৯বি’-র বায়ুমণ্ডলে কার্বন ডাইঅক্সাইডের উপস্থিতি টের পেয়েছে নাসা।

এই গবেষণার সঙ্গে যুক্ত রয়েছেন জন্স হপকিন্স বিশ্ববিদ্যালয়ের স্নাতক স্তরের ছাত্র জাফর রুস্তমকুলভ। তিনি বলেন, ‘‘জেমস ওয়েব টেলিস্কোপের পাঠানো ডেটা আমার কম্পিউটারের পর্দায় ফুটে উঠতেই চমকে গিয়েছি, কার্বন ডাইঅক্সাইডের বৈশিষ্ট্য স্পষ্ট!’’

জাফরের কথায়, ‘‘এর আগে অন্য কোনও টেলিস্কোপ এত বিশদ তথ্য দিতে পারেনি। মহাকাশ বিজ্ঞানের সত্যিই একটা বিশেষ মুহূর্ত।’’

সূত্র: ইউরো নিউজ, আনন্দবাজার

Provaati
    দৈনিক প্রভাতী
    এই বিভাগের আরো খবর