২০ বছর আগে পেটে কাঁচি রেখে সেলাই, সেই চিকিৎসক কারাগারে
প্রকাশিত : ০৬:১৫ পিএম, ২৫ সেপ্টেম্বর ২০২২ রোববার
২০-বছর-আগে-পেটে-কাঁচি-রেখে-সেলাই-সেই-চিকিৎসক-কারাগারে
রোববার দুপুরে এ আদেশ দেন মেহেরপুরের সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতের বিচারক তারিক হাসান। এদিন আদালতে হাজির হয়ে জামিন চান ওই চিকিৎসক।
অভিযুক্ত চিকিৎসকের নাম পারভিয়াস হোসেন রাজা। তিনি গাংনী উপজেলার রাজা ক্লিনিকের মালিক। ভুক্তভোগী রোগী বাচেনা খাতুন চুয়াডাঙ্গার আলমডাঙ্গা উপজেলার নওদা হাপানিয়া গ্রামের দিনমজুর আব্দুল হামিদের স্ত্রী।
জানা গেছে, ২০০২ সালে গাংনীর রাজা ক্লিনিকে বাচেনা খাতুনের পিত্তথলির অস্ত্রোপচার করা হয়। তার অস্ত্রোপচার করেন ডাক্তার মিজানুর রহমান। সহকারী হিসেবে ছিলেন. পারভিয়াস হোসেন রাজা ও অ্যানেস্থেসিয়া করেন ডাক্তার তাপস কুমার। অস্ত্রোপচারের এক সপ্তাহ পর বাচেনা খাতুনকে প্রেসক্রিপশন দিয়ে ক্লিনিক থেকে ছাড়পত্র দেওয়া হয়। কিন্তু পেটের ব্যথা ভালো না হওয়ায় ২০ বছর ধরে যন্ত্রণা নিয়ে বিভিন্ন হাসপাতাল ও ক্লিনিকে ঘুরেছেন তিনি। চিকিৎসার খরচ চালাতে নিজের ঘরভিটাও বিক্রি করেছেন। হারিয়েছেন সহায় সম্বলও।
অবশেষে রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে এক্স-রে করান বাচেনা খাতুন। এক্স-রে রিপোর্টে কাঁচি পাওয়া যায়। যা অস্ত্রোপচারের সময় ডাক্তাররা রেখে দিয়েছিলেন। বিষয়টি জানাজানি হলে বাচেনাকে চুয়াডাঙ্গা সরকারি হাসপাতালে অস্ত্রোপচার করান ডাক্তার রাজা। ২০ বছর আগের রেখে দেওয়া কাঁচিও বের করেন তিনি।
এ নিয়ে চলতি বছরের ৩ জানুয়ারি বিভিন্ন গণমাধ্যমে সংবাদ প্রকাশিত হয়। পরে স্বপ্রণোদিত হয়ে একটি মামলা করেন মেহেরপুর আদালতের সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট তারিক হাসান। মামলাটি মেহেরপুরের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (সদর সার্কেল) অপু সারোয়ারকে তদন্ত করার নির্দেশ দেয় আদালত। একই সঙ্গে ঘটনা তদন্তে সিভিল সার্জন ডা. জওয়াহেরুল আনাম সিদ্দিকীকে সার্বিক সহযোগিতা করার জন্য বলা হয়।
মেহেরপুর জেলা স্বাস্থ্য বিভাগের পক্ষ থেকে ঘটনা তদন্তে ৫ জানুযারি গাংনী উপজেলা স্বাস্থ্য কর্মকর্তা মো. আশরাফুজ্জামান লিটনকে প্রধান ও মেহেরপুর জেনারেল হাসপাতালের জুনিয়র কনসালটেন্ট সার্জারি মো. ফজলুর রহমান, মেহেরপুরের সিভিল সার্জন কার্যালয়ের চিকিৎসক ফয়সাল হারুনকে সদস্য করে তিন সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়। এরপর চিকিৎসক মিজানুর রহমানকে প্রধান অভিযুক্ত করে প্রতিবেদন জমা দেয় কমিটি। অন্যান্য আসামিরা হলেন- তাপস কুমার ও পারভিয়াস হোসেন রাজা।
রোববার দুপুরে আদালতে জামিন নিতে যান অভিযুক্তরা। শুনানি শেষে ডাক্তার মিজানুর রহমান ও ডাক্তার তাপস কুমারকে জামিন দিলেও রাজাকে কারাগারে পাঠানোর নির্দেশ দেন বিচারক।