শুক্রবার   ২৯ নভেম্বর ২০২৪   অগ্রাহায়ণ ১৫ ১৪৩১   ২৭ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

টাকার অভাবে ছোট ভাইয়ের লাশ নিয়ে ছুটছে ১০ বছরের শিশু

প্রকাশিত : ০৩:৫০ পিএম, ২৯ আগস্ট ২০২২ সোমবার

টাকার-অভাবে-ছোট-ভাইয়ের-লাশ-নিয়ে-ছুটছে-১০-বছরের-শিশু

টাকার-অভাবে-ছোট-ভাইয়ের-লাশ-নিয়ে-ছুটছে-১০-বছরের-শিশু

সৎ মায়ের হিংস্রতায় গাড়ির চাপায় পিষ্ট মাত্র দুই বছরের শিশু কালা। হাসপাতাল থেকে শেষ হয় ময়নাতদন্ত। লাশ বাড়িতে নেয়ার মতো অর্থ নেই বাবার। এ ‍দুঃসময়ে কেউ করলো না সাহায্য। তাই দুই বছরের ভাইয়ের লাশ কোলে তোলে বাড়ির দিকে ছুটছে ১০ বছরের বড় ভাই।

গত শনিবার ভারতের উত্তরপ্রদেশের বাগপতের জেলা হাসপাতালে চাঞ্চল্যকর এ ঘটনাটি ঘটেছে।- খবর এনডিটিভির।

সংবাদমাধ্যমটির প্রতিবেদনে বলা হয়, গাড়ির নিচে পড়ে মৃত্যুর পর গত শনিবার উত্তরপ্রদেশের বাগপতের জেলা হাসপাতালে দুই বছর বয়সী শিশু কালার ময়নাতদন্ত হয়। ময়নাতদন্তের পরে মরদেহ বাড়ি নেয়ার জন্য বহু অনুরোধ করেও গাড়ির ব্যবস্থা করা যায়নি। পরে বাধ্য হয়ে কালার মরদেহ হাতে তুলে হাঁটতে শুরু করে তার ১০ বছর বয়সী বড়ভাই। পেছনে হাঁটছিলেন তার বাবাও। একপর্যায়ে স্থানীয়রা ভিডিও করা শুরু করলে ও কর্তৃপক্ষকে বিষয়টি নিয়ে সতর্ক করলে তাদের একটি গাড়ির ব্যবস্থা করে দেওয়া হয়। মরদেহ কোলে নিয়ে হাঁটার একটি ভিডিও সোশ্যাল মিডিয়ায় ভাইরাল হয়েছে।

এনডিটিভি প্রতিবেদনের তথ্যানুযায়ী, নিহত শিশু কালার বাবার নাম প্রবীণ কুমার। তিনি বাগপতের একজন দিনমজুর। বাগপতের জেলা হাসপাতাল থেকে প্রায় ৫০ কিলোমিটার দূরে শামলি জেলার লিলনখেডিতে নিজেদের পারিবারিক গ্রামে যাওয়ার জন্যই তারা একটি গাড়ি খুঁজছিলেন। তবে সেটি ভাড়া করার জন্য এক হাজার রুপির প্রয়োজন ছিল, যা প্রবীণ কুমারের কাছে ছিল না।

সংবাদমাধ্যমটি বলছে, যে কিশোরটি নিজের কোলে সাদা কাপড়ে মোড়া শিশুটিকে নিয়ে হাঁটছিল সেই শিশুটি তার ভাই। বয়স মাত্র দু’বছর। অভিযোগ, শিশুটি কান্না করায় সৎ মা তাকে রাস্তায় চলন্ত গাড়ির নিচে ছুড়ে ফেলেন। এতে চাকায় পিষ্ট হয়ে মৃত্যু হয় শিশুটির।

খবর পেয়ে পুলিশ এসে শিশুটির মরদেহ উদ্ধার করে বাগপত হাসপাতালে ময়নাতদন্তের জন্য পাঠায়। ছেলের মৃত্যুতে শোকে পাথর প্রবীণ কুমার তার বছর দশেকের ছেলে সাগরকে নিয়ে হাসপাতালে ছুটে গিয়েছিলেন। সন্তানের ময়নাতদন্ত হওয়ার পর মরদেহ তুলে দেন হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ।

এ সময় সন্তানের মরদেহ বাড়িতে নিয়ে যেতে একটি শববাহী গাড়ির ব্যবস্থা করে দিতে বলেছিলেন পেশায় দিনমজুর প্রবীণ। হাসপাতাল থেকে তা ব্যবস্থা করে দেওয়া হয়নি। গাড়ি ভাড়া করে সন্তানের দেহ ৫০ কিলোমিটার দূরে গ্রামের বাড়িতে নিয়ে যাবেন।  সেই টাকাও ছিল না প্রবীণের কাছে। ফলে বাধ্য হয়েই সন্তানের মরদেহ নিয়ে বাড়ির পথে হাঁটতে শুরু করেন তারা।

কিছু দূর যাওয়ার পর সন্তানের দেহ ছেলে সাগরের কোলে তুলে দেন প্রবীণ। তার কথায়, ‘কিছুটা হাঁটার পর আমি ক্লান্ত হয়ে পড়েছিলাম। তাই ছোট ছেলের মরদেহ আমার বড় ছেলে সাগরের কোলে তুলে দিয়েছিলাম। এক কিশোরকে শিশুর মরদেহ কোলে নিয়ে হাঁটতে দেখে স্থানীয়রা পুলিশে খবর দেন। হাসপাতালের সঙ্গে যোগাযোগ করা হয়। এরপরই গাড়ির ব্যবস্থা হয়।

বাগপত হাসপাতালের সিএমও দীনেশ কুমার বলেন, যারা শববাহী গাড়ি চান, তাদেরই দেওয়া হয়। এক্ষেত্রে কয়েক মিনিট দেরি হয়েছিল। ততক্ষণে ঐ ব্যক্তি তার সন্তানের মরদেহ নিয়ে বাড়ির উদ্দেশে হাঁটতে শুরু করেন। বিষয়টি আমার নজরে আসতেই তাদের জন্য গাড়ির ব্যবস্থা করে দিয়েছি।