বোনের প্রেমে বাধা দেওয়ায় খুন হলেন ভাই
প্রকাশিত : ০৪:১৫ পিএম, ২৩ সেপ্টেম্বর ২০২২ শুক্রবার
বোনের-প্রেমে-বাধা-দেওয়ায়-খুন-হলেন-ভাই
এ ঘটনার পর এলাকাজুড়ে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে। স্থানীয়দের অনেকেই ঘটনার পর থেকে তাদের উঠতি বয়সী ছেলে মেয়েদের বাড়ি থেকে বের হতে দিচ্ছেন না। এদিকে ঘটনার সঙ্গে জড়িত ৮ এসএসসি (দাখিল) পরীক্ষার্থীকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য থানায় এনেছে পুলিশ।
স্থানীয় একাধিক সূত্রে জানা গেছে, এ ঘটনার পেছনে রয়েছে একটি প্রেম কাহিনি। আটককৃত ৮ কিশোরের একজন নাজমুল হোসেন। তিনি তিতাসের পার্শ্ববর্তী মেঘনা উপজেলার বাসিন্দা ও ঐ এলাকার ব্রাহ্মণচর সিনিয়র আলিম মাদরাসার শিক্ষার্থী। তার সঙ্গে নিহত সিয়ামের চাচাতো বোনের (কিশোরী) প্রেমের সম্পর্ক গড়ে উঠে। ঐ কিশোরীও ব্রাহ্মণচর মাদরাসার শিক্ষার্থী। বেশ কিছুদিন ধরেই তাদের প্রেমে সম্পর্ক চলে আসছিল। এসএসসি (দাখিল) পরীক্ষা শুরুর কয়েকদিন আগে নাজমুল ও তার বন্ধুরা ঐ কিশোরীর এলাকায় ঘুরতে যায়। এসময় সিয়াম বিষয়টি জানতে পারেন। তিনি নাজমুল ও তার বন্ধুদের ঐ এলাকায় যেতে নিষেধ করেন। এতে কয়েকদিন ধরেই ক্ষুব্ধ নাজমুল ও তার বন্ধুরা। পরীক্ষা শুরু আগেই নাজমুল ও তার ৭ বন্ধু পরীক্ষার সময় কেন্দ্রের পাশে অবস্থান করবে বলে তিতাসের গাজীপুর আজিজিয়া সিনিয়র দাখিল মাদরাসার পাশে সাময়িক সময়ের জন্য একটি ফ্ল্যাট ভাড়া নেয়।
এদিকে বৃহস্পতিবার (২২ সেপ্টেম্বর) সিয়াম তার এক চাচাতো ভাইকে নিয়ে পরীক্ষার কেন্দ্রে আসে। নাজমুল ও তার সাত বন্ধু পরীক্ষা শেষে বের হলে সামনে নাজমুলকে দেখে। নাজমুলকে দেখে ডেকে নিয়ে যায় স্থানীয় একটি মাঠের পাশের চা দোকানে। সেখানে বেশ কিছুক্ষণ তাদের তর্কাতর্কি ও বাগবিতণ্ডা করতে দেখে স্থানীয়রা। পরে একপর্যায়ে সিয়াম নাজমুলের গালে থাপ্পড় দিলে বাধে সংঘর্ষ। সাত বন্ধু মিলে নাজমুলকে মারতে থাকে।
এদিকে নাজমুলের এক বন্ধু সাকিব ভাড়া বাসায় গিয়ে চাকু নিয়ে আসে। সিয়ামকে মেরে ফেলবে বলে কয়েকজন তাকে ধরে এবং একজন তার তলপেটে ছুরিকাঘাত করে। সঙ্গে সঙ্গে মাটিতে লুটিয়ে পড়ে সিয়াম।
আর এদিকে দৌঁড়ে পালিয়ে যায় নাজমুল, সাকিব ও তার বন্ধুরা। জানা গেছে প্রথমেই সিয়ামকে কেউ ধরতে আসেনি। পরে আসামিরা পালিয়ে গেলে স্থানীয়রা ও শিক্ষার্থীরা তিন থেকে চার মিনিটের দূরত্বের তিতাস উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নেয়ার কিছুক্ষণের মধ্যে মারা যায় সে।
এদিকে তিতাস পুলিশের একটি সূত্র জানিয়েছে, ঐ আট শিক্ষার্থীর সবাই পুলিশ হেফাজতে রয়েছে। তাদের চারজনের বয়স ১৯ এর বেশি এবং চারজনের বয়স ১৭ এর বেশি ও আঠারো ছুঁই ছুঁই। তারা কোনো কিশোর গ্যাং বা দলের অন্তর্ভুক্ত নয়। তবে তাদের মধ্যে কয়েকজন এবার দ্বিতীয় ও তৃতীয়বারের মত দাখিল পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করছেন। অনেকে আগে উত্তীর্ণ হতে পারেননি এবং অনেকে পরীক্ষা দেননি।
তিতাস থানার ওসি সুধীন চন্দ্র দাস বলেন, আমরা ঘটনার পর কয়েকজনকে আটক করেছি জিজ্ঞাসাবাদের জন্য। তাদের মধ্যে নাজমুল ও সাকিব নামে দুজন রয়েছেন। এখনই কিছু বলতে পারছি না। তবে এখন পর্যন্ত যা বুঝতে পারছি প্রেমে বাধা দেওয়ার কারণেই হত্যার ঘটনা ঘটে।
বৃহস্পতিবার (২২ সেপ্টেম্বর) কুমিল্লার তিতাসে এসএসসি পরীক্ষা কেন্দ্রের সামনে ছুরিকাঘাতে মো. সিয়াম নামে এক কিশোর নিহত হয়েছেন। দুপুরে তিতাসের গাজীপুর আজিজিয়া সিনিয়র দাখিল মাদরাসা কেন্দ্রের সামনে এ ঘটনা ঘটে।
নিহত কিশোরের নাম মো. সিয়াম। সে তিতাসের মজিদপুর ইউনিয়নের চর মোহনপুর এলাকার বাক্কা মিয়ার ছেলে।