শুক্রবার   ২৯ নভেম্বর ২০২৪   অগ্রাহায়ণ ১৫ ১৪৩১   ২৭ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

উচ্চশিক্ষায় নারীর সংখ্যা বাড়লে কমবে জন্মহার!

প্রকাশিত : ১০:৫০ পিএম, ২৭ আগস্ট ২০২২ শনিবার

উচ্চশিক্ষায়-নারীর-সংখ্যা-বাড়লে-কমবে-জন্মহার

উচ্চশিক্ষায়-নারীর-সংখ্যা-বাড়লে-কমবে-জন্মহার

নারীদের অগ্রাধিকারভিত্তিক শিক্ষা ব্যবস্থাকে ‘গোলাপী শিক্ষা’ আখ্যা দিয়েছে হাঙ্গেরির সরকারি একটি সংস্থা। একইসঙ্গে উচ্চশিক্ষায় নারীদের সংখ্যা বাড়লে জন্মহার হ্রাসের সতর্কতা দিয়েছে সংস্থাটি। 

সংস্থাটির প্রকাশিত প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, উচ্চশিক্ষায় নারীদের সংখ্যা বাড়লে দেশের অর্থনীতিকে বিপন্ন করে তুলতে পারে। এছাড়া জন্মহার হ্রাস এবং পুরুষেরা বৈষম্যের শিকার হতে পারেন বলেও সতর্ক করা হয়েছে।

হাঙ্গেরির প্রধানমন্ত্রী ভিক্টর অরবান-ঘনিষ্ঠ দেশটির সংসদের অর্থনৈতিক পর্যবেক্ষক সংস্থার ঐ প্রতিবেদনে বলা হয়, দেশের উচ্চশিক্ষা ক্ষেত্রে নারীদের প্রতিনিধিত্ব বেশি। প্রতিবেদনের লেখকরা সতর্ক করে দিয়ে বলেছেন, নারী স্নাতক বৃদ্ধির ফলে নারীদের বিয়ে এবং সন্তান ধারণের সম্ভাবনা কমে যেতে পারে। 

দেশটির প্রধানমন্ত্রী অরবান হাঙ্গেরির নিম্নমুখী জন্মহার বাড়ানোর চেষ্টা করেছেন। চার সন্তানের জন্ম দেওয়া নারীরা সারাজীবনের জন্য আয়কর প্রদান থেকে অব্যাহতি পাবেন বলে ২০১৯ সালে ঘোষণা দেন তিনি।

হাঙ্গেরির নিরীক্ষা অফিসের ঐ প্রতিবেদন গত মাসে প্রকাশিত হয়েছে। কিন্তু এ প্রতিবেদনের বিষয়বস্তু নিয়ে চলতি সপ্তাহে বিস্তারিত সংবাদ করেছে দেশটির সংবাদপত্র নেপসজাভা। নারী শিক্ষার ওপর প্রকাশিত নিরীক্ষা অফিসের প্রতিবেদন নিয়ে দেশটির রাজনীতিবিদ ও মানবাধিকার বিশেষজ্ঞরা তীব্র সমালোচনা করেছেন।

গত এক দশকে হাঙ্গেরির বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে পুরুষের তুলনায় বেশিসংখ্যক নারী ভর্তি হয়েছেন। চলতি শরতে সেই সংখ্যা ৫৪ দশমিক ৫ শতাংশ বলে নিরীক্ষা অফিসের প্রতিবেদনে উঠে এসেছে। একই সময়ে ছাত্ররা উচ্চহারে ঝরে পড়েছে। প্রতিবেদনে এসব বিষয় উল্লেখ করে বলা হয়েছে, শিক্ষকতা পেশা নারীকরণের ফলে আগামীতে ৮২ শতাংশ শিক্ষক নারী হতে পারেন।

গবেষকরা সতর্ক করে দিয়ে বলেছেন, শিক্ষায় পুরুষের হার হ্রাস এবং পুরুষালী বৈশিষ্ট্যের অবমূল্যায়ন করা হলে হাঙ্গেরির অর্থনীতি ঝুঁকির মুখে পড়তে পারে। প্রযুক্তিগত দক্ষতা, ঝুঁকি-গ্রহণ এবং উদ্যোক্তা হয়ে ওঠাকে পুরুষের বৈশিষ্ট্য হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছে প্রতিবেদনে।

হাঙ্গেরির বিরোধী রাজনীতিবিদ এন্দ্রে টথ ফেসবুকে প্রতিবেদনটির সমালোচনা করে বলেছেন, গত শতাব্দী থেকে আপনার চশমা সরিয়ে ফেলার সময় হয়েছে। তিনি নারী এবং পুরুষের তথাকথিত বৈশিষ্ট্যগত পার্থক্যকে ‘একেবারে বৈজ্ঞানিক দৃষ্টিকোণ থেকে অযৌক্তিক’ বলে আখ্যায়িত করেছেন।

হিউম্যান রাইটস ওয়াচের লিডিয়া গল এক টুইটে বলেন, সরকারি এ প্রতিবেদন হাঙ্গেরিতে লিঙ্গসমতা এবং নারী অধিকারের জন্য আরেকটি আঘাত।

হাঙ্গেরিতে বিভিন্ন সময়ে লিঙ্গ বৈষম্য নিয়ে ব্যাপক সমালোচনা দেখা গেছে। দেশটিতে সফরের পর ২০১৯ সালে কাউন্সিল অব ইউরোপের মানবাধিকার কমিশনার দুনজা মিজাতোভিচ বলেন, লিঙ্গ সমতা এবং নারী অধিকারে পিছিয়ে রয়েছে হাঙ্গেরি।

সম্প্রতি ক্যাটালিন নোভাক হাঙ্গেরির প্রথম নারী প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হয়েছেন। কিন্তু ইউরোপীয় ইউনিয়নের দেশগুলোর মধ্যে হাঙ্গেরির রাজনীতিতে নারীদের অংশগ্রহণ সর্বনিম্ন।

সূত্র- দ্য গার্ডিয়ান