শনিবার   ৩০ নভেম্বর ২০২৪ |  অগ্রাহায়ণ ১৫ ১৪৩১ |   ২৮ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

লাল শাপলায় রঙিন সুতার বিল

প্রকাশিত: ২৫ সেপ্টেম্বর ২০২২ ১৫ ০৩ ০১  

লাল-শাপলায়-রঙিন-সুতার-বিল

লাল-শাপলায়-রঙিন-সুতার-বিল

সম্পর্কিত খবর লাল শাপলার গ্রাম নীলের পাড়া লাল শাপলায় রঙিন রাবানের বিল নরসিংদীর বেলাব উপজেলার সীমান্তবর্তী গ্রাম সুটুরিয়া। অপরপার্শ্বে মনোহরদী উপজেলার কাঁচি কাটা ইউনিয়ন। মাঝখানে দুইটি উপজেলাকে বিভক্ত করেছে সুপ্রাচীন কাল হতে শাপলার বিল খ্যাত সুতার বিল। এই শাপলা বিলে শোভা ছড়াচ্ছে লাল শাপলা। বিশাল এলাকার বিলটি এখন লাল শাপলার অপরূপ সৌন্দর্যের লীলাভূমি। লাল শাপলার সৌন্দর্যে মুগ্ধ হচ্ছে এলাকা ও উপজেলার হাজার হাজার সৌন্দর্য পিপাসু নানা বয়সের নর-নারী। লোকমুখে প্রচারিত এই বিলের সৌন্দর্য উপভোগ করতে উপজেলার গন্ডি পেরিয়ে বিভিন্ন স্থান থেকে বিলের ধারে ভিড় জমাচ্ছেন পর্যটকরা।

সরেজমিনে গিয়ে জানা গেছে, প্রায় শতবর্ষী এ বিলের সবটাই এখন লাল শাপলার দখলে। আশপাশের প্রকৃতি মিলিয়ে এটি এখন লাল-সবুজের লীলাভূমি। দূর থেকেই এর সৌন্দর্য নজর কাড়ে সবার। কাছে যেতেই মন ভুলিয়ে দেয় শাপলার মোহনীয় সৌন্দর্য। শাপলায় সৌন্দর্য এমন যে এ যেন প্রকৃতির বুকে আঁকা এক নকশিকাঁথা। সূর্যের আভাকেও যেন হার মানিয়েছে এ বিলে ফোটা লাল  শাপলা। রুপসী বাংলার এই সৌন্দর্যের প্রশংসা এখন গ্রামের মানুষের মুখ থেকে ছাড়িয়ে পৌঁছে গেছে উপজেলা ও জেলাতেও।সাধারণত সেপ্টেম্বর থেকে নভেম্বর পর্যন্ত প্রায় তিন মাস এ বিলে শাপলা ফোটে।

শাপলা এখন সবজি হিসেবেও বেশ জনপ্রিয়। শাপলা তুলে স্থানীয় বাজারে বিক্রি করে এলাকার অনেকেই জীবিকা নির্বাহ করছেন। এখানকার জমিগুলো মালিকানাধীন। তাছাড়া শাপলা পরিপক্ব হওয়ার পর গুড়াতে যে শালুক হয় তার কদরও অনেক।

ডিসেম্বরের শুরুর দিকে শীতের মৌসুমে যখন পানি কমে যায় তখন সব শাপলা মরে যায়। ওই সময় কৃষকরা জমি পরিষ্কার করে ইরি ধান, পেঁয়াজ ও পাট চাষ করেন। পরবর্তী বছর শাপলার গোড়া থেকে আবার জন্ম নেয় লাল শাপলা।

বিলপাড়ের বাসিন্দা অমল্য পাল বলেন, ভোরে ফুলের সৌন্দর্য সবচেয়ে বেশি থাকে। এ সময় সতেজ ফুলগুলোর দিকে তাকালে মনটাও ফুরফুরে হয়ে যায়।

সোহরাব হোসেন বলেন, এ বছর ফুলের সংখ্যা একটু কম। তবে মানুষের মাঝে সাড়া পড়েছে বেশি। বিগত বছরগুলোতে ফুলের পরিমাণ বেশি থাকলেও স্থানীয় সৌন্দর্য পিপাসু কয়েকজন ছাড়া তেমন লোকজন দেখা যেত না। যেহেতু বিলের জমিগুলো মালিকানাধীন শুকনো মৌসুমে বিভিন্ন জাতের ধান ও সবজির চাষ করা হয়। 

এলাকাবাসী জানান, বিলটির শাপলার সৌন্দর্যে মুগ্ধ হয়ে প্রতিদিনই বিভিন্ন এলাকার মানুষ পরিবার পরিজনদের নিয়ে ঘুরতে আসছেন। বিলটিকে সরকারি পৃষ্ঠপোষকতায় মৎস অবমুক্তকরণ পর্যটকদের বসা বা বিশ্রামের ব্যবস্থা করতে পারলে ভালো হত বলে মনে করেন তারা।

বেলাব উপজেলা চেয়ারম্যান (ভারপ্রাপ্ত) মনিরুজ্জামান ভূঁইয়া জাহাঙ্গীর বলেন, নৈসর্গিক সৌন্দর্যের পাশাপাশি কোলাহলমুক্ত পরিবেশ মানুষ খুব ভালোবাসে। আর বিলটিও চমৎকার পরিবেশে অবস্থিত। এখানে এসে মানুষ লাল শাপলার পাশাপাশি কুমোর পাড়ার মৃৎশিল্প ও দর্শন করতে পারে, যা আমাদের এলাকার ঐতিহ্য বহন করে।’

বিলে ঘুরতে আসা পোড়াদিয়া বাজারের ওষুধ বিক্রেতা আজিজুর রহমান বলেন, সত্যিই স্বপ্নময় বিল এটি। মনোমুগ্ধকর পরিবেশ আর লাল শাপলা হৃদয়কে আন্দোলিত করে। 

বেলাব উপজেলা মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান শারমিন আক্তার খালেদা বলেন, প্রকৃতির কাছাকাছি এসে লাল-সবুজের অপার মিলন দেখার সৌভাগ্য কমই হয়। তবে এখানে এসে ছোটবেলার মতো পানিতে নেমে শাপলা তুলে বাড়িতে নিয়ে খেলতে ইচ্ছে করে। প্রকৃতির কত সুন্দর উপহার এই লাল শাপলা।

Provaati
    দৈনিক প্রভাতী